ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

শাহীন, এ রক্ত সইতে পারছি না!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
শাহীন, এ রক্ত সইতে পারছি না!

রিফাতের মৃত্যু নিয়ে কলম ধরার পর কেমন জানি থমকে গিয়েছিলাম। রক্ত, দা, সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে কতোই না আলোচনা হচ্ছে। মৃত্যু আর হত্যা ছাপিয়ে দোষের কাঁটাটা কার ওপর চাপবে তাই নিয়ে সরব সবাই। রিফাতের মৃত্যু ভাবিয়ে তুলেছে। আহারে! যদি ছেলেটা অন্তত বেঁচে থাকতো দায়ের আঘাতগুলো সহ্য করে! মনে হয়েছে, বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় কিছু।

রাতারাতি পাল্টেছে সে ধারণা। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত কিশোর শাহীন এলোমেলো করে দিয়েছে সব হিসাব।

চৌদ্দ বছর বয়সী শাহীনকে যখন পেটের দায়ে ভ্যান চালাতে  হয়, তখন সে লজ্জাটা মাথাটা নিচু করে দিতে বাধ্য আমার-আপনার, সবার। কিন্তু, আমরা এতে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, শিশুশ্রম আমাদের নজরই কাড়ে না। কলমের আঁচড়ের বিষয় হয়ে উঠতে পারে না। লজ্জা পাবারইবা কী আছে!

থাক। লজ্জা পেতে হবে না। আর একটু গভীরে যাই। এই শাহীনের কাছ থেকে যখন তার একমাত্র সম্বল ভ্যান কেড়ে নেওয়া হয়, সে লজ্জা তো পাবেন? এবারও আপনার তেমন একটা কষ্ট হচ্ছে না, বলুন? ভেবে নিয়েছেন, কেউ না কেউ ঠিকই কিনে দেবে। আমার লজ্জা পাবার কী আছে?

ধরে নিলাম নেই। এই যে ভ্যানটা কেড়ে নিতে গিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত হলো শাহীন, এ লজ্জাও কি আমরা পাবো না? এবার নিশ্চয়ই একটু একটু লজ্জা হচ্ছে। আমার হচ্ছে না। গর্ব হচ্ছে। শাহীনের রক্ত খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশার ‘গর্ব’ আর বিবেকহীন চোরদের দীনতাকেই সামনে এনেছে।

ওদেরকে ধন্যবাদ। শাহীনকে এতো ছোট বয়সে জীবনের চূড়ান্ত শিক্ষাটা দিয়ে গেছে। এই শাহীন আর যাই পারুক, জীবনে মানুষকে বিশ্বাস করার সাহস দেখাতে পারবে না।

শাহীনের রক্ত কিন্তু আমাদের মতো গরম নয়। সে রক্ত ফেসবুকে হম্বিতম্বি করে টগবগিয়ে ফুটতে জানে না। শাহীনের রক্তটা শীতল। শরীরে শান্তভাবে বয়ে চলে সংগ্রাম করতে জানে। ওর ওই রক্তে মিশে আছে সব হারানোর চোখের জল!

মনদীপ ঘরাই
লেখক
সিনিয়র সহকারী সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার


বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।