কর্নেল (অব.) অলিসহ কতিপয় রাজনীতিক কিছুদিন ধরে নানান সময়সীমায় সরকারের আয়ু বেঁধে দিচ্ছেন। অনেকে তাতে পাত্তা দেননি।
তাহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে কী একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন প্রিয় মঞ্জু ভাই? পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় যারা গেছেন তারা জানেন উন্নয়ন কর্তৃত্বে তিনি সেখানে কতটা বিরাট! কিন্তু মঞ্জু সাহেব আরেকটি বিষয় জানেন, তা হলো এখন আর শুধু সাবেকি উন্নয়ন দেখিয়ে নির্বাচনে জেতা যায় না। জাতীয় সংসদে ভোটের রাজনীতিতে মূলধারায় আওয়ামী লীগ বা বিএনপির নৌকা বা ধানের শীষের প্রতীকের পক্ষে যে গণপ্রবাহ সৃষ্টি হয়, এর কোনো একটির পক্ষে থাকা লাগে। আবার মূল প্রবাহের সঙ্গে না থেকে শুধু একটি জোটে থেকে নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি নেই। গত নির্বাচনে যা টের পেয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের কথিত অনেক বাঘা নেতা!
এর আগে এরশাদের পর জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের নামে ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকারের তিনি যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময়ে অবশ্য সরকার গঠনে জাতীয় পার্টির সমর্থনের স্বার্থে মঞ্জুকে মন্ত্রিত্ব আর এরশাদের মুক্তির মুসাবিদা করতে হয়েছে। এরপর আবার এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গ ছাড়লে জেপি নামের নতুন সংগঠনের ব্যানারে মন্ত্রিসভায় থেকে যান জনাব মঞ্জু। নানা কারণে তাকে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মানিক মিয়ার বন্ধুত্বের ইতিহাস-ধারাপাত এ ধারণার সূত্র। আবার খালেদা জিয়ার যে তিনি অপ্রিয়ভাজন এমন ভাবাও হয় না। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কী এবার খালেদার পক্ষে ঝুঁকে থাকার আভাস দিলেন? উত্তরটি তিনি দিতে পারবেন সঠিক।
আবার শেখ হাসিনাই বলতে পারবেন এমন কথা হঠাৎ কেন বললেন বা বলতে পারলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। কারণ তাকে মন্ত্রী করতে দলীয় রাজনীতির মতভেদ বাধা হয়নি। যে মতভেদের কথা এখন তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন। পিরোজপুর সমিতির বৈঠকে জনাব মঞ্জু বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির ঐক্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগের বিরোধিতার জন্যেই বিএনপি-জাতীয় পার্টির জন্ম।
সবশেষ তত্ত্বাবধায়কের আমলে নীরবে অথবা গোপনে দেশের বাইরে চলে যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার আগেই উপদেষ্টা ভাই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের উদ্যোগে অথবা অলক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। আমাদের মিলিটারির লোকজনের হাঁটুতে বুদ্ধির কারণে এর মাঝে বাড়িতে মদের বোতল পাবার ‘ফানি’ মামলাও ছিল। কিন্তু নিরাপদে দেশের বাইরে চলে যেতে পারাতে অনেকের মতো তাকে জেলে থাকতে হয়নি। অনুকূল পরিবেশে দেশে ফিরে এসে সবার আগে দেখা করেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। বর্তমান মন্ত্রিসভার ইতিবাচক দিক নিয়ে তিনিই শুরুতে কথা বলেছেন। আর এখন বলছেন ‘দেশে এমন গণবিস্ফোরণ হবে যা অতীতে কেউ দেখেনি!’ ‘কেবল পাপ চরম পর্যায়ে গেলেই আল্লাহর তরফ থেকেই এ ধরনের গজব নেমে আসে’ ইত্যাদি!
বলাবাহুল্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সর্বশেষ এসব বক্তব্যে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচিত হবেন খোদ শেখ হাসিনা। প্রশ্নের জবাব তাকেই দিতে হবে। কারণ মঞ্জুকে মন্ত্রী করেছিলেন তিনি। তাও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমন্ত্রী! বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রীকে নিয়ে যখন সমালোচনা তুঙ্গে উঠেছে, যখন কেউ কেউ মন্ত্রী আবুলের বিদায় নিয়ে কাউন্টডাউনও শুরু করে দিয়েছিলেন, তখন হঠাৎ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারতে গেলেন, তখন তাকেই আবার যোগাযোগ মন্ত্রী করা হচ্ছে কি না, এ নিয়ে মৃদু একটি কানাঘুষাও হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন আবুল হোসেনের পক্ষ নেন তখন সব জল্পনাকল্পনা থেমে যায়।
মঞ্জুকে শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করলে তার কথা স্ক্যান করে শেখ হাসিনাকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ কাকতালীয়ভাবে একই দিনে ভারতের প্রখ্যাত কলামিস্ট সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারের যে কথাগুলো বেরিয়েছে, তাও সরকারের জন্য শুভ নয়। মঞ্জুর মতো আরেকটি বোমশেল! সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৈনিক গালফ নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা তার ক্যারিশমা হারিয়েছেন।
কুলদীপ নায়ার বলেন, জনপ্রিয়তা একটা দুর্লভ ব্যাপার। প্রয়োজনের সময় শাসকরা জনপ্রিয়তা পায় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। যখন তার জনপ্রিয়তা আসলেই দরকার, তখন তিনি তা হারাচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অপশাসন না হলেও সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশের মানুষের জীবন শুধু দুর্বিষহই হয়ে উঠছে। আর ক্ষমতায় বসার তিন বছর পার হওয়ার পরও তিনি তা বুঝতে পারছেন না।
নায়ার বলেছেন, ‘বাংলাদেশে পাঁচ দিন থাকার পর আমার মনে হয়েছে, হাসিনা শুধু যে তার কারিশমাই হারিয়েছেন তা নয়, এক সময় তিনি যাদের বিশ্বাস করতেন, তাদেরও তিনি হারিয়েছেন। জনগণ তার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করেছিল। কিন্তু বলার মতো কোনও উল্লেখযোগ্য কাজ জনগণ দেখতে পাচ্ছে না। ’
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০১১