ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

পার্থ সম্মেলন শুরু: প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবাদবিহীন অস্ট্রেলিয়া সফর!

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিংএডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১১
পার্থ সম্মেলন শুরু: প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবাদবিহীন অস্ট্রেলিয়া সফর!

সিডনি: দেশের বিভক্ত হিংসার রাজনীতির হাত বিদেশ পর্যন্ত লম্বা। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বিদেশের যেখানে যাচ্ছেন প্রায় সবখানেই সুযোগমতো বিএনপি-জামায়াত প্রতিবাদ দেখাচ্ছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া সফরটাই এখন পর্যন্ত প্রতিবাদবিহীন! বিএনপি প্রতিবাদ দেখানোর অনুমতি পায়নি। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর সফর সামনে রেখে সিডনিভিত্তিক দ্বিধাবিভক্ত বিএনপির দু’গ্রুপকে নিয়ে একটি এ্যাকশন কমিটি গঠন করা হলেও তারা কেউ আর অ্যাকশন দেখাতে কষ্ট স্বীকার, ডলার খরচ করে আর পার্থ পর্যন্ত যাননি। তাই শুক্রবার শেখ হাসিনা পার্থে যখন কমনওয়েলথ সম্মেলন কেন্দ্রে ঢুকছিলেন, তখন নিরুপায় স্থানীয় বিএনপির অ্যাকশনপ্রিয় এক নেতা ব্যস্ত ছিলেন ফেইসবুক চ্যাটিংয়ে।

উল্লেখ্য, কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর পার্থ এসে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিডনি থেকে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাকে পার্থ বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানান। রাতে সফরঙ্গীদের নিয়ে শহর দেখতে বেরোন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ন’টার পর আগে থেকে সরকার প্রধানরা সম্মেলন কেন্দ্রে আসতে থাকেন। তাদের অভ্যর্থনাকারীদের মধ্যে আগুনের ধোয়ার কুন্ডলী হাতে আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতিনিধিও রাখা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাখা হয় অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারাল সামাজিক বৈশিষ্ট্য। উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৯৬ দেশ থেকে আসা লোকজন যার যার ভাষা-সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখে অস্ট্রেলিয়ান সমাজের অংশ হয়ে আছেন।
 
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলন কেন্দ্রে পৌঁছার পর একে একে সরকার প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর তারা সম্মেলন কেন্দ্রে ঢুকে যার যার আসন নেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নিউজ চ্যানেলগুলোতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচার করা হয়। বাংলাদেশি কাতান শাড়ি পরিহিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন হয় সরকার প্রধানদের প্রথম সারিতে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সম্মেলনে আসেননি। এসেছেন সে দেশের উপরাষ্ট্রপতি। এসেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলন মিলনায়তনে রানীকে নিয়ে সবশেষে ঢোকেন প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। রানীর সম্মেলনে সবাই তখন দাঁড়িয়ে। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত চলা পর্যন্ত হোস্ট দেশটির সম্মানে দাঁড়িয়ে থাকেন সবাই।

যথারীতি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী সংস্কৃতির প্রাধান্য ছিল। সঙ্গে ছিল বহু্জাতিক অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচার। মঞ্চে আলো ফেলে শিল্পের সৃষ্টি, ক্যারিওগ্রাফি ছিল মুগ্ধকর। পুরো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা থেকে সবকিছুতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সেলিব্রেটি শিল্পীরা। এ্যা কমন ভয়েস, এ্যা কমন গোল, কমনওয়েলথ। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য অস্ট্রেলিয়ানদের দক্ষতা মুন্সিয়ানার ছাপ দেখেছেন সবাই। কোথাও কোনকিছু বোরিং বা বাড়তি মনে হয়নি।
 
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পুরো পার্থ মুড়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যের বাইরে প্রতিবেশি নিউজিল্যান্ড থেকে এর জন্য হায়ার করে আনা হয়েছে পুলিশ। এসব নিরাপত্তার মধ্যে অকুপাই আন্দোলন, ক্লাইমেট চেঞ্জ, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, গে-লেসবিয়ান রাইটস অ্যান্ড ম্যারেজ মুভমেন্ট, মানবাধিকার গ্রুপগুলো সম্মেলন কেন্দ্র থেকে দূরে হলেও যার যার মতো করে প্রতিবাদ দেখিয়েছে।

পুরো সম্মেলনে ঘুরে ফিরে আসছে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রাজপাকসের নাম। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তামিল গ্রুপগুলো যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করে আসছে। পরবর্তী কমনওয়েলথ সম্মেলন হওয়ার কথা শ্রীলংকায়। এমন অভিযোগ বহাল থাকলে কী সব দেশ যোগ দেবে শ্রীলংকায় পরবর্তী সম্মেলনে? এ প্রশ্নটি সামনে। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রাজপাকসে অবশ্য এড়িয়ে চলছেন অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া। তার সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, সম্মেলন বয়কট করা কমনওয়েলথের নীতি না। এর নীতি হলো, গণতন্ত্র আর উন্নয়ন।

অস্ট্রেলয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী স্টিফেন শুক্রবার এ ব্যাপারে বলেছেন, শ্রীলংকা তাদের যুদ্ধে জিতেছে। এখন তাদের শান্তি ও মানবাধিকারের যুদ্ধে জিততে হবে।

ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।