ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

যুদ্ধাপরাধে রাজাপাকসের বিচার দাবি ও শেখ হাসিনার পার্থযাত্রা

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিংএডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১১
যুদ্ধাপরাধে রাজাপাকসের বিচার দাবি ও  শেখ হাসিনার পার্থযাত্রা

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের দাবি উঠেছে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের। এখন পর্যন্ত পার্থ সামিটকে ঘিরে এটিই অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু।

আর পার্থে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যে দু’জন সরকার প্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের সূচি ঠিক হয়েছে তাদের মধ্যে রাজপাকসে অন্যতম।

এর বাইরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী হিয়েন লং’এর সঙ্গে তার একটি বৈঠক হওয়ার কথা।

এদিকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরের পর পার্থ পৌঁছুনোর কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

পার্থকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্যামেরার শহর। চারদিকে পথে পথে শুধু ক্যামেরার নজরদারি!

অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এখনও প্রধানমন্ত্রীর কোন নির্ধারিত কর্মসূচি নেই। অথচ ১/১১’র পর শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলে আওয়ামী লীগের প্রবাসী যে সব সংগঠন শক্ত প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ এর অন্যতম।

এখানে প্রধানমন্ত্রীকে  এয়ারপোর্টে রিসিভ করবেন সেই লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী যিনি ১/১১’র পর শেখ হাসিনাসহ দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

আর ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার যে সংগঠনটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনার চিন্তা করেছিল রাজনৈতিক দলাদলিতে তা অনিশ্চিত হয়ে আছে।

এখন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সমিতি নামে সংগঠনের ব্যানারে সম্বর্ধনার খবর বেরিয়েছে।

কিন্তু পার্থের সূত্রগুলো বলেছে-এমন সংগঠনের নাম তারা আগে কখনো শোনেনি। এর মধ্যে সিডনভিত্তিক প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতারা সম্বর্ধনার প্রস্তুতি নিয়ে পার্থ যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত কোন অনুষ্ঠান হবে কি না, হলে সেটি কবে-কখন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যারিস্টার সিরাজুল হক উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ১বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের বাদ রেখেই প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলনের চেষ্টা করেছিল। জট সৃষ্টি সেখান থেকেই হয়েছে।

হাইকমিশনের এক সূত্র বলেছে-তাদের সব কর্মকাণ্ডই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই পরিচালিত।

সম্মেলনের খবর সংগ্রহে বাংলাদেশের নানা মিডিয়ার প্রতিনিধিরা পার্থ এসে পৌঁছেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে আওয়ামী ফোরামের একাধিক সাংবাদিক নেতার পার্থ আসার কথা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ইচ্ছুক অস্ট্রেলিয়া বিএনপি স্থানীয় পুলিশের অনুমতি পায়নি।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৫৪ দেশের সরকার প্রধানসহ সম্মেলনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়েই তাদের মূল নজর।

এরবাইরে কারও প্রতিবাদ পাহারা দেবার পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স তাদের নেই।

উল্লেখ, পার্থ সম্মেলন উপলক্ষ্য পাশের দেশ নিউজিল্যান্ড থেকেও পুলিশ হায়ার করে আনা হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপি প্রতিবাদের অনুমতি না পাওয়াতে জামায়াতের সঙ্গে  সিডনিতে একটি প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উল্লেখ্য, তামিলদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের অভিযোগে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে প্রবাসী তামিলদের একটি অংশ।

তারা কমনওলেথ সম্মেলন থেকে রাজপাকাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবারও দাবি তুলেছে।   অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার সংগঠনগুলো তামিলদের দাবিকে সমর্থন করেছে।

এরমাঝে রাজপাকাসে বুধবার সস্ত্রীক পার্থ এসে পৌঁছেছেন।

প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের কাছে রাজপাকাসের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মিডিয়াকে বলেছেন-শ্রীলংকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগের কথা তাকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, মানবাধিকার পরিস্থিতির কারনণ শ্রীলংকান অনেক তামিল শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।

তাদের আবেদন গ্রহণ করা নিয়ে এদেশের সরকার দোটানার মধ্যে আছে। শরণার্থী ইস্যুটি আবার অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়ায় বেশি।  

বুধবার আবার শ্রীলংকান এক শরণার্থী যুবকের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে এদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরগরম।

কমনওয়েলথ সামিট শুরুর মুহূর্তে তামিলদের মানবাধিকারদের বিষয়টিই এখন পর্যন্ত এখানকার সবচেয়ে আলোচিত।

অস্ট্রেলিয়া সফররত রানী এলিজাবেথ সামিট উদ্বোধনের উদ্দেশ্য বুধবার পার্থ পৌঁছেছেন।

আগামী শুক্রবার দু`দিনের এ সম্মেলন শুরু হচ্ছে ।

ফজলুল বারী, সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।