ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ঢাবি`র প্রশ্নে আবার ভুল! চাই না ক্ষমা, শাস্তি চাই

মনোয়ার রুবেল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১১
ঢাবি`র প্রশ্নে আবার ভুল! চাই না ক্ষমা, শাস্তি চাই

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, `গাধাকে পিটালে মানুষ হয় না। কিন্তু মানুষকে পিটালে গাধা হয়`।

এই বাক্যটি শিখেছি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময়। খুবই চমৎকৃত হয়েছিলাম। আফসোসও হয়েছে। স্কুল জীবনে এই বাক্য কেন শিখলাম না।

আমাদের গণিত শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম স্যার `গাধার বাচ্চা গাধা` গালি দিয়ে পেটাতেন। তখন এই বাক্যটি জানলে তার মুখের উপর কথাটি বলে দিতে পারতাম। হয়তো এই উক্তির গুণেই তার হেদায়েত হতো। কিন্তু উক্তিটি না জেনে আমরা তার প্রদত্ত গাধা বিষয়ক গালিকে সার্টিফিকেট হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। শিক্ষকের মার শরীরের যে অংশে পড়ে সে টুকরো বেহেশতে প্রবেশ করবে বলে জেনেছি। স্যার বেত্রাঘাত করার সময় সানন্দে কাৎচিৎ হয়ে সমস্ত শরীরে বেত ছোঁয়ানোর চেষ্টা করেছি। পুরো শরীরকে বেহেশতে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কারণে মার খেয়েছি, অকারণেও মার খেয়েছি। মার খেয়ে দাঁত ভাঙ্গার গল্পও আছে। প্রতিবাদ করতে পারতাম না। শিক্ষক বলে কথা। আমাদের শেখানো হয়েছিল শিক্ষকরা কোনও ভুল করতে পারেন না। ভুল করেন না। কোনও অন্যায় করেন না।

ছোট বেলার শিক্ষকের ভুল বিষয়ক সে বক্তব্য বড় বেলায় এসে জেনেছি ভুল। তারাও ভুল করেন। কর্মে অবহেলা করেন। ফাঁকি দেন। অনার্সে পড়ার সময় ছাত্র সংসদে থাকাকালীন দেখেছি কিভাবে বিভাগীয় প্রধান ২ টাকার কলা ৫ টাকায় লিখিয়ে বিল আদায় করে নিতেন। তখন জেনেছি শিক্ষক টু পাইসও করেন। ফাঁকিবাজ-টু পাইস ওয়ালা শিক্ষকদের জন্য কোনদিনই সৎ শিক্ষকরা অশ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন নি। শিক্ষকের সততার মূল্য এতটাই বেশী।

শিক্ষকের শ্রদ্ধার আসনটি এতটাই উঁচুতে যে শিক্ষক বিষয়ে আমার বক্তব্যে অনেকেই আহত হতে পারেন। নাক কুঞ্চিত করতে পারেন। উদ্ধত আচরণ বলতে পারেন। কিন্তু যে শিক্ষকের জন্য একটি ছাত্রের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিক্ততম অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় সে শিক্ষকের অন্যায় বা অবহেলামূলক অপরাধে ভনিতা না করেই আমি ক্ষুব্ধ হই। বেহেশতে যাওয়ার লোভে অন্যায়কে অন্যায় বলা থেকে বিরত থাকি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ ইউনিটে ভর্তির ব্যাপারে আমি ক্ষুব্ধ। প্রথমবার প্রশ্নপত্রে ৬টি প্রশ্নে ভুল থাকায় পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়। ২০ ডিসেম্বর তারিখে আবার পরীক্ষা হয়। এবার ভুল হয়েছে ১০টি ! ১নং সেট অনুযায়ী ২, ৩, ৭, ৮, ১০, ১৩, ১৯, ২০ ও ২২ নং প্রশ্নে ভুল হয়েছে। একেই বলে সের এর উপর সোয়া সের।

ঢাবি`র একেকজন গড়ে মাসে তিন থেকে চারটি ক্লাশ নেন। হাজার হাজার টাকা বেতন নেন। গাড়িতে চড়ে ক্লাসে আসেন। তবু এই শিক্ষকরা প্রশ্নে ভুল করবেন কেন ? ভুল হতেই পারে বলে প্রথমবার ভুল মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার কেন? উপাচার্য মহোদয় যে কয়টি প্রশ্নে ভুল রয়েছে তা সমন্বয় করার কথা বলেছেন। এখন সমন্বয় করা হলে আগের বার কেন সমন্বয় করা হয় নি? কেন সরকারের হাজার হাজার টাকা নষ্ট করে আবার পরীক্ষা নেওয়া হলো??

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই হাজার শিক্ষক মিলে ১০০ টি শুদ্ধ প্রশ্ন তৈরি করতে পারেননি? পরপর দুবার সুযোগ পাওয়ার পরও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তারা কি তাদের যথাযথ যোগ্যতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন? না দেন নি। অস্বীকার করতে পারবেন না যে, তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা একটি ছেলে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। তারা ভর্তি হওয়ার আগেই জেনে গেছে তাদের শিক্ষকরা কোনও কাজের নয়। যারা ভুল প্রশ্ন তৈরি করে তাদের দানকৃত জ্ঞান কতটুকু শুদ্ধ হবে তা নিয়েও ছাত্রদের শঙ্কিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এতে ঢা.বি`র ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে। ভূলুন্ঠিত হয়েছে। ঢাবি হাস্যরসের উপাদানে পরিণত হচ্ছে। সৎ, নীতিবান ও পূজনীয় শিক্ষকগণ বিব্রত হয়েছেন। যে সব দায়িত্বজ্ঞানহীন শিক্ষক এই সব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এক্ষুণি তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে। ভর্তি কোচিং সেন্টারের সাথে দহররমও খতিয়ে দেখতে হবে। দুই বার প্রশ্নপত্রে ভুল কোনভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়। ছাত্রদের এমন একটি তিক্তকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য নূন্যতম পক্ষে ঢাবি কর্তৃপক্ষের উচিত অন্তত একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা।

-মনোয়ার রুবেল
ইমেইলঃmonowarrubel@yahoo.com

বাংলাদেশ সময় ১৪৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।