ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রী করা সম্পর্কে দেশে তারেকের প্রমোটার এক সাংবাদিক লিখেছেন, এরপরও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় একজন মি. ক্লিনের হাতে পড়লনা। যার হাতে গেল তিনি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত।
ফেসবুকে ‘প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা ছিল বলে আবু্লকে বাদ দিতে পারেননি, আবুলের লজ্জা নেই বলে পদত্যাগ করেনি’ লিখে স্টেটাস দিতেই একঘন্টার মধ্যে শতাধিক লাইক পড়ে। আসে নানান পাঁচমিশালি মন্তব্য। মূলত সৈয়দ আবুল হোসেন, ফারুক খান, শাহজাহান খান, সাহারা খাতুন, দীপু মনি এদের নানান পরিস্থিতির কারনে এমন একটি পরিবর্তন আশা করা হচ্ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক নম্বর প্রায়োরিটি ছিল পদ্মা সেতু। এ সরকারের মেয়াদের মধ্যে সেতুর ওপর গাড়ি দৌড়ানোর কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু এটির আর কবে কাজ শুরু হবে তা কেউ জানেনা।
সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের নাম ধরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিএনপি আমলের মোশাররফ হোসেনের পর এমন নাম ধরে কোন কেবিনেট সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের কলংক আর আসেনি। কিন্তু এরপরও আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেননি প্রধানমন্ত্রী! তাকে তথ্য যোগাযোগ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন ডিজিটাল বাংলাদশ নির্মানে তিনি ভালো কাজ করছেন! যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ভেঙ্গে রেল, সড়ক-সেতু নামে আলাদা মন্ত্রণালয় করে সুরঞ্জিত-ওবায়দুল কাদেরকে সেখানে পদায়ন করে আবার বলে দিয়েছেন দুদিন দেরি করে যাতে তারা মন্ত্রণালয়ে যান! আবুলের সাবেক মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপদ পয়-পরিষ্কারে যেন দরকার আরও দুটি দিন!
জিনিসপত্রের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা ছিল বর্তমান সরকারের আরেক নির্বাচনী অঙ্গিকার। সেটিকে সাত আসমানে তুলে দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় হলেন ফারুক খান। বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ‘আল্লাহ’র মাল আল্লাহ’য় নিয়া গেছেন’ বচনের পর জনগণের চোখে অন্যতম ব্যর্থ বানিজ্যমন্ত্রীর ‘কম খান’ বচনটিও ঐতিহাসিক শুধু নয়, আগামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণার অন্যতম অস্ত্র হবে। সেই ফারুক খান যাবার সময় বলে গেছেন আরেকটি আলোচিত হবার কৌতুক মন্তব্য! তার কৌতুক মন্তব্যটি হল, ‘তিন বছর তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন!’ সত্যি কী তাই? এ ব্যাপারে একজনের মন্তব্য ছিল ফারুক খান সঠিক বলেছেন। কারন দ্রব্যমূল্য এই তিন বছর জনগণের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও ফারুক খানের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এবং সেই ফারুক খানকে বাণিজ্য থেকে নিয়ে যাওয়া হলো বিমান মন্ত্রণালয়ে! বাংলাদেশে সবচেয়ে চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের একটি বিমান মন্ত্রণালয়! ঢাকা অফিসে ১৫-৩০জন জনবল নিয়ে বছরের পর বছর ধরে এদেশের এয়ারস্পেস থেকে লাভ নিয়ে যাচ্ছে এমিরেটস, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সসহ সব বিদেশি ক্যারিয়ায়। আর ‘আকাশে শান্তির নীড়’, জাতীয় পতাকাবাহী ক্যারিয়ার এমন নানান সুমিষ্ট ভাষায় গত চল্লিশ বছর ধরে লোকসান গুনেই যাচছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স! দেশে সরকার আসে সরকার যায়। বিমানের শুধু চোরের দলীয় গ্রুপ বদলায়। এরজন্য সরকার বদলের পর গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির মামলাগুলোর একটি হয় বিমানের ক্রয়-মেরামত ভিত্তিক! গত আমলে বিমান মন্ত্রী না হয়ে এটি মূলত নিয়ন্ত্রন করতেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার।
