ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আরেক ঐতিহাসিক বদনাম ঘাড়ে নিল আ’লীগ

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১১
আরেক ঐতিহাসিক বদনাম ঘাড়ে নিল আ’লীগ

২০০৭-এ যখন ঢাকা ছেড়ে আসি তখন এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া দুই নেত্রী সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগারে বন্দি।

এর মাঝে ২০০৮-এর নির্বাচনে বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসে বর্তমান সরকার। সেই বিপুল ম্যান্ডেটের পরেও নতুন সরকারের কাণ্ডারি শেখ হাসিনা কথায়-বার্তায়-আচরণে ভিন্ন অ্যাকোমোডেটিভ। সবার সঙ্গে কথা বলে দায়িত্বশীল পথচলার চিন্তা-চেষ্টাটি নজর কাড়ে। কিন্তু তিন বছর যেতে কী অবস্থা সে চেহারার? আবার যেদিন প্রিয় শহরটায় ফিরব সেটি পৃথক বিভক্ত এক শহর! ঢাকা থেকে সুহৃদ একজন জানালেন, যেখানে দু’জন নতুন মন্ত্রীর দায়িত্ব বণ্টনে সরকার এত সময় নেয়, সেখানে চারশ’ বছরের ঐতিহাসিক ঢাকা শহরের বিভক্তিতে তিন-পাঁচ মিনিট সময় নিল মাত্র! এভাবে একা একা কোথায় যাচ্ছেন শেখ হাসিনা?

এমনিতে এমন কিছু বিভক্তির ব্যক্তিগত অম্লমধুর কিছু অভিজ্ঞতা আছে। শৈশবের কুলাউড়া শহরটি উত্তর বাজার, দক্ষিণ বাজার দুই ভাগে ভাগ করা। এসব বিভক্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখে দেখে কেটেছে ছেলেবেলা। পুলিশ স্টেশন, রেলওয়ে স্টেশন, পৌরসভা, শহীদ মিনার, ডাকবাংলা এসব ছোট সেই শহরের মাঝামাঝি জায়গায় পড়েছে। উপজেলা, ইউএনওসহ সব সরকারি অফিস, হাসপাতাল, সাব-রেজিস্ট্রার এসব পড়েছে উত্তর বাজার সীমায়। শহরের প্রধান দু’টি মসজিদের নামও উত্তর বাজার ও দক্ষিণ বাজার মসজিদ। আবার প্রধান পূজা মণ্ডপটি দক্ষিণ বাজার সীমায়। প্রতিদিন সকালের বাজারটি বসে দক্ষিণ বাজার সীমায়। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বৈকালিক হাট বসে উত্তর বাজারে। প্রধান সব শপিংমল, দোকানপাটও ওই এলাকায়। আবার গার্লস হাইস্কুল, প্রধান খেলার মাঠ, হাইস্কুল, কলেজ, প্রধান চা বাগানগুলোতে দক্ষিণ বাজারের ওপর দিয়ে যেতে হয়। কোন কারণে উত্তর আর দক্ষিণ বাজারের যুবা ছেলেদের মধ্যে কাইজ্যা লাগলেই অবশ্য এসব বিভক্তির উত্তাপ বুঝতে পারা যেত।

ঢাকা শহরের বিভক্তি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নানান আলোচনা-সমালোচনা, প্রতিবাদের রিপোর্ট পড়ে পড়ে শৈশবের শহরের কথা মনে পড়ল। প্রধান সবগুলো মিডিয়ার রিপোর্ট সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াসমূহ স্ক্যান করলে দেখা যাবে, এ ইস্যুটি নিয়ে সরকার একা হয়ে পড়েছে। এমনকি মহাজোটের এরশাদ, রাশেদ খান মেননেরাও এ ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে নেই। এরশাদ যেখানে সারাদেশকে সাতটি প্রদেশে ভাগ করে ফেলতে চান, কিন্তু তিনিও ঢাকার বিভক্তি সমর্থন করেননি।

