বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলনে রাজপথের লড়াকু সৈনিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর এবং তাঁরই স্নেহ ছায়ায় বেড়ে উঠা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মো: রহমত আলী এখন নানা জটিল রোগের সঙ্গে অবিরাম যুদ্ধ করে চলছেন।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা রোগ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে।
ঢাকার মিরপুর হার্ট ফাউন্ডেশনে ৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) তাঁকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের পরম আদর আর ভালোবাসার লড়াকু এই সৈনিকের হাতে কত নেতার যে জন্ম হয়েছে তার আর হিসেব নেই।
অনেকটা বুকে জড়িয়ে রেখে তিনি আমাকে রাজনীতি শিখিয়েছেন। ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটা বীভৎস্য দৃশ্যের কথা মনে হলে আজও আমি শিউরে উঠি। বিপুল ভোটের ব্যবধানে তখন তিনি নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
তার সফর সঙ্গী হয়ে কালিয়াকৈরে একটি অনুষ্ঠানে গেছি আমি। গাড়ি থেকে নামার পর পরই একদল দুষ্কৃতিকারী তাঁর ওপর হামলে পড়ে। তার শরীরের রক্তে আমার শার্ট ভিজে গেছে। সে হামলায় তাঁর বাঁচারই কথা ছিল না। মহান সৃষ্টি কর্তার কৃপায় তিনি বেঁচে আছেন।
১৯৫৬ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে রাজনীতি শুরু করেছেন- অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে তা রেখেছেন অব্যাহত। দেশের স্বার্থে, মানুষের কল্যানের জন্য রহমত আলী অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। জীবনের অনেকটা সময়ই চলে গেছে জেলখানায় বন্দি থেকে।
বিভিন্ন মেয়াদে ৫ বার থাকতে হয়েছে জেলে। অত্যাচার আর নির্যাতনে রহমত আলীর জীবন পঙ্গুপ্রায়। এই অবস্থায়ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সভাপতি ও সাবেক এই মন্ত্রী মানুষের সেবা করে চলেছেন।
ব্যর্থতার কোন গ্লানি ভর করেনি তাঁর জীবনে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তিনি ৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে শ্রীপুর কালিয়াকৈর এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের আন্দোলন, ৬৬ এর ৬-দফা, ৬৯ এর গণ আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদ বিরোধি আন্দোলনসহ বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো আন্দোলনের অগ্রপথিক ছিলেন রহমত আলী।
শ্রীপুর-কালিয়াকৈর (গাজীপুর-৩)এর মানুষ তাঁকে ‘উন্নয়নের রূপকার’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। ইজাজ আহমেদ মিলন রচিত ‘কালের আয়নায় অ্যাডভোকেট রহমত আলী’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- স্বাধীনতার পর এই এলাকায় যতো উন্নয়ন হয়েছে সবগুলো তিনিই করেছেন।
রহমত আলীকে ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির জন্ম হয়নি, যিনি এই এলাকাকে নিয়ে এতো বেশি ভাবেন- এতো বেশি সময় দেন। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের প্রবক্তাও রহমত আলী ।
কালের পথ পরিক্রমায় জীবন ঘষে যারা আগুন জ্বেলেছেন রহমত আলী সেই আলোর পথযাত্রী। যাঁর আলোয় আলোকিত একটি ভূখন্ড-একটি জনপদ।
মাটি, মানুষ, সুন্দর আর জন্মভূমি সোনার বাংলাকে আপন জেনে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যিনি একদিন রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলেন নিজেকে। তাঁর ডাকেই অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে।
কৃষক বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া রহমত আলী জীবনের প্রায় পুরোটা অংশই বিনিয়োগ করেছেন এই দেশের মানুষের জন্যে। বিনিময়ে চেয়েছেন- ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, বৈষম্যহীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
দেশের প্রয়োজনে- দেশের মানুষের প্রয়োজনে- সকলের প্রিয় এই নেতার সুস্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসা দরকার। রহমতদাদা আপনার যাবার সময় হয়নি এখনো। অনেক কাজ বাকী। ফিরে আসুন আমাদের মাঝে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১১