ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

কোভিড-১৯ ও আমাদের অনলাইন শিক্ষা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
কোভিড-১৯ ও আমাদের অনলাইন শিক্ষা

বিশ্বজুড়ে এখন বড় আতঙ্কের নাম কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাস। আমরা এমন একটা সময় পার করছি যখন বাংলাদেশেও প্রতিদিনই বেড়ে চলছে আক্রান্তের সংখ্যা। মনে বেজে চলেছে অজানা শঙ্কা।

অন্য সবকিছুর মতো এখন স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঘরবন্দি হয়ে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে দিন গুনছেন।



প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী-সবারই আকুতি একটাই, কবে স্বাভাবিক হবে সবকিছু। তবে অবস্থাদৃষ্টে ধারণা স্পষ্ট যে, অচিরেই তা স্বাভাবিক হচ্ছে না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থনীতি বাঁচাতে এরই মধ্যে জীবন-যাপনে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও৷ তিনি বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাস মহামারির বিস্তার কমার পরই কেবল সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাববে৷ স্কুল এখন আমরা খুলবো না৷ স্কুল কেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটাও খুলবো না৷...অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ থাকবে৷ যদি তখনও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ না কমে তবে যখন এটা থামবে আমরা তখনই  খুলবো৷’ (সূত্র: দেশ রূপান্তর, ২৭ এপ্রিল ২০২০)।

এমন অবস্থায় মার্চের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ থাকে, তাহলে লেখাপড়ার কী অবস্থা হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই বিষয়টি অনুধাবন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

এই মুহূর্তে দেশব্যাপী ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয়তাও আমরা বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পারছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তার ফসল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র সুযোগ ব্যবহার করে এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ডিজিটাল শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

বিশেষ করে এই দুর্যোগ মুহূর্তে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম-ই হতে পারে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনলাইন শিক্ষা বা ই-লার্নিং বা ডিসট্যান্স লার্নিং এখন বেশ প্রয়োজনীয় বটে। ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়াও অনেক দেশেই এখন এটি জনপ্রিয় মাধ্যম।

এর সুবিধা হচ্ছে- একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা যায়। ই-লার্নিং এর ৮০ শতাংশের বেশি পাঠ কার্যক্রম ইন্টারনেটনির্ভর। তাই কোথায়ও গিয়ে পড়াশোনা করতে হয় না। ঘরে বসেই তা সম্ভব।

এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এখন অনলাইনে শিক্ষাকে আরও ‘কমিউনিকেটিভ’ করা যাচ্ছে। বিস্তারিত বললে, একজন শিক্ষার্থীর যতটা প্রয়োজন, এ অবস্থায় ঠিক ততটাই তাকে শিক্ষাদান করা সম্ভব।

এর ফলে একজন শিক্ষার্থী নিজের গতিতে শিখতে পারবে, যা কিনা তার জন্য অধিকতর ফলপ্রসূ হবে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ৫০-৬০ জনের ক্লাসে প্রতি ছাত্র ধরে ধরে শিক্ষকের দেখিয়ে দেখা সম্ভব হয় না।
কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর মেশিন লার্নিং শিক্ষার্থীভেদে যথোপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবী-বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউটগুলোও এখন অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে ডিগ্রি প্রদান করছে। বাংলাদেশ থেকেও অংশ নিয়ে অনেকেই দক্ষতানির্ভর সনদও অর্জন করছেন।

এটা বেশ অগ্রসর ধাপ। তবে এই করোনা সঙ্কটে আমাদের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যুক্ত রাখতে এবং তাদের মানসিক সাপোর্টের জন্য অনলাইন ক্লাস-ই হতে পারে একটা কার্যকর পদ্ধতি। কেননা মজার ছলে আনন্দ নিয়ে নিজের পড়াটা শিখতে পারবে তারা।

কোভিড-১৯ এর কারণে বিলম্বিত হচ্ছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশে। তবে খবরে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হতে পারে। তবে আটকে গেছে প্রায় ১৩ লাখ পরীক্ষার্থীর উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের (এইসএসসি ও সমমান) পরীক্ষাও।

গত ১ এপ্রিল থেকে এ পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল। এখন কবে নাগাদ হয় তা অনিশ্চিত।

বছরের শেষে আছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা। মাধ্যমিক পরীক্ষা, কলেজে ভর্তি, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ও উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-সবই সময়ের ছকে বাঁধা। করোনায় এসব কার্যক্রমে দেখা দেবে ‘হ-য-ব-র-ল’।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর পরীক্ষা হয়তো নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও জানাশোনার কী হবে? এ বিষয়টি তো গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য অবশ্যই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়, অনুচ্ছেদ রপ্ত করা জরুরি। তা না হলে জ্ঞানের এই শূন্যতা জীবনভর রয়ে যাবে!