সুশীল নাগরিকরা এ বিভক্তিকে অপ্রয়োজনীয়, উল্টো জটিলতা বাড়াবে বলে সমালোচনা করেছেন। বিএনপি বলেছে তারা আগামীতে ক্ষমতায় ফিরলে মুছে দেবে বিভক্তির রেখা! এ নিয়ে নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। রোডমার্চ নিয়ে তারা এখন বেশ চাঙা মেজাজে আছে। ঢাকা শহরভিত্তিক নতুন একটি আন্দোলন গড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য তারা সরকারকে ধন্যবাদ দিতে পারে। এই সুযোগে তাদের সঙ্গে আবার মাঠে নামবে জামায়াত-শিবির। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের বিচার ভণ্ডুলের চেষ্টা করবে। এভাবে একটার পর একটা নতুন সমস্যা ডেকে আনছে সরকার। প্রায়োরিটি হারিয়ে যাচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের কর্মচারী-কর্মকর্তারা যে আন্দোলন করছেন, সেটির লক্ষ্য অবশ্য ভিন্ন। তারা হয়তো আয়-রোজগারে টান পড়ার উদ্বেগে পড়েছেন। এখন ঢাকার সব মানুষ বার্থ সার্টিফিকেটসহ সব প্রয়োজনে এক নগর ভবনে যান। বাড়ির মালিকরা হো্ল্ডিং, ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স, ঠিকাদাররা টেন্ডার-কাজের জন্য সবাই যান একই ভবনে। তালাকের শালিসের মুসাবিদাও সেখানেই হয়। বাংলাদশের প্রায় সব সরকারি অফিসে যেমন কড়ি না ফেললে কোন কাজ পাওয়া যায় না, নগর ভবনে নানা কাজে যারা যান, তা তারা ঢের জানেন। অতএব সেখানকার কুশীলবরা খুব স্বাভাবিক টাকায় টান পড়ার উদ্বেগে পড়তে পারেন। সরকার মনোনীত প্রশাসক-কাউন্সিলর হবার নতুন লাইন-প্রতিযোগিতার শুরুর পর এসব নিয়ে সেখানে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টিতেও সময় লাগবে না।

‘সেবা’র কথা বলে ঢাকার প্রশাসনিক বিভক্তির যুক্তি আছে। আজ না হলেও একদিন তা অনিবার্যভাবে হতোই। কিন্তু পদ্ধতির কারণে পুরো বিভক্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আপনি যদি পাবলিকের স্বার্থ-চিন্তায় ঘুমাতে না পারেন, পাবলিকের জন্য এতকিছু করেন বা করতে চান, তাহলে তাদের বাদ দিয়ে কেন? আওয়ামী লীগের মতো একটি গ্রাসরুট সংগঠন, ঢাকার প্রতিটি অলিগলি, ভবনেও যার কর্মী-সমর্থক আছে, শতাধিক নামের অঙ্গসংগঠন যার, তাদের কোন একটি উইং দিয়েও এ ব্যাপারে জনগণের মতামত নেয়া বা জনমত সংগঠনের চেষ্টা হয়েছে?

এখন প্রশ্ন, সরকার এটি এমন বিশ্রি, একতরফাভাবে করতে গেল কেন? ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকা ভাগ করে ফেলার বিল পাস নিয়ে তিন-পাঁচ মিনিট এমন নানান হিসাব আছে মিডিয়ায়। বাকশাল সৃষ্টির সময়ের মতো এভাবে আরেকটি ঐতিহাসিক বদনাম সরকার নিয়ে গেল নিজের ঘাড়ে! এসব কারণে ঢাকার প্রশাসনিক বিভক্তির বাস্তব প্রয়োজনীয়তার কথা তারা এখন যতভাবে বলুক, তা আমল-পাত্তা পাবে না। কারণ এক্ষেত্রে জনমতের কোন তোয়াক্কা করা হয়নি। সংসদে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা যে কোন দল বা মানুষের মাথা গরম-নষ্ট করে, ঢাকা বিভক্তি নিয়ে নজিরবিহীন তাড়াহুড়ার বিষয় আরেকটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

অথচ ঢাকা এমনিতেই পুরাতন ঢাকা, নতুন ঢাকা, গুলশান-বনানী-বারিধারা, বাড্ডা-রামপুরা-বনশ্রী, এলাকাভিত্তিক ওয়ার্ড কমিশনারের অফিস, এমন নানা নামে বিভক্ত হয়ে আছে। মিরপুর-উত্তরার লোকজন গুলিস্তান-সচিবালয়ে আসাকে ‘ঢাকা যাচ্ছিই বলেন। যেমন দিল্লী বললে ভারতের রাজধানী বোঝায় না। সেটি নয়াদিল্লী। এমন ঢাকার বিষয়টি সব মিলিয়েই ঢাকা। এটি এখন সিটি, প্রশাসনিকভাবে উত্তর-দক্ষিণ নাম হলেও ঢাকার নাম বা কনসেপ্ট এক ও অভিন্ন ঢাকাই থাকবে। কিন্তু এর পুরো বিষয়টি জনগণকে সঙ্গে না নিয়ে হওয়াতে এটি উল্টো একটি বদনাম চিহ্নিত হয়ে থাকবে আওয়ামী লীগের ললাটে।

