দাড়ি রেখে, পাঞ্জাবি-টুপি পরে বিসমিল্লাহ বলেও নিঃসঙ্কোচে মিথ্যা বলা যায়। শেষ বয়সে এসে এটা আবারও প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ হাজারো অপকর্ম করা আল-বদর, রাজাকার, আল-শামসদের শিরোমণি গোলাম আযম।
গত তিনদিন ধরে তার কপচানো মিথ্যাবুলি প্রচার করে যাচ্ছে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম। টেলিভিশনে তার চেহারা দেখে এবং কথা শুনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা যে কোনো মানুষ মুহূর্তেই অনুধাবন করতে পারবেন- শ্বেতশুভ্র দাড়িওয়ালা ওই লোকটার মধ্যে এখনো একটা হায়েনা লুকিয়ে আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে গোলাম আযমের সাম্প্রতিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ দেশে ধর্মের নামে রাজনীতি করা এবং ইসলামের ধ্বজাধারীদের চরিত্র বিষয়ে আরও একবার সম্যক ধারণা পাবে দেশের বিবেকবান মানুষ- সন্দেহ নেই।
বেসরমের মতো করে বলা গোলাম আযমের কথাগুলো শুনে আমার মনে পড়ে যায় প্রায় দেড় দশক আগের একটা ঘটনা।
ঘটনাটা ছিল এরকম- এক গোঁয়ার লোককে তার অপকর্মের বিষয়ে সাবধান করে দেয় গ্রামের লোকজন। লোকটি গ্রামবাসীর সাবধান বাণী তো শোনেইনি উপরন্তু এ কাজের জন্য তাকে কেউ কোনো শাস্তিই দিতে পারবে না বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ফের একই অপকর্ম করে।
এবার গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সালিশের মুখোমুখি দাঁড় করায়। ডাকা হয় তার নিকটজনদেরও। সালিশে বসার আগে নিকটজনরা তাকে আড়ালে ডেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি যেন তার অপরাধের জন্য সালিশে আসা মুরব্বিদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাহলে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের সম্মান রক্ষা হবে।
কিন্তু ওই যে বলে না, ইল্লত যায়না ধুলে, স্বভাব যায় মলে (মরলে) কিংবা চোরে না শোনে ধর্মের কথা।
ঠিক সে রকম ঘটনাই ঘটলো সালিশে। লোকটি ক্ষমা তো চাইলেনই না, বরং নিজের সাফাই গাইতে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করলেন সালিশের লোকজনকে। এরপর যা হবার তাই হলো। সালিশে আসা লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে মনের ঝাঁঝ মিটিয়ে ইল্লত লোকটিকে উত্তম-মধ্য দিল। কোনোমতে সে প্রাণে রক্ষা পেলো তার স্বজনদের কাকুতি-মিনতিতে। ওই ঘটনার পর নিজেদের মান-সম্মান রক্ষার্থে স্বজনরা তাকে নিয়ে চিরদিনের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।
জানি না, ওই লোকটির মতো গোলাম আযমের গোয়ার্তুমির পরিণতি কী দাঁড়াবে? আর জামায়াতে ইসলামীই বা তাকে নিয়ে কোথায় যাবে? পাকিস্তানও কি আর এখন তাকে আগের মতো আগলে রাখবে?
এ প্রসঙ্গে অনেক আগের একটি ছড়ার কথাও মনে পড়ে যায় আমার।
ছড়াটি এখানে তুলে ধরছি-
পিতলা ঘুঘু সোনার চান
স্বপ্নে দ্যাখো পাকিস্তান
পাকিস্তানের পাকি চাঁদ
তাই দ্যাখে কও জিন্দাবাদ
আলখাল্লা যতোই পরো
ভাগ্যে আছে নিন্দাবাদ।
পিতলা ঘুঘু সোনার চান
নেই নিয়াজি, টিক্কা খান
নেই ভুট্টো, ইয়াহিয়া
কার কাছে আর বলবি গিয়া- চাচাজান
বাঙালিদের গ্যাঁড়াকলে পইড়া গেছি- বাঁচাজান।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১১