তাই সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনন্তপক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে পারে। আর সে মাধ্যম হতে পারে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।

পৃথিবীব্যাপী দিনে দিনে শিক্ষায় প্রযুক্তি বা এডুটেক-এর প্রসার ঘটে চলেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় উদঘাটিত হচ্ছে অভূতপূর্ব কিছু ধারণা, তৈরি হচ্ছে নতুন কৌশল। যা জ্ঞানের ভা-ার তথা বিশ্বকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

বর্তমানে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও (বশেফমুবিপ্রবি)। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যুক্ত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, ব্যবস্থাপনা, সমাজকর্ম ও ফিশারিজ) বিভাগেই অনলাইনে বিভিন্ন কোর্সের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি এ কথা শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রিয় সহকর্মী শিক্ষকবৃন্দের একাগ্রতা এবং আগ্রহ আমায় মুগ্ধ করেছে। আর শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও কোনো কোনো ক্লাসে তাদের উপস্থিতির হার ৯০ শতাংশ।

শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমি ভার্চুয়ালি সভা করছি। কথা বলেছি আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গেও। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় তারা জানিয়ে ভার্চুয়ালি ক্লাস করার অভিজ্ঞতার কথা। তারা এই সময়ে আতঙ্কিত কিংবা হতাশ না হয়ে বরং নিজেদের পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত রেখেছে।

আশা করি ঈদের আগেই প্রতিটি কোর্সের শতভাগ ক্লাস সম্পন্ন হবে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই তাদের সেমিস্টার পরীক্ষাটা নিয়ে নেওয়া যাবে। এতে তাদের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়- অবকাঠামোসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় একটা মাইলফলক গড়ে তোলার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানের এই অভিজ্ঞতা অদূর ভবিষ্যতে বশেফমুবিপ্রবিকে ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ তৈরি করতে ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনের সমুদ্র উপকূলীয় শহর উহানে প্রথম শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। সেখান থেকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ানক এই ভাইরাস, এরপর বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (২০ মে ২০২০), ১৮৮ দেশে হানা দিয়েছে কোভিড-১৯।

এর মাঝেই বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। তবে এই বন্ধেও তারা অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। চীনের উই চ্যাট বা কিউকিউয়ের মাধ্যমে এসব ক্লাসে যুক্ত হন শিক্ষার্থীরা। প্রায় আড়াই হাজার মাইল দূর থেকেও এসব ক্লাসে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশি অনেক শিক্ষার্থীও।

ডিসট্যান্স লার্নিং-এর ক্ষেত্রে একেবারে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে দেশটির ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় (জেডজেইউ)। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার দু’সপ্তাহের মাঝেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ হাজারেরও বেশি কোর্স অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। (সূত্র: yju.edu.cn/english)।  ফলে এই ই-লার্নিং পদ্ধতির আওতায় চলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষার্থী।

কিছু কোর্স বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এ সুযোগ পান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘কোর্স হাব’র ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি ই-কমার্স কোম্পানি ‘আলিবাবা’র সঙ্গে চুক্তি করে তৈরি করে ‘Ding Talk  ZJU’ নামে একটি অ্যাপ; যা প্রায় ৩ লাখ মানুষের মধ্যে দ্রুত পৌঁছে যায়।

তবে সমস্যা একটা থেকেই যায়, সেটা হচ্ছে এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা প্রযুক্তি ব্যবহারে সেভাবে দক্ষ নন। এই কাতারে আছেন কিছু শিক্ষকও। তাৎক্ষণিক তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে চীনের হাংঝু এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়। এর আগেই ৩ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষককে এ বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হয়।

এমনকি এক হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীকে এই ডিসট্যান্স এডুকেশনের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কমমূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারেরও সুযোগ করে দেয় জেডজেইউ।

