বাংলানিউজে গোলাম আযমের ইন্টারভ্যু’র লাইনে লাইনে উস্কানি, আপাদমস্তক পাকিস্তানপন্থী এই ঘাতক লোকটি স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরে এসেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন! এসব যত পড়ি তত হাত নিশপিশ করে! এরমাঝে রোববার ঢাকা সিলেটে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এটি পুরোপুরি সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতা।
গোলামের গ্রেফতারের প্রাক্কালে দেশে যে এমন অনেক ঘটনা ঘটতে পারে, তা কী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগে ভাগে ঠাওর করতে পারেনি?
ঘটনা ঘটে যাবার পর আওয়ামী লীগ-বিএনপির পরষ্পরকে দোষারূপ এসব মুখস্ত বিষয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পণ্ডের অপচেষ্টায় এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটতে পারে। এমন কী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টাও হতে পারে। কিন্তু এসব ঘটনা ষড়যন্ত্র যদি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগেভাগে শনাক্ত- বা রোধ করতে না পারে তাহলো এত মাধুকরি নামের এসব সংস্থা পোষা দরকার? এ অবস্থায় বিরোধীদল তখন যদি এসবকে সরকারি ষড়যন্ত্র বলে সেটিই আমজনতা বিশ্বাস করবে।
একটা দিক থেকে ঘটনা থেকে একটি ইতিবাচক উপলদ্ধি ক্যাশ করা যেতে পারে। তাহলো গোলাম আযমের গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়া দেখাতে তার আণ্ডাবাচ্চারা যে কিছু একটা ঘটানোর অপচেষ্টা করবেই সে ব্যাপারে এখন থেকে আগাম প্রতিরোধের ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে সরকারকে। জামায়াতের বড় চাঁই যুদ্ধাপরাধী নেতাদের এর মাঝে যে ধরা হয়েছে, এর আগেও কিন্তু হাবভাব দেখানো হয়েছিল তেমন কিছুর চেষ্টা হলে তারা দেশটারেই উল্টায়া দেবে!
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করলেও তেমন নানা হুলস্থুলের গল্প বলা হয়েছিল। সবশেষ বাংলা নিউজের ইন্টারভ্যুতেও দেশখ্যাত জ্ঞানপাপী গোলামের ভয় পাই নাই, ভয় পাইনা’ এমন একটা ভাববাদী হুমকি আছে।
মানুষের যখন কোন চয়েস থাকেনা তখন তারা এমন মারমুখো আত্মঘাতী হয়। ভয় তাড়াতে উল্টো ভয় দেখায়। এসব বিষয় মাথায় রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই নরঘাতককে গারদে পোরার দায়িত্ব সরকারের।
রোববার ঢাকায় আরিফ আর সিলেটে বাসে আগুন দেবার ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যুর ঘটনা দেশে অরাজক একটি পরি্স্থিতি সৃষ্টির ইঙ্গিতবাহী। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একদল আরেক দলকে যত দোষাদোষি করুক, মূল মনোকষ্টের বিষয় যে যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়ে যাচ্ছে এটা ঠেকানো যাচ্ছেনা, তা দেশের আম পাবলিকও বোঝে।
দুদিন আগে বিজয় দিবসে সারাদেশের মানুষ যে বিচার দ্রুততর শেষ করার জন্যে যে আকুল আকুতি জানিয়েছেন তা ক্যাশ করার প্রশ্নে সরকার কতটা আন্তরিক? সরকারের নানান কাজে দেশের মানুষের হতাশা থাকলেও এ ইস্যুতে মুক্তবুদ্ধি চিন্তার মানুষজনকে এরসঙ্গে আরও একাত্ম-সংশ্লিষ্ট করার উদ্যোগও নেই। এই বিচার নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার যে সব কাজ সুচারুরূপে করছে তা বলা যাবেনা।
তবে এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটাতো ঠিক এই সরকার এই বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে, এরমাঝে গ্রেফতার করেছে গোলাম আযম ছাড়া প্রায় সব চাঁই যুদ্ধাপরাধীকে এবং বিচার শুরু হয়েছে। বা দেশে কী এমন একজন বিশ্বাসী লোক পাওয়া যাবে যিনি বিশ্বাস করেন যে আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গিয়ে বিএনপি আসলে এই বিচার করবে?
প্রথমদিকে যারা বলতেন সরকার এই বিচার করবেনা, তারা এখন দাবি তুলেছেন স্বচ্ছতার-আন্তর্জাতিকমানের বিচারের! তাদের সবকিছুর লোকাল, দল লোকাল, নেত্রী লোকাল, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষজনকে লোকাল চেনাজানার ভিতরেই খুন করা হয়েছে, দেশে যত খুন হয় সব খুনের বিচারই হয় লোকাল আইনে, আর দেশবিরোধী লোকাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটাই এরা শুধু চান আন্তর্জাতিক মানের? এদের প্রতিরোধে এলাকায় এলাকায় লোকাল লোকজনকেই সংগঠিত করা যথেষ্ট। কিন্তু সরকার কী ত করছে?
দেশের সব প্রধান পপুলার মিডিয়া এই বিচারের পক্ষে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই ইস্যুটি নিয়ে সরকারি লোকেরা এসব মিডিয়ার লোকজনকে নিয়ে বসারও প্রয়োজন মনে করেছেন কী? দেশের প্রধান সব বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রগতিশীল ধারার সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এই বিচারের পক্ষে। দীর্ঘদিন ধরে এরা যার যার ফোরামে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করে আসছেন। এমনকি এখন নানা কারনে সরকারের সমালোচক ড. কামাল হোসেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ পর্যন্ত। কিন্তু আজ পর্যন্ত ইস্যুটি নিয়ে সরকার বসলোনা!
এটি যে এমন একলা চলার বিষয় না তা তাদের কে বোঝাবে? অথচ এই বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি এরা কেউ একলা না। গুরুত্বপূর্ণ জাতির ঐতিহাসিক ইস্যুটায় একলা চলতে গেলে কিন্তু রোববারের মতো নাশকতার ঘটনার শঙ্কা চলতেই থাকবে।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় ১৮৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১১