এবার সরকারে মহাজোট নামটি হালাল করতে আওয়ামী লীগের বাইরে যে দু’জনকে মন্ত্রী করা হয় তাদের একজন জিএম কাদের। এরশাদের ভাই হলেও তার ইমেজটি একটু অন্য রকম ইমেজের। পড়াশুনা করা স্বল্পভাষী ভদ্রলোক মানুষ। এই মানুষটিকে বিমান মন্ত্রণালয়ে একদিনের জন্যেও শান্তি দেয়নি এ আমলের সংঘবদ্ধ চোরচক্র! মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া কর্মকর্তাদের একের পর নজিরবিহীন প্রকাশ্য ভূমিকার ভূমিকার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটি ছিল সরকারের অভ্যন্তরীণ নজিরবিহীন বিশৃংখলার অন্যতম স্মারক।
সেখান থেকে জি এম কাদেরকে সরানোয় নিশ্চয় এখন চেনামুখ ফারুক খানকে নিয়ে সুখেশান্তিতে বসবাস করতে পারবে সেই চোরচক্র! আর বিমানকে অন্তত কলুষমক্ত রাখা জি এম কাদেরকে ফেলে দেয়া হলো ফারুক খানের তৈরি করা আগুনের কুণ্ডলিতে! দ্রব্যমূল্যের আগুন যে সৃষ্টি করে গেছেন ফারুক খান, সে আগুন কিভাবে নেভাবেন বর্তমান বানিজ্যমন্ত্রী? হাতে মাত্র ২ বছর সময়। আগামি নির্বাচনে ভোটের বাজারে আওয়ামী লীগ কী করবে না করবে তা ঠিক হবে এই ২ বছরে। কঠিন এক পরীক্ষা সামনে জিএম কাদেরের। এ পরীক্ষায় পাশ করা কঠিন। কারন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভোগপণ্যের প্রায় সবকিছু ডলারে বিদেশ থেকে কিনে আনতে হয়।
নতুন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন রেলের লোকসানের কালো বিড়ল বের করবেন আগে। কিভাবে সম্ভব? ভারতেও রেল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লাভজনক বিভাগ। কারন তাদের নেটওয়ার্ক অনেক বড়। ট্রেন বিদ্যুতচালিত। ট্রেনের সংখ্যাও অনেক বেশি। মুম্বাইতে এক ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়তে এসে ঢুকে আরেকটি। ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ, টিকেট করার অভ্যাস, মেনটেনেন্স এসবের ওপরও সবকিছু নির্ভরশীল। সিডনি সিটি রেল নেটওয়ার্কে প্রতিদিন ট্রন চলে কয়েক হাজার। কিন্তু প্রায় সব স্টেশন এক-দু’জন স্টাফ নিয়ে চলছে। স্টেশন ঝাড়ু দেওয়া, সাফসুতরো রাখার কাজও করেন স্টেশন মাস্টার। আমাদের স্টেশন মাস্টার সাহেবরা কী তা কল্পনায় ভাবতে পারেন? এ দেশের প্রায় সব মানুষ টিকেট কেটে চলেন। বিনা টিকেটে কোথাও কাউকে পাওয়া গেলে স্পটফাইন ২০০ ডলার। এর কোন মাপ নেই। আর আমাদের লোকজনতো জানেন ধরা পড়লে দশ-বিশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে মাপ পাবার ব্যবস্থা আছে! সিডনি সিটি রেলের ব্যয়বহুল সার্ভিসের মেনটেনেন্স খরচ এত বেশি যে তা বাংলাদেশের রেল বাজেটের কয়েকগুন বেশি হবে। রেলকে লাভজনকে করতে মেনটেনেন্স, বিস্তর নতুন ট্রেনের ব্যবস্থার পাশাপাশি এর অপ্রয়োজনীয় জনবল কমাতেই হবে। ওখানে হাত দেয়া সম্ভব? রেলের লোকজন হাত কেটে দেবে। অতএব জটিল এক পরীক্ষার সস্মুখিন আমাদের হাওরবাসী দাদা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
পদ্মাসেতুর কাজ শুরুকে এক নম্বর প্রায়োরিটি হিসাবে নিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এরসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে জমাট বরফ গলাতে হবে আগে। পদ্মাসেতুর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ দেশের ভেঙ্গে পড়া রাস্তাঘাটের উন্নয়ন। দেশজুড়ে আবুল মন্ত্রীর রেখে যাওয়া এসব ভাঙ্গা রাস্তাঘাট-সেতুর নিচে চাপা পড়ে আছে আওয়ামী লীগের আগামি নির্বাচনের ভোট। এতদিন নানান ইস্যুতে গঠনমূলক বক্তব্য দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। দেশের সড়ক যোগাযোগের নেতৃ্ত্বে গঠনমূলক কী কাজ তিনি দেখাতে পারেন তা আগামি নির্বাচনে তার আর আওয়ামী লীগের ফলাফলের সেতু নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারন সবার সঙ্গে তিনিও জানেন, এসব কাজে বিস্তর দেরি করে ফেলছেন তার নেত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভা গঠনের একবছরের মধ্যে মন্ত্রীদের কাজের যে মূল্যায়ন দরকার ছিল সেটি করা হয়েছে তিন বছর পর। পচা চিহ্নিতদের আগলে রেখে দেয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়! গুদামের পচা আলু না ফেলে দিলে তা ভালো আলুতেও পচন ধরায়। শেখ হাসিনার কেবিনেটের চিহ্নিত এই পচাসমগ্র গোটা সরকারকে আগামিতে কোথায় টেনে নিয়ে যায় তা বলবে ভবিষ্যকাল। দু’বছর পরের নির্বাচন।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক।
বাংলাদেশ সময় ১৫০৬ ঘণ্টা ডিসেম্বর ০৬, ২০১১