জানা যায়, ২০১৭ সালে জেডজেইউ স্মার্ট ক্যাম্পাস তৈরির উদ্যোগ নেয়। সম্প্রতি ২০০ স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করেছে; যেখানে সহজেই শিক্ষকের ক্লাসরুমে পাঠদানের ভিডিও ধারণ এবং সরাসরি অনলাইনে প্রচারের ব্যবস্থা করা সম্ভব।

করোনাকালে আমাদের দেশেও আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। গুগল ক্লাসরুম কিংবা অন্যান্য অনেক কোলাবোরেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষকেরা একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ইন্টারেকটিভ ক্লাস নিচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দিচ্ছেন। এছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপ বা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করেছে।

গত ৭ মে বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালানো সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরিরও উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। যা যুগোপযোগী উদ্যোগ বলেই মনে করি।

এটা হলে সব কিছু-ই একটা কাঠামোতে চলে আসবে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্যবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করছে তারা কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার মুখোমুখি পড়েছেন কি না- তা অবহিত করতে।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় ডিভাইস বা স্মার্টফোন না থাকার কথা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় এখনও কাঙ্ক্ষিত ইন্টারনেটের স্পিড পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে অনেক শিক্ষার্থী-ই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ৬৩.০৮ শতাংশ। এর মাঝে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে দেশে এখন ১৫ থেকে ৩৫ বছরের যুবক শ্রেণীর সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি)। কর্মক্ষম এই জনগোষ্ঠী আগামী দুই দশক ধরে কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারবেন।

করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে এসেছে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও তাদের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী যারা এখন প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে প্রবেশ করছে, তাদের যখন কর্মক্ষেত্রে ঢোকার বয়স হবে, সে সময়কার কাজ বা বৃত্তি অথবা পেশা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের হবে, যার সম্বন্ধে এখন আমাদের কোনো ধারণাই নেই।

তাই এখন-ই সময় এ বিষয়ে ভাববার। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের প্রযুক্তিনির্ভর মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতেই নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। যার স্থপতি হিসেবে কাজ করে চলেছেন তার পুত্র ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

বর্তমানে বলা হয়, আমাদের দেশে প্রায় ২৬ লাখ শিক্ষিত বেকার রয়েছে; যারা দক্ষতার অভাবে কাজ পাচ্ছে না। এ জিনিসটা নিয়ে কাজ করতে হবে। কেননা উদ্ভাবনীমূলক ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা থাকলে, ভবিষ্যতের যেকোনো নতুন পেশা বা কাজে নিজেদের সহজে সম্পৃক্ত করা যায়, এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা ও মনমানসিকতাও তৈরি করতে হবে।

ডিজিটাল দুনিয়ায় শেষ সীমা বলে কিছু নেই। এখানে সর্বদা নতুন চিন্তা, উদ্ভাবন ও সম্পাদন চক্র চলমান থাকে। প্রয়োজনে যেকোনো সময়ে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম দ্বারাই আমাদের মতো চিরাচরিত সমাজকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।  

অনলাইন শিক্ষা কার্যদক্রমের জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশিক্ষণযোগ্য যুবগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা এবং অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি মাথা রেখে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশিরা ঐক্যবদ্ধভাবে অনাগত ভবিষ্যতের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। গড়ে তুলবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

একদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবার ঈদ যে সবার জন্যই বিবর্ণ তা বোঝাই যাচ্ছে। রোগের প্রকোপ বিবেচনায় জনসমাগম এড়ানো বিষয়ক সরকারি বারণ সত্ত্বেও ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখী মানুষ। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শক্তিশালী সাইক্লোন, অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ-সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত দেশবাসী।

তবুও হাল ছাড়েনি বাঙালি। স্বপ্ন বুনছে আবার কখন প্রকৃতি শান্ত হবে, আঁধার চলে যাবে। জেগে উঠবে অর্থনীতি, মানুষ ফিরবে কাজে। আবারও হাসবে সবাই। উৎসবে-আনন্দে একে-অন্যকে জড়িয়ে নেবে বুকে। কারণ এ জাতি তো চিরকালই হাল না ছাড়ার দলে।

..লেখক: শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর। ইমেইল: vcbsfmstu@gmail.com।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।