এমন সব বদনামের সমস্যার মূলে থাকে নিয়ত। বলা হয়, নিয়তের সমস্যা থাকলে কোন যৌক্তিক উদ্যোগই কারো সমর্থন পায় না। অথবা সমর্থন পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কারণ সবাই জানেন এভাবে ঢাকা বিভক্তির মূল কারণটি রাজনৈতিক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ইলেকশনের হারের ক্ষত থেকে এ সমস্যার সৃষ্টি। এরপর ঢাকায় হারের ভয় তাদের পেয়ে বসে। ইলেকশন কমিশন বারবার তাগাদা দিয়েও ঢাকার ইলেকশন নিয়ে সরকারকে আগ্রহী করতে পারে না। তখন থেকে ঢাকাকে ভাগ করে দু’টি সিটি করপোরেশন গঠনের কথা শোনা যাচ্ছিল। সরকার হয়তো এভাবে ভোটে নিজস্ব নিরাপত্তার কথা ভেবেছে। অন্তত পুরো ঢাকায় না হোক দু’টির একটিতে মেয়র নির্বাচনে জিতলেও যেন মুখ রক্ষা! কিন্তু এর মাঝে বিষয়টি নিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা আর সম্ভব কি?

অনেকের ধারণা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় নতুন একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে সরকার। ইভিএম, সেনাবাহিনী ইস্যুতে বিএনপি শেষ মুহুর্তে নির্বাচন বয়কট করাতে সেখানে নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগের মধ্যে। কুমিল্লায়ও হয়তো তাই হবে। একটি ধারাবাহিকতার চলতে পারে ঢাকার নতুন দুই সিটির নির্বাচনেও। কিন্তু এমন সব ভাবনায় কি এক ফল দেবে? বা সবকিছু হয়ে যাবে এক সরল রেখায়? আগের রাতে নারায়ণগঞ্জ বর্জন করাতে ভোটে নেমে যাওয়ায় পাবলিককে ফেরাতে পারেনি বিএনপি। সে সময়ও তাদের ছিল না। এখন কুমিল্লাসহ সামনের নির্বাচনগুলো আগেভাগে বর্জন-প্রতিহতের ঘোষণা দিলে সঙ্গে হরতালও দেবে। আর এভাবে নির্বাচন প্রতিহতের হরতাল দিলে কী হয়, তা আওয়ামী লীগ জানে। বিএনপির ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের সেই কর্মসূচির নাম ছিল গণকারফিউ! বিএনপিরও তাই এ ব্যাপারে নতুন নাম খুঁজতে বা কর্মসূচির অনুসন্ধান-গবেষণায় বেরোতে হবে না। তেমন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসের ভয়ে ভোটাররা ভোটকেন্দ্র যায় না। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভোটকেন্দ্রে না গেলে তাতে নারায়ণগঞ্জের মতো ভোট বিপ্লব হবে না। ক্ষতি হবে গণতন্ত্রের।

অথচ সরকার আন্তরিক হলে এ বিভক্তির বিষয় যুক্তিযুক্তভাবে করতে পারত। যেদেশে মানুষ বিভাগের জন্য আন্দোলন হরতাল করে সেখানে ঢাকার প্রশাসনিক বিভক্তির পক্ষেও একশ’ একটা যুক্তি আছে। সেক্ষেত্রে শুধু সিটি করপোরেশন ভাগ করা নয়, সেবা সংস্থাগুলোর আরও আধুনিকায়ন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা দরকার। একটা কাজের জন্যে মানুষকে এখন যে পরিকল্পিত দশটা অফিসে দৌড়ানো হয়, এসব জুলুম-হয়রানি। বিশাল নগরীর সবকিছু এক জায়গায় কেন্দ্রিভূত থাকলে জুলুম-হয়রানি চলবেই। প্রধান সব অফিস-স্থাপনা ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়াতে এই মহানগরী যে আর অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সহ্য করতে পারছে না, এসব তো সবাই বলেন। সরকার আগে ফরজে হাত না দিয়ে নফলে হাত দেওয়াতেই যৌক্তিক সমালোচনায় পড়েছে। আজ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে তারাও একই সমালোচনা করত।

বাংলাদেশের চেয়ে আকারে ৬৫ গুণ বড় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের জনসংখ্যা মাত্র আড়াই কোটি। আর শুধু ঢাকা শহরের জনসংখ্যাই প্রায় দেড়কোটি বা এরও বেশি। অথচ ঢাকার অর্ধেকেরও কম জনসংখ্যার সিডনি মহানগরীতে সিটি করপোরেশন চৌদ্দটি। আমি এখানকার কেন্টাবারি সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা। এখানে বাড়ির ময়লা নিয়ে যাওয়া, রাস্তা-ঘাস পরিষ্কার থেকে সবকিছুই করে কাউন্সিল। কাউন্সিলে কিছুর দরকার পড়লে ফোন বা মেইল করলেই হয়। যাওয়া লাগে না। কিন্তু এদেশেওতো জনমতের বাইরে গিয়ে কিছুর চেষ্টা হয় না। মিডিয়া বা নানা পেশাদার সংস্থার জনমত জরিপকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। আমরাও কখনো ভাবিনি বা ভাবতে হয়নি সিডনি আমার না, বা অপেরা হাউস, ডারলিং হারবার, সেন্ট্রাল রেলস্টেশন, সিডনি এয়ারপোর্ট, পার্লামেন্ট ভবন, কিংসক্রস, অক্সফোর্ড স্ট্রিট এসব আমার না। যেমন ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন হলেও প্রধানমন্ত্রীর অফিস, সংসদ ভবন, সচিবালয়, বুড়িগঙ্গা-সদরঘাট, টিএসসি, রমনা পার্ক এসব একটাই থাকবে। ভাগ হয়ে যাবে না। এসবও কী সরকার দেশের মানুষকে ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতে পেরেছে? না প্রয়োজন মনে করেছে?

প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ভাগ নিয়ে সেবার কথা বলেছেন। কিন্তু সেবার জন্যেতো সেই মেয়র হানিফ বা মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমল থেকেই মেট্রোপলিটন সরকারের দাবি চলে আসছে। সিটির বিদ্যুৎ-ওয়াসাসহ সেবার খাতগুলো যেখানে সিটি সরকারের অধীনে এক আমব্রেলার নিচে-অধীনে থাকবে। বিরোধী দলে থাকতে শেখ হাসিনাও এ দাবি সমর্থন করতেন। সরকারে যাবার পর চুপ! আগেরবার ক্ষমতায় থাকতে বর্তমান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রটি ওসমানী উদ্যানে করার জেদ ধরা হয়েছিল। সেই জেদে যদি সেটি ওসমানী উদ্যানেই করা হতো তাহলে যানজটে কি এদিকটায় ঠিকমতো আসা-যাওয়া করা যেত? আড়িয়াল খাঁ বিলে বিমানবন্দরের বিরুদ্ধে পাবলিকের আপত্তির সময়ও জেদাজেদি করা হয়নি। জেদাজেদির ফলাফল কখনোই ভালো হয় না। কিন্তু ঢাকার ভাগ নিয়ে যে কারও কথাই শোনার চেষ্টা করা হলো না, সে কারণেই প্রশ্নটি জোরের সঙ্গে চলে এসেছে সামনে, এভাবে একা একা কোথায় হাঁটা দিয়েছেন, চলে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা? আমাদের সবার প্রিয় একজন ছড়াকার লুৎফুর রহমান রিটনের ‘ঢাকা আমার ঢাকা’ নামের বিখ্যাত একটি ছড়া আছে। ঢাকা বিভক্তির পর ‘দ্বিখণ্ডিত ঢাকা নামের নতুন ছড়া লিখে ফেলেছেন প্রিয় রিটন ভাই। এখানে তা সবার সঙ্গে শেয়ার করা হলো :

দ্বিখণ্ডিত ঢাকা!
লুৎফর রহমান রিটন

ঢাকা আমার ঢাকা
স্বপ্ন এবং ভালোবাসার রঙ তুলিতে আঁকা।
ঢাকা আমার ঢাকা
ঐতিহ্যের চারশো বছর স্মৃতির সুবাস মাখা।
ঢাকা আমার ঢাকা
হঠাৎ করেই থমকে যাবে ইতিহাসের চাকা?
ঢাকা আমার ঢাকা
ক্যান যাবে না এই ঢাকাকে ‘এক শহরে’ রাখা?
ঢাকা আমার ঢাকা
এক শহরে দুইটা মেয়র!! বোকার স্বর্গে থাকা!?
ঢাকা আমার ঢাকা
দ্বিখণ্ডিত করছে তোমায় গোবর্ধনের কাকা!
ওরে গোবর্ধন
চোখ খুলে দ্যাখ কান পেতে শোন--ক্ষুব্ধ জনগণ।
ক্ষুব্ধ জনগণের ভাষা বুঝছে না তোর কাকা!
জবরদস্তি দ্বিখণ্ডিত করছে শহর ঢাকা!!
(এই দুনিয়ার কোথাও পাবি এমনতরো নমুনা?
ভবিষ্যতে ভাগ হবে কি পদ্মা-মেঘনা-যমুনা?)
পনেরো কোটি বুকের ভেতর খুব মমতায় রাখা
ঢাকা আমার ঢাকা......

ফজলুল বারী : সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।