ঢাকা: ‘আমিও তুলে রাখবো এক গোলা সোনা ধান আর এক পাখি জমির আবাদ। সাঁচের পিঠারা সব ভিজবে সারারাত শীতের লাল জ্বালানো রসে।
কবির এই প্রত্যাশার শীতে এখন বাঙ্গালির জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। এখানে শীতের কোম্বল পেচিয়ে আলস্যের ঘুম নয়, বাহারি পিঠা-পায়েশের লোভাতুর হাতছানি নয়, শীতের তীব্র কামড়েই যেন দেশবাসীর জীবন যায় যায় অবস্থা।
গত শনিবারের চেয়ে রোববারের আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হলেও চলমান শীতের কামড় দেশব্যাপী চলবে কমপক্ষে আরো তিন দিন। ঠিক এমনই পূর্বাভাস দিচ্ছে ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে সহসাই কমছে না মানুষের ভোগান্তি। অথচ বাড়ছে শীত জনিত কারণে মৃত্যুর মিছিলের দৈর্ঘ। এ যেনো প্রকৃতির কাছে মানুষের কেবলই অসহায় আত্মসর্মপন।
এ চিত্র কেবল ঢাকাতেই নয়। সারা দেশই এখন পৌষের তীব্র শীতের দখলে। ঠা-া বাতাসের দাপটে মানুষের অবস্থা একেবারেই নাস্তানাবুদ। নিদেন পক্ষে কেউই বের হচ্ছেন না ঘরের বাইরে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপদে পড়েছে ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষ ও শিশুরা।
বলতে গেলে হাড় কাপানো শীতে যবুথবু সমগ্র দেশ। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাস জনজীবনের পরিচিত চিত্রকেই পাল্টে দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল খুলনা এবং যশোরে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার এ তাপমাত্রা কিছুটা উন্নতি হলেও যেকোন সময় তা কমতে পারে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে।
শনিবারের ১১ জনসহ গত তিন দিনে সারাদেশে শীতের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এর মধ্যে গাইবান্ধায় ২ জন, রংপুরে ২ জন, নীলফামারীতে ৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১১ জন কলাপাড়ায় ১ জন, বাউফলে ১ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া রোববার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাপযন্ত্র নষ্ট থাকায় ৭ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে।
ঘন কুয়াশায় দেশের প্রধান নদী বন্দর, ফেরীঘাট, বিমানবন্দরে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি না চলায় প্রধান মহসড়কগুলোতেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রোববার সারাদেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, সাতক্ষীরা, খেপুপাড়া ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
রোববার ঢাকায় সর্বচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ২০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টাঙ্গাইলে সর্বচ্চ ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফরিদপুরে সর্বোচ্চ ১৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাদারীপুরে সর্বোচ্চ ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চট্টগ্রামে রোববারের তাপমাত্রা ছিল সর্বচ্চ ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুমিল্লায় সর্বচ্চ ১৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চাঁদপুরে ২১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফেনীতে সর্বচ্চ ১৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কক্সবাজারে সর্বচ্চ ২৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্ব নিন্ম ১৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সিলেট বিভাগের সিলেচে রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ২১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈশ্বরদীতে সর্বচ্চ ২০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বগুড়ায় সর্বোচ্চ ১৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বন্ন্মি ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুরে রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুরে সর্বচ্চ ২১ ডিগ্রি সিলসিয়াস ও সর্বনিন্ম ১০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
খুলনায় রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বরিশালে রোববারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চিল ২১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পটুয়াখালীতে সর্বোচ্চ ২০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ ১৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে দেশব্যাপী বেড়েছে শীতজনিত রোগে অসুস্থতা। সর্দি-কাশি-জ্বর, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, এ্যাজমা, কোল্ড স্ট্রোক, কোল্ড ডায়রিয়া, সাইনোসাইটিস, রাইনাইটিস, হাইপোথারমিয়া প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শিশু ও বয়স্করাই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১, ডিসেম্বর ১৮, ২০১১