১৯৯০/১৯৯১ সালে রামপুরা রোড থেকে ‘আকর্ষণ’ নামে একটি সাপ্তাহিক বের হতো। আমি কাগজটির নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম।
হ্যাঁ, কাদের মোল্লার কথাই ঠিক। গো আজমকে আমরা গো-গোবরের গার্বেজ থেকে এখন আমাদের ড্রয়িং রুমের অতিথি বানিয়েছি।
এবার বিজয়দিবসে একটি চ্যানেলে ‘অরুণোদয়ের অগ্নি সাক্ষী’ দেখতে দেখতে চোখ ভিজে যাচ্ছিলো আর মনে হচ্ছিলো যুদ্ধাপরাধী গো. আযম কি কোনো দিন মুক্তিযুদ্ধের এসব নির্মম ছবি দেখেছেন? দেখলে কি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সাথে যেসব মিথ্যা কথা বলেছেন, তা বলতেন? হয়তো বলতেন, ‘এ সিনেমায় যা তুলে ধরা হয়েছে, তা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার’। ছবির ফাঁকে বিজ্ঞাপন বিরতি, খবর। সেই খবরেও গো. আযমের কথা! গো. আযম ছাড়া আমাদের বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস যেন অসম্পূর্ণ!
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। অনলাইন খুলেই বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে যুদ্ধাপরাধী গো. আজমের সাক্ষাৎকার পড়ি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লিখি-“মন্ত্রীদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি এবং গো. আজমের বৃদ্ধাঙ্গুলি”। পরদিন লেখাটি বের হবার পর এবার গো. আজমের ২য় কিস্তি!
এ পর্বেও গো. আজম সেই একই সুরে গান করেছেন! তার মিথ্যাচারে কিছু সার কথা তুলে ধরছি-
[১। সে সময়ে পাক সরকার ও পাকি বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন গোলাম আযম। ২। যুদ্ধের সময় ৯ মাস ধরে পুরো বাংলাদেশে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন হয়েছে, সেগুলোর প্রতিরোধ কেন করেননি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু করার ক্ষমতা বা সুযোগ আমাদের ছিল না। আর আমরা অসহায় ছিলাম। ৩। ‘একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে সারাদেশে যেসব ঘটনা ঘটে তার অনেক কিছুই আমরা জানতাম না’, বলেন গোলাম আযম। ৪। এসময় সংবাদপত্রের খবরাখবর ও স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের খবরের কথা বললে, এমনকি চরমপত্রের প্রসঙ্গ তুললে অবজ্ঞার হাসি হাসেন গোলাম আযম বলে- ওসব খবর মিথ্যা ছিলো!
৫। ১৯৭১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে রাজাকার শিবির পরিদর্শন করে আলেম ও ইসলামি কর্মীদের রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার আহবান জানিয়েছেন আপনি- এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সেদিন আমি সেখানে গিয়েছিলাম, এ কথা সত্য। কিন্তু আমি তাদের ন্যায়ের পথে কাজ করতে বলার জন্যই গিয়েছি। ’ ৬। নবীনগরের কুখ্যাত গোলাম আযম নাকি, জীবনেও কোনো দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাননি। ’ ৭। তখন হঠাৎ করাচি যেতে হয়েছিলো সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান গোলাম আযম। ৮। মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী এমনকি সাকা চৌধুরীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ‘আমার দলের নেতাদের নিয়েও আমি কনফিডেন্ট। তাদের স্বভাব এ রকম নয়। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য, তদন্ত সব ডাহা মিথ্যা। ওনারা কখনো মানবতাবিরোধী কোনো কাজ করতে পারেন না। ’]
প্রিয় পাঠক, গো. আজমের কুকীর্তির কথা বিশ্ববাসী জানে। ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করছে। কে বা কারা কী ভাবে তাকে আমন্ত্রণ-আশ্রয়-প্রশ্রয়-পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে; তা কী দেশ ও জাতি ভুলে গেছে? কীভাবে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী গো. আজম তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে পেয়েছে!
আমাদের মহান বিচারপতিরা স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মামলায় ‘বিব্রতবোধ’ করেন অথচ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত গো. আযমের নাগরিকত্ব ফাইলে সই করার সময় ‘বিব্রতবোধ’ করেন না! তাঁদের বিবেক নাড়া দেয় না- ‘অরণোদয়ের অগ্নি সাক্ষী’!!
বাংলাদেশ সময় ১০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১১