মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। এতে সরকারের যেমন ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, তেমিন বিরোধী বিএনপির ইমেজ নষ্ট হয়েছে।
এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা না সরকার করেনি, যা খুবই রহস্যজনক এবং দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশন প্রথমে না চাইলেও পরে সেনা মোতায়েনের জন্য চিঠি দেয়। আর শেষ মুহুর্তে সরকারেরই এই আচরণ প্রার্থী-ভোটারেরাই নয়, দেশবাসীও বিস্মিত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, প্রধান তিন প্রার্থী দেশের মানুষ ‘মাগুড়া মার্কা’ নির্বাচন আর কখনই প্রত্যাশা করে না বলেই সবাই একটি অবাধ, সুষ্ঠ-সুন্দর, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় বলেই সেনা মোতায়েনের বিষয়টি গুরুত্ত্ব পায়। কিন্তু সরকারের এহেন আচরণ বোধগম্য নয়! এতে কি সরকারের কোনো লাভ হলো না ক্ষতি হলো, তা তারাই বলতে পারবেন।
ভোটার ও প্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনও ২৮ তারিখ সকাল থেকে সেনা মোতায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। চিঠি দিয়েছিলেন সরকারকে। কিন্তু সরকার সেনা মোতায়নে বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তো সরাসরি সরকারকেই দোষারোপ করলেন, বললেন- সংবিধান লঙ্ঘনের কথা। তারপরও বিএনপি অযুক্তিক ভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
রাতে ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় বৈঠকে খালেদা জিয়া ও বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতারা নানা হিসাব-নিকাশ শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেনা মোতায়েনের ছুতোয় হঠাৎ করে নির্বাচনের শেষ মুহর্তে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা শুধু এলাকাবাসী নয়, দেশের মানুষ ভালো ভাবে নেন নি। এতে বিরোধী দলের ভাবমূর্তিও নিঃসন্দেহে নষ্ট হয়েছে। এই সকারের আমলে বিএনপি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেও এবার কেনো এ ধরণের নাটক সৃষ্টি করলো, তা খুবই দুঃখজনক।
নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ডহীন উল্লেখ করে তৈমুর খন্দকার বলেছেন, এ সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আমি আমার নেত্রী ও দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে নির্বাচন বর্জন করলাম। মন্দের ভালো, তৈমুর সাহেব তাঁর নেত্রীর নির্দেশ পালন করে শ্রদ্ধা আর প্রকাশ করেছেন। কিন্তু শামীম-আইভী নেত্রী ও দলের প্রতি সেই সন্মান দেখান নি।
ইলেকট্রনিক ভোট, নির্বাচনি বিধি মানা, প্রার্থীদের মাধ্যে আন্তরিকতা, বড়ভাই-ছোটবোন-বন্ধুত্ব, এক সাথে মঞ্চে বসে ভোটবিতর্কে অংশগ্রহণ ইত্যাদিতে ভোটারদের মধ্যে যে জোয়ার আর স্বতস্ফুর্ততা দেখা দিয়েছিলো, তা অযথাই যেমন ম্লান করে দিলেন তৈমুর খোন্দকার! তেমনি বিতর্কে জড়ালেন সরকার।
গত ২৮ অক্টোবর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ‘জিতলেও আ’লীগ, হারলেও আ’লীগ’ শীর্ষক এক লেখায় লিখেছিলাম- “মনে হয়েছে, কিছুটা হলেও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সুস্থতায় পরিবর্তনের আভাস টের পাওয়া যাচ্ছে। যা খুবই শুভ লক্ষণ"। কিন্তু এখন দেখছি, সে স্বপ্ন-আশায় গুড়ে বালি। সরকার সেই সুযোগ না নিয়ে নিজেকেই বিতর্কিত করে তুললো! নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন প্রথম নির্বাচনে কালিমা হয়ে থাকলো এই ঘটনা।
বাংলাদেশ সময় ০৯০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১১