`আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজুর রাজত্বে’ রিপোর্টটি প্রকাশের পর কী মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমদ রাজু’র চাকরি-মন্ত্রিত্ব আরও পোক্ত হয়ে গেল? বাংলানিউজের রিপোর্ট পড়ে অনেকের এ ধারণা হতেই পারে! কারণ এখন পর্যন্ত সরকারের হর্তাকর্তারা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তত একটি ব্যাপারে তার নিয়ত পরিষ্কার করেছেন, তা হল পাবলিক আর মিডিয়া যার বিরুদ্ধে কিছু বলবে বা প্রকাশ করবে, তিনি তার পক্ষে! তা শেয়ার কেলেংকারির নায়ক সালমান এফ রহমান ওরফে দরবেশ চাচা থেকে শুরু করে দুর্নীতিবাজ-গণবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত মন্ত্রী আবুল হোসেন, শাহজাহান খান, ফারুক খান, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান যেই হোন। অজ্ঞাত অথবা বোধগম্য কারণে বর্তমান শাসন জমানায় এরাই আপাতত চিহ্নিত-রত্ম চরিত্র! আর মিডিয়ার লোকজন আর পাবলিক হচ্ছে ***জাদা!
প্রধানমন্ত্রীর নীতিটি হয়ত তার এই লোকজন শনির দশাগ্রস্ত, দুর্বলরে আশ্রয় দাও, নিরাপত্তা দাও।
আমেরিকার মতো অন্যরকম দেশেও প্রেসিডেন্ট চরিত্রকে নাগরিকরা ফুলের মতো পবিত্র দেখতে চায়। অস্ট্রেলিয়ার ২০০৭ সালের নির্বাচনের সময় একটি খবর বেরোয় লেবার পার্টির নেতা কেবিন রাড ছাত্র জীবনে একবার আমেরিকার একটি স্ট্রিপ নাইটক্লাবে গিয়েছিলেন। যেখানে নর্তকিরা নগ্ন হয়ে নাচে। প্রতিদ্বন্দ্বি লিবারেল পার্টির নেতা জন হাওয়ার্ড খবরটিকে লুফে নিয়ে বলেন, অসম্ভব এমন লোকের হাতে অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্ব দেওয়া যায় না। কিন্তু কেবিন রাড খবরটি অস্বীকার করেননি। মিডিয়ার জিজ্ঞাসার জবাবে বলেছেন, ওই বয়সে কৌতূহলের বশে বন্ধুদের সঙ্গে তেমন একটি ক্লাবে গিয়েছিলেন সত্য। এ নিয়ে পরবর্তী এক জনমত জরিপে দেখা গেল, বেশিরভাগ লোক কেবিন রাডকে সমর্থন করে বলেছেন, ওই বয়সে তিনি এক-দুবার তেমন ক্লাবে যেতেই পারেন। এমন সবাই যায়।
বাংলাদেশের নেতারা এমন পরিস্থিতিতে উল্টো মিথ্যে বলেন। অথবা পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার শাসকশ্রেণী আর তাদের অন্ধ ভক্তকূল যেন এমন বিষয়গুলিকে পুরুষালি চরিত্রের শক্তিমত্তা হিসাবে দেখতে-জানতে অভ্যস্ত! আর বিরোধীরা খাঁটি বাংলায় বলেন, আলুর দোষ!
রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু’র বিষয়গুলোও যেন সে রকম! আমাদের রাজনীতিকদের মধ্যে সেক্ষেত্রে মন্ত্রী রাজু’র রোল মডেল হতে পারেন এরশাদ! রাজনৈতিক নেতারা যেখানে একটি দেশ-সমাজের মডেল চরিত্র হবেন, সেখানে জাপা চেয়ারম্যানের এসব স্খলনকে দলের নেতারা পুরুষালি সামর্থ্য হিসাবে দেখাতেন বা দেখাতে বাধ্য হতেন। সে কারণে এরশাদ যখন সংসদে প্রথম তিরিশ মহিলা এমপি নেন তখন চিহ্নিত হয় এদের বেশিরভাগ তার কথিত বান্ধবী গোত্রভুক্ত! আজকের বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী জিনাত মোশাররফের সঙ্গে খোলাখুলি পরকীয়া ছিল এরশাদের। আর এভাবে এরশাদ যখন জিনাতের ঘর ভাঙ্গতে সমর্থ হন, এরপর তিনি আর জিনাতকে বিয়ে করেননি। প্রথম স্ত্রী রওশন জীবিত বহাল থাকতে গোপনে বিয়ে করেন বিদিশাকে।
এরশাদ-বিদিশার গোপন দাম্পত্য প্রকাশ্য হবার পর জাপার লোকজন দেখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত নানা সম্পদ নতুন স্ত্রীর নামে লিখে দিচ্ছেন তাদের চেয়ারম্যান। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষার সময় দলের এক নেতা নিশ্চিন্ত বলেন, এসব নিয়ে ভবিষ্যতে এরশাদের কোনও সমস্যাই হবে না। কারণ এরশাদের বদলাতে বা চোখ উল্টাতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি তিনি এমন একজনকে দিয়ে দলিলগুলো করাচ্ছেন যিনি ঢাকা শহরে জাল দলিল প্রস্তুতের জন্য স্বনামখ্যাত! এরশাদ-বিদিশা ছাড়াছাড়ির পর বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিজের স্ত্রীকে চুরির মামলায় গ্রেফতার করান দেশের সাবেক সেনাপ্রধান-রাষ্ট্রপতি! তার বিরুদ্ধে একেরপর এক মামলা দেন। এখনও তার সাবেক স্বৈরাচারী স্বামীর এসব মামলা মোকাবেলা করেন যাচ্ছেন বিদিশা। আর পুরস্কার হিসাবে সেই চিহ্নিত জাল দলিলবাজ এখন মহাজোটের ব্যানারে জাপার এমপি!
আওয়ামী লীগের গত আমলে স্ত্রী বিয়োগ ঘটে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের। কিন্তু স্ত্রী বিয়োগ বিরহ কাটিয়ে উঠে ব্যস্ত হতেও প্রবীণ নেতা সামাদ আজাদের সময় লাগেনি! অতঃপর আজকের রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু’র মতো গোয়েন্দা রিপোর্ট আমলে নিয়ে সরকারি উদ্যোগে তড়িঘড়ি তার নতুন বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সংসদ ভবন লাগোয়া কমিউনিটি হলে সে বিয়ের জমকালো পার্টিও হয়েছিল। বিএনপির সাবেক আমলে এমন মন্ত্রী কর্নেল(অবঃ) আকবরেরও পুনঃবিয়ের পার্টি হয়েছে। প্রথমা বহাল থাকতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন কর্নেল(অবঃ) অলি আহমেদ। মনিপুরী সম্প্রদায়ের এক স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বিশেষ ব্যক্তিগত দহরম-মহরমের রিপোর্ট ছাপে দৈনিক মানবজমিন। সাইফুর রহমান মৌলভীবাজারে তার খামার বাড়ীর গেস্ট হাউসে গেলে সেই শিক্ষিকাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো।
বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে ১৯৯৬-২০০১ জমানায় চাকরিচ্যুত করে আওয়ামী লীগ সরকার। তিনি তখন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী । সেই একই ব্যক্তিকে এবার কেন সরাসরি ফুল মন্ত্রী করা হয়েছে সে বিস্ময়টি অনেকের। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মারিয়ার্টি ওয়াশিংটনে রিপোর্ট পাঠিয়ে এই মন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের অনুকূলে পদ্মাসেতুর টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন আটকে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই মন্ত্রীর দুর্নীতি অযোগ্যতা নিয়ে পার্লামেন্টে একাধিকবার উত্তাপ ছড়ানো আলোচনা হয়েছে। দেশের প্রধান সব মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার। কিন্তু তাকেই কেন প্রটেকশন দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? এ প্রশ্নটি উৎকট চারপাশে!
এ নিয়ে বিশেষ ঘরানার কানাঘুষা থামাতে শাসকদলের এমপি রনি টেলিভিশনের টকশো’তে একটি দৌড় প্রতিযোগিতার গল্পও বলেন। রনি বলতে চান চীন সফরে গিয়ে শেখ হাসিনা বাঁশি বাজিয়েছেন আর তাতে দৌড়ে ফার্স্ট হওয়াতে মন্ত্রী হয়ে গেছেন আবুল হোসেন! কিন্তু দলের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে স্বয়ং শেখ হাসিনা বলেছেন, রনির গল্পটি ঠিক না। সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম হলেও তিনি তাকে মন্ত্রী করেননি। উল্টো শেখ হাসিনা সেখানে দলের লোকজনের সামনে রনিকে নাস্তানাবুদ করে বলেন, তিনি চারদলীয় জোট নেতা, বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের সঙ্গে ব্যবসা করেন। উল্লেখ্য, পার্থ আবার শেখ হাসিনার দুই তরফে আত্মীয়। খালাতো ভাগ্নে আর চাচাতো ভাইঝি-জামাই। শেখ সেলিমের বোন পার্থের মা জেবা রহমান। শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের মেয়ের জামাই পার্থ। তার প্রয়াত পিতা নাজিউর রহমান মঞ্জুর এক সময় এরশাদের খাজাঞ্চি হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
শেয়ারবাজার কেলেংকারি নিয়ে ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্ট হাতে পাবার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন কেলেংকারির হোতাদের হাত অনেক লম্বা। তাই তিনি রিপোর্ট সরকারের হাইকমান্ডকে দেবেন। হাইকমান্ড মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কী এক অজ্ঞাত কারণে লোকজন দেখল বিষয়টি নিয়ে কিছুই করলেন বা বললেন না প্রধানমন্ত্রী! এখন পর্যন্ত নানা ইস্যুতে তিনি বিভিন্ন সময়ে কথা বলেন। শুধু এ ইস্যুটি ছাড়া। দেশটা খুব ছোট। আরও ছোট ঢাকা শহর। কোনকিছুই গোপন, লুকোছাপা থাকে না। তদন্ত রিপোর্ট সহ নানাসূত্রে খোঁজ খবর নিয়ে প্রায় সব প্রধান মিডিয়া ছাপল শেয়ার কেলেংকারির নেপথ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও লোকমুখে দরবেশচাচা খ্যাত সালমান এফ রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব মোসাদ্দেক আলী ফালু সহ আরও বড় কিছু চাঁই জড়িত। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের নামও এসেছে কেলেংকারির নেপথ্যে।
কিন্তু লোকজন দেখল এদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থাতো নেওয়া হলোই না, উল্টো এই প্রভাবশালীরা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে হুমকি-মামলায় পেরেশানি করা শুরু করল! সরকারি আহবানে সরল বিশ্বাসে দায়িত্ব নিয়ে ভদ্রলোক এমন এক বিতকিচ্ছিরি অবস্থায় পড়লেন যে বিষয়টি নিয়ে ছি ছি উঠল দেশে। এরপর আর কোনও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ভদ্রলোক এ ধরনের তদন্ত জাতীয় সরকারি কোনও দায়িত্ব নিতে রাজি হবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু এতকিছুর পরেও শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা’র মতো সালমান এফ রহমানকে অফিসিয়েলি সম্পৃক্ত রাখা হয়েছে শেয়ারবাজারের সঙ্গে। অসহায় ফতুর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আহাজারি কান্নায় রাস্তায় নামলে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে তাদের হাড়গোড় ভেঙ্গে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান থেকে শুরু করে সরকারি নেতারা এসব বিনিয়োগকারীর উদ্দেশে প্রায় নানান কটুকথা বলেন! অনেকের মতে শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারি মহলের এই আত্মঘাতী ভূমিকা এর মাঝে পরবর্তী নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে! কোনভাবেই এটির মাটি চাপার সুযোগ নেই আর।
এ সরকার ক্ষমতায় আসার পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা। সাবেক বিএনপি আমলে দ্রব্যমূল্যের আর সাবেক আওয়ামী লীগ আমলের দ্রব্যমূল্যের তুলনামূলক চার্টের একটি পোস্টার ছিল গত নির্বাচনী প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র! আগামী দিনে এমন তুলনামূলক পোস্টারের চেহারা কী হবে? বিএনপি সব সময় বলে আওয়ামী লীগ ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ এর জবাবে বলে তারা এমন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। গত নির্বাচনের সময় বলেছে তারা ক্ষমতা ছাড়ার সময় ১০ টাকা কেজি চাল রেখে এসেছিল। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চালের দাম ২০ টাকাও রাখা সম্ভব না। আওয়ামী লীগ আগামীতে ক্ষমতা ছাড়ার সময় এর খোলা বাজারমূল্য কত টাকা রেখে যেতে পারবে? নিশ্চয় তা তিরিশের কম না। এ বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনী প্রপাগান্ডার সদুত্তর দেবার সামর্থ্য দলটির থাকবে কী?
শুধু চাল না, যে কোন ভোগ্যপণ্যের দাম দেশে এখন কল্পনার সীমা ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে ভেজালের দৌরাত্ম্য! বাজার নিয়ে একসময় খুব বকবক করতেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। তার এসব বকবকানিতে বাজার আরও অস্থির পাগলাঘোড়া হতে থাকলে প্রায় সব মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা হয় ফারুক খান যেদিন যে বাজারে যান সেখানে পণ্যের দাম আরও বাড়ে। বাজার নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রী, এক পর্যায়ে বলেন, সব দোষ মিডিয়ার! এক পর্যায়ে দেশের মানুষকে জ্ঞান দিয়ে কম খেতে বলেন। এ নিয়ে বিব্রত দলের ভিতরেও সমালোচনার ঝড় উঠলে গুঞ্জন ওঠে যে কোনও মুহুর্তে বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হতে পারে। কিন্তু এসব গুঞ্জনকে গুজব আখ্যা নিয়ে নাকচ করে দেয় সরকারি একাধিক সূত্র। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে একটি বার্তা যায় বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রটেকশন দিতে হবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজায়ার’। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের আগেও ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা গিয়ে সেখানে শামীম ওসমানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজায়ার’ তত্ত্বের প্রচার করেছিলেন।
আরিচা রোডের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরের প্রাণ হারানোর পর নিরাপদ সড়ক আর যোগাযোগমন্ত্রীর অপসারনের দাবিতে দেশজুড়ে জনমত উত্তাল হয়ে ওঠে। বিশিষ্ট নাগরিকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী ঈদ উদযাপন করেন। পার্লামেন্টে বিষয়টি তুললে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের হাতে উল্টো আক্রান্ত হন তোফায়েল আহমেদ গং। তোফায়েল আহমেদরা শেখ হাসিনাকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করছেন, এমন অভিযোগও করা হয়। প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে শহীদ মুনীর চৌধুরীর পুত্রবধূ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরের স্ত্রী কী ব্যবহার পেয়েছেন, তা স্বয়ং তিনি কিছুদিন আগে বাংলানিউজে লিখেছেন।
ওই সময় সারাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্টে ঘৃতাহুতি দিয়ে মন্ত্রী শাহজাহান খান ঘোষণা দিয়ে বসেন তার সংগঠনের গাড়ি চালকদের বিনা পরীক্ষায় লাইসেন্স দিতে হবে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে দেশের স্বনামখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্টদের গোষ্ঠী উদ্ধার করেন এই নব্য আওয়ামী লীগার। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রমিক সমাবেশের ব্যবস্থা করে সেখানে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবিতে জুতোপেটা করা হয়। এর আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের থেকে বের করে দেন শাহজাহান খান। আওয়ামী সাংবাদিক ফোরামের নেতা সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘোষণা দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ড্রাইভারও ফাইভ পাশ। কাজেই গাড়ি চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এসব কিছুর পর ওয়াকিফহালরা অবাক হয়ে দেখেন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনসহ সরকারি প্রভাব বলয়ে শাহজাহান খানের যাতায়াত-গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে!
সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক ফকির কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে বেশি সন্তানের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। ফকির বলেন রবীন্দ্রনাথের বাবা-মা’র ৯( প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি) সন্তান ছিল। তিনি নিজেও তেমন একটি ৯ সন্তানভূক্ত পরিবার থেকে এসেছেন। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে সমালোচনা হয় মিডিয়ায়। কিন্তু এ নিয়ে তার কোনও সমস্যা হয়েছে বলে কেউ শোনেনি। সারা দুনিয়ার আধুনিক রাষ্ট্রগুলোয় মিডিয়ার রিপোর্ট-পর্যালোচনা ও জরিপকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমনকি মিডিয়ার রিপোর্টের নিচে পাঠকরা যে সব মন্তব্য করেন সেসবও গুরুত্ব দিয়ে মনিটর-পর্যালোচনার মাধ্যমে জনমতের ইচ্ছা হিসাবে এর প্রতিফলন ঘটানো হয় সরকারি কাজে । আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকতেও এমন একটি চর্চা ছিল। সাবের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ধানমন্ডিতে যে কম্পিউটারাইজড মিডিয়া-রিচার্স সেন্টার গড়ে তোলা হয়, সেখানে মূলত এ কাজগুলোকেই সংঘবদ্ধ করা হতো। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে যেন এ দল নিয়েছে উল্টো নীতি!
এখন যেন মিডিয়ার রিপোর্ট যেখানে যার বিরুদ্ধে যাচ্ছে তাকে আঁকড়ে ধরা হচ্ছে! এটি কী মিডিয়া ধরেছে বা বলেছে বলে শুনব না, আমল-পাত্তা দেব না --এজাতীয় নীতির প্রতিফলন? এমন সরকারি নীতির ধারণা পেয়েই কী দেশের অন্যতম সিনিয়র সাংবাদিক এ বি এম মুসার `এক পা কবরে চলে গেছে` বলে ধৃষ্ট উচ্চারণ করেছেন নারায়ণগঞ্জের জনগণ প্রত্যাখ্যাত শামীম ওসমান? একই কারণে কী সবশেষ গোয়েন্দা রিপোর্ট সত্ত্বেও ধরাছোঁয়ার বাইরে নরসিংদীর রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু? দলের জনপ্রিয় একজন পৌর মেয়র লোকমানকে মেরে ফেলার পর সেখানে এমন ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটল, এরপর ঈদ গেল, প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপও চলে গেলেন, কিন্তু তিনি বা তার পক্ষে কেউ আজ পর্যন্ত শোকার্ত পরিবারটির সঙ্গে কথাও বলার চেষ্টা করলেন না? আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ কী করতে চায় দেশের আমজনতাসহ, না তাদের ছাড়া? আমজনতার পপুলার ভোটে গত নির্বাচনে নরসিংদীরও সবক`টি আসনে জিতেছে আওয়ামী লীগ। দেশের চলতি একশ সমস্যার সঙ্গে সরকারি গোয়েন্দা রিপোর্টে দুশ্চরিত্র বলে চিহ্নিত এসব রাজিউদ্দিন রাজুদের দেখিয়ে সেখানে বা আর কোথাও আগামীতে আমজনতার এমন পপুলার ভোট পাওয়া কী সম্ভব? এর সব সব প্রশ্নের জবাব আগামী নির্বাচনে ভোটাররা কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে চাইবে। শামীম ওসমান-রাজুদের কাছে না।
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় ১২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১১