লন্ডনে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুর রাজ্জাককে দেখতে গেছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বাংলানিউজে সচিত্র খবরটি দেখে-পড়ে সুরঞ্জিত দা’র প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরেছে।
আব্দুর রাজ্জাকের শারীরিক এ অবস্থায় এ ধরনের সাপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ঢাকায় থাকলে অনেকে দেখতে যেতেন। হাসপাতালের ভিড় সামাল দেওয়া নিয়ে সমস্যা হতে পারত। লন্ডনে থাকাতে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। সামর্থ্যের প্রশ্ন।
আব্দুর রাজ্জাকের চিকিৎসার টাকা কিভাবে যোগাড় হচ্ছে তা আমরা কেউ জানি না। আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে মিডিয়া ব্রিফিং করতে পারত। করেনি। এ দলের নেতারা প্রায় প্রতিদিন নানান ইস্যুতে কথা বলেন। শুধু এ ইস্যুটি ছাড়া।
এ ব্যাপারে বাংলানিউজের ইদানিং’এর সব নিউজে জনাব রাজ্জাকের পরিবারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতার বিষয়টি থাকে। কিন্তু কৃতজ্ঞতা কী কারণে তা আমরা জানি না। প্রধানমন্ত্রী বা রাজ্জাক পরিবার, কোনও পক্ষ থেকেই এ ব্যাপারে দেশবাসীকে কিছু জানানো হয়নি। জানালে দেশবাসী খুশি, আশ্বস্ত হতে পারতেন। কারণ আব্দুর রাজ্জাক আমাদের জাতীয় নেতা। মুক্তিযুদ্ধ আর দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথিকৃৎ সেনানী।
এর আগে পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগের আরেক উপেক্ষিত বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমদ অভিযোগ করে বলেছিলেন, লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন রাজ্জাকের চিকিৎসার কোনও খোঁজখবর নিচ্ছে না। তিনি নিজে হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। হাইকমিশনার বলেছেন, তিনি লন্ডনে বসে ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে ব্যস্ত আছেন! স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে প্যানেল সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসাবে সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু সেদিন সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ভারপ্রাপ্ত স্পিকার সেদিন গা বাঁচিয়ে বলেন, হাইকমিশনের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
পরে খবর বেরোয় বিষয়টি নিয়ে এভাবে সংসদে আলোচনা হওয়াতে প্রধানমন্ত্রী অসন্তুষ্ট হয়েছেন, লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ ব্যাপারে লিখিত বক্তব্য দেবে। কিন্তু হাইকমিশন লিখিত বক্তব্য দেয়নি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আব্দুর রাজ্জাককে দেখতে গেছেন সেটা নিয়ে নিউজ হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার তার স্ত্রী রত্মা হাওলাদারকে নিয়ে অসুস্থ নেতাকে দেখতে গেছেন, সে খবরও এসেছে মিডিয়ায়। হাইকমিশনার গেলে সেটি শুধু নিউজ না, তাতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা হতো।
কিন্তু তিনি যে এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই অসুস্থ নেতাকে দেখতে যাননি বা যেতে পারেননি সেটিই এখন নিউজ। এটি মেনে নেবার নয়। সোজা কথা। বাংলানিউজের খবরে পরিবারের ভাষ্যে উল্লেখ আছে, হাইকমিশন তাদের খোঁজখবর রাখছে। হাইকমিশনার অসুস্থ নেতাকে দেখতে গেছেন, এমন তথ্য কোথাও নেই। লন্ডনে থেকেও হাইকমিশনার কেন সরাসরি এখনও তাকে দেখতে যাননি বা যান না, এটা অন্য অর্থ বহন করে। বা গিয়ে থাকলে তা দেশের মানুষকে জানাতে সমস্যা কোথায়?
এর আগে যতটা জানা গেছে লন্ডনের হাসপাতালে আব্দুর রাজ্জাকের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের (লিভার প্রতিস্থাপন) মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ জোগাতে জরুরি ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল। পরিবারটির সহায়-সম্বল, জায়গা-জমি বিক্রির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজ্জাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতার চিকিৎসা নিয়ে এমন পরিস্থিতি কেন হবে? পুরো কাজটিই করতে পারত রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে বা চিকিৎসা মিশনটির সামনে থাকলে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ নেতার জীবন বাঁচানোর টাকা-পয়সার ব্যবস্থা করা মুহুর্তের ব্যাপার মাত্র। প্রধানমন্ত্রী ডাক দিলে এ মহৎ কাজে শরিক হতে দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, শিল্পগ্রুপের প্রতিনিধি বা রাজ্জাকভক্ত নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষজনের লাইন পড়ত গণভবনে। আমরা বিদেশ থেকেও হাত বাড়াতে পারতাম। আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারের কেউ কারও কাছে কিছু চাননি। শুধু দোয়া চেয়েছেন। জনগণ জাতির এই মহান নেতার দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া করছে। রাষ্ট্রের দোয়া বা দয়া করার কিছু নেই। জনগণ চায় রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের এই বীর নেতার চিকিৎসার সমুদয় দায়িত্ব নিক। এটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
বাংলানিউজে এর আগে এ ব্যাপারে লিখার পর লন্ডন থেকে একটি সূত্র জানাল, এভাবে লিখলেন! আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারের সদস্যরা ভয় পাচ্ছেন, পাছে যদি প্রধানমন্ত্রী বেজার হন! তার পরিবারের সদস্যদের মানসিক অবস্থা আমরা বুঝতে পারি। বর্ষীয়ান নেতার শারীরিক অবস্থা, ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর দুশ্চিন্তায় বিপদাপন্ন পরিবারটি চলতি স্পর্শকাতর, জটিল এই সময়ে কারও বিরাগভাজন হতে চায় না। এটাই স্বাভাবিক। অজাতশত্রু আব্দুর রাজ্জাকও চাইবেন না জীবনের এই সংকটাপূর্ণ মূহুর্তে তাকে নিয়ে কেওয়াস হোক। আমরাও চাই তার নির্বিঘ্ন সুচিকিৎসার ব্যবস্থা-নিশ্চয়তা। কেউ বিরাগভাজন হলে তার চিকিৎসা ব্যাহত হোক এটি চাই না।
মোদ্দা কথা, আমরা চাই আমাদের সবার প্রিয় রাজ্জাক ভাই আবার সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। রাজপথের জনতার নেতা ফিরে আসবেন জনতার মাঝে। মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য ছাত্রনেতা রাজ্জাক ভাই, বংশালের-বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র সেই সদা হাসিমুখ, সফেদ পাঞ্জাবি-পাজামা, কালো মুজিবকোট পরা সক্রিয় সংগঠক রাজ্জাক ভাইকে মানুষের মিছিলে ফেরত চান সবাই। দেশের গুরত্বপূর্ণ এই সময়ে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, যে বিচার ছিল আব্দুর রাজ্জাকের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন, এই বিচারের দাবি আদায়ের জন্য শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে শুরু থেকে লড়াই-সংগ্রাম যে নেতা করেছেন, এই সময়ে তিনি শুয়ে থাকবেন বিভুঁই বিদেশের হাসপাতালের শয্যায়, এটা কি হয়? তাকে যে এ সময়ে সুস্থ হয়ে ফিরতেই হবে দেশে, সুস্থ করে ফিরিয়ে আনতেই হবে, যে কোনও মূল্যে, আল্লাহ নিশ্চয় হবেন সহায়। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে সরকার কী করেছে বা করছে, দেশের মানুষ এ ব্যাপারে দ্রুত সরকারের একটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আশা করছে।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক