প্যারিস থেকে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ খবরটি পাঠিয়েছেন ফারুক নওয়াজ খান। ৩০ অক্টোবর বাংলানিউজে প্রকাশ পাওয়া ওই খবরটির শিরোনাম হলো ‘কয়জনের লন্ডনে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য আছে: শিক্ষামন্ত্রী’।
শুক্রবার রাতে প্যারিসের আলেকজান্দার দ্যুমার হলে ফ্রান্স আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়েছিলেন ফ্রান্স সফররত বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ওই মতবিনিময় সভায় ফ্রান্স আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আবদুর রাজ্জাক এমপি অসুস্থ হয়ে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কেউ তাঁর খোঁজ খবর নিচ্ছে না। ’
ফ্রান্স আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ লন্ডনে চিকিৎসাধীন আব্দুর রাজ্জাকের চিকিৎসার খরচ সরকারিভাবে বহন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেন এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে সার্বিক ঘটনা জানিয়ে প্রয়োজনে জাতীয় সংসদে একটি বিল এনে রাজ্জাকের চিকিৎসা খরচ দেওয়ার দাবি জানান তারা।
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আবদুর রাজ্জাকের চিকিৎসা প্রসঙ্গে কোনও সহমর্মিতা প্রকাশ না করেই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে- ‘বাংলাদেশের কয়জন লোক লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন?’ এসময় শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘লন্ডনে চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আবদুর রাজ্জাক সাহেবের সেরকম সামর্থ্য আছে বলেই তিনি সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ’
অবশ্য একই সময়ে আবদুর রাজ্জাকের চিকিৎসা খরচ সরকারিভাবে বহন করা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী আমি নই। দেশে ফিরে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেবো। ’ শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্যে উপস্থিত ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কাণ্ডারি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহভাজন আবদুর রাজ্জাকের চিকিৎসা ও চিকিৎসা ব্যয় প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কতটা মানবিক কিংবা কতটা অমানবিক বক্তব্য দিয়েছেন প্যারিসে, সেটা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না এ কারণে যে, অনেক সময় ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়, আর অন্ধ মানুষের জন্য পথ চলা তো বেশ কষ্টসাধ্য!
আমার লন্ডন দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আমার এক বন্ধু দীর্ঘদিন লন্ডনে ছিলেন। আমার ওপর এক নৃশংস বোমা হামলার পর বন্ধুটি আমাকে লন্ডনে নেওয়ার কয়েক দফা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কেন যেন আমি মনে প্রাণে সে প্রস্তাবে সাড়া দিতে পারিনি। আমি আমার মরণের ঠিকানা হিসেবে বাংলাদেশকেই বেছে নিলাম। অবশ্য আমার বন্ধুটিও লন্ডনে থাকেননি। সপরিবারে আবার বাংলাদেশকেই শেষ ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন আমরা দু’জন পরস্পর পরস্পরের সিদ্ধান্তে মহা খুশী।
ওই বন্ধুটির মুখেই শোনা, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের অনেক রাজনীতিক লন্ডনে ঘুরতে যান। ওই ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্য, নির্বাচনী খরচের টাকা সংগ্রহে বাঙালি কমিউনিটির কাছে হাত পেতে বেড়ানো, সোজা কথায় ভিক্ষা করে বেড়ানো। অনেকে এতো বিপুল পরিমাণ ভিক্ষার টাকা সংগ্রহ করেন, তা দিয়ে নির্বাচন তো হয়ই হয়, মোটা বাণিজ্যও হয়। কেউ কেউ ওই ভিক্ষার টাকায় এমপি হয়েও যান।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ হয়তো জানেনই না- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো কোনো রাজনীতিকের লন্ডনে ঘুরতে যাওয়ার এই মাজেজার বিষয়টি। তিনি হয়তো এও জানেন না, লন্ডনে ওই ভিখারীদের কেউ কেউ শুধু এমপি নন, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীও হন। কিন্তু আমি ওই তথ্যটি জেনে অভিভূত, কয়জনের লন্ডনে ভিক্ষা করার সামর্থ্য আছে!
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ৩১ অক্টোবর, ২০১১