ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

করোনাকালের বাজেট: কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২০
করোনাকালের বাজেট: কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ

সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, নব্য উদারতাবাদ বা কল্যাণ রাষ্ট্রের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। কভিড-১৯- এর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামনে উন্নয়নের জন্য প্রবৃদ্ধির অতি নির্ভরশীলতার কৌশলকে ছাড়িয়ে কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে উপরোক্ত রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয়ে আলোচনার শুরুতে এ বিষয়ে আমার সীমিত জ্ঞান নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি এ বিষয়ের ধারাবাহিক লেখার প্রথম পর্বে। 

সমাজতন্ত্র
পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রের বিপরীতে সমাজতন্ত্রের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। সমাজতন্ত্রের প্রকারভেদ রয়েছে।

কট্টর সমাজতন্ত্র বলতে কমিউনিজম বোঝায়, যেখানে সব সম্পদ রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকে এবং রাষ্ট্র বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করে সমতা প্রতিষ্ঠিত করা, যেখানে সকল মানুষ তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ভোগ করবে। কট্টর কমিউনিজম এখন দৃশ্যমান নয়। কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলো বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত বাজারমুখী মিশ্র অর্থনীতির দেশ। দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ, চীন, ভিয়েতনাম এবং রাশিয়া এর প্রধান ধারক ও বাহক, যা অন্য দেশগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।

নব্য উদারতাবাদ
নব্য উদারতাবাদ এমন একটি আদর্শ এবং নীতিমালা যা মুক্ত বাজারের প্রতিযোগিতাকে ভিত্তি ধরে তৈরি। যদিও নব্য উদারতাবাদ বিষয়ক চিন্তাভাবনা বা এর বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে, তবে এটি “ল্যাইসেজ-ফেয়ার” অর্থনীতির সাথে সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। নব্য উদারতাবাদ মতবাদে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মানুষের অগ্রগতি অর্জনের সবচেয়ে ভাল উপায় হিসাবে এর সমর্থকরা মনে করেন। প্রচলিত ধারনা হচ্ছে নব্য উদারতাবাদী অর্থনৈতিক মডেলেই সবচেয়ে বেশি নীট প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এবং আশা করা হয় যে তার কিয়দংশ চুঁইয়ে চুঁইয়ে পুঁজি বিনিয়োগকারী থেকে প্রান্তিক মানুষের হাতে যাবে এবং এতে তাদের জীবনমান উন্নত হবে। এই ভাবধারায় সম্পদ (পুনঃ)বণ্টনের বিষয়ে বাজারের নিজস্ব দক্ষতার ওপর আস্থা রাখা হয় এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ন্যূনতম হস্তক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হয়। এই মতবাদ বাণিজ্য ও মূলধনের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। উদারপন্থার এই রূপটিকে প্রায়শই অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথের তত্ত্বের সাথে যুক্ত করা হয়ে থাকে, যিনি তার “দ্য ওয়েলথ অব নেশনস” -এ যুক্তি দিয়েছিলেন যে বাজারগুলি একটি "অদৃশ্য হাত" দ্বারা পরিচালিত হয় এবং তাই সেখানে মোটা দাগে অদক্ষ সরকারি হস্তক্ষেপ ন্যূনতম থাকতে হবে। তবে ১৯৩০ এর মন্দার পরে ধ্রুপদী উদারতাবাদের পরিবর্তে কেইন্সের কিছুটা কল্যাণধর্মী নীতি বা অঙ্গীভূত উদারনীতিবাদ গ্রহণ করে (যার শুরু ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে) ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়, যা ১৯৭০- এর দিকে এসে আবার ধাক্কা খায়, যখন প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়ে বেকারত্ব বেড়ে যায়। সে ধাক্কা সামলাতে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী উদারতাবাদী ধারাকে কিছুটা পরিবর্তন করে তাতে প্রত্যাবর্তন করে যা নব্য উদারতাবাদ নামে অভিহিত হয়।  

তবে ইউরোপের অন্য রাষ্ট্রগুলো কেইন্সের কিছুটা কল্যাণধর্মী নীতিগুলোকে সংস্কারসাধনপূর্বক তার পরিধি আরও বৃদ্ধি করে আধুনিক উদারতাবাদ বা কল্যাণ রাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে।

পূর্বে উল্লেখিত ১৯৭০- এর দিকে যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং ক্রমবর্ধমান রাষ্ট্রীয় ঋণ কিছু অর্থনীতিবিদের ধ্রুপদী উদারনীতিতে ফিরে আসার পক্ষে প্ররোচিত করেছিল, যা পুনরুজ্জীবিত আকারে নব্য উদারতাবাদ নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। এই পুনর্জাