স্বাভাবিকভাবেই গুলি খেয়ে আর উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি আমেরিকার এই কীর্তিমান প্রেসিডেন্টের। আবার সারা শরীরে অসংখ্য ইনজুরি নিয়েও গাঢ় দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা দেশের জন্য অবিরাম লড়ে গেছেন।
খেলোয়াড় জীবনে মাশরাফী দুর্দান্ত গতিতে বল করে খ্যাতি লাভ করেন 'নড়াইল এক্সপ্রেস' হিসেবে। আজও তার গতি থেমে নেই; কিন্তু এবারের গতি ভিন্ন খাতে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে নড়াইলের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নড়াইল-২ আসনের এই করিৎকর্মা সংসদ সদস্য। এমনকি মোটরবাইকে করে তিনি নীরবে-নিভৃতে একা একা চষে বেড়াচ্ছেন নড়াইলের প্রত্যন্ত জনপদ; খোঁজ নিচ্ছেন প্রান্তিক মানুষের এবং নিজেই পৌঁছে দিয়ে আসছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তার বিচক্ষণ নেতৃত্বে ইতোমধ্যেই নড়াইলকে করোনামুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়েছে।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ২০১৭ সালে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন 'নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন'। এই দাতব্য সংস্থাটির মাধ্যমেই সরকারি সাহায্যের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে ছুটছেন তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।
করোনা দুর্যোগে "ডাক্তারের কাছে রোগী নয়, রোগীর কাছে ডাক্তার"- এ স্লোগানে নড়াইলে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবা চালু করেছেন মাশরাফী। নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। টেলিমেডিসিন সেবা শুরু করা হয়েছে। ডাক্তার ও রোগী উভয়ের সুরক্ষার জন্য স্থাপিত হয়েছে ডক্টরস সেফটি চেম্বার। চিকিৎসক, নার্স, রোগী ও পুলিশের জন্য ডিসইনফেক্টর চেম্বারও চালু করেছেন তিনি। ডাক্তার, নার্স, পল্লী চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়মিত সরবরাহ করছেন। নড়াইল কারাগারের বন্দীদেরও ওয়াশেবল মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস দেওয়া হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে নির্মাণ করা হয়েছে জীবানুনাশক গেট।
যে পরিবারে খাবার নেই, খোঁজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাশরাফীর স্বেচ্ছাসেবীরা সে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। দিনমজুর, মোটর শ্রমিক, ভ্যান চালক, কৃষি শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। চাল পাঠিয়েছেন জেলার এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলোতে। সাবেক-বর্তমান অস্বচ্ছল খেলোয়াড় এবং ক্রীড়া সংগঠকদের জন্য উপহার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। ইমাম, মুয়াজ্জিন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও পুরোহিতদের খাবার এবং নগদ টাকা প্রদান করছেন। রমজান মাসে ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিতরণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
মাশরাফী তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে ধান কাটার চারটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দ্রুত নিয়ে এসেছেন নড়াইলে। এতে করে ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কটের এই দুর্দিনে এলাকার কৃষকদের স্বস্তিতে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন তিনি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপহার এবং সরকারি ত্রাণের তালিকা প্রস্তুত ও বিতরণে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছেন মাশরাফি। নড়াইলের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, রাষ্ট্রের উর্ধ্বতন পদে কর্মরত এ জেলার কৃতি সন্তান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি এসব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করে যাচ্ছেন।
মাশরাফীর করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলার অন্যতম ক্যারিশম্যাটিক পদক্ষেপটি হলো- দেশরত্ন শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে তিনটি বিশেষ গোষ্ঠীর সমন্বয়ে তিনটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিটি কার্যক্রম পরিচালনা করা। এতে করে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের পথ বের করা অনেক সহজ হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল ফিলোসফি- "দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো"- নীতিকে বুকে ধারণ করে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন মাশরাফী। জনপ্রতিনিধি থেকে ক্রমশ তিনি পরিণত হচ্ছেন জননেতায়। তাইতো করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এ মহাদুর্যোগে একজন দক্ষ নেতার ন্যায় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা যেভাবে সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করছেন- নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবি রাখে। খেলার মাঠের 'নড়াইল এক্সপ্রেস' যেন রাজনৈতিক অঙ্গনেও জনকল্যাণে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে।
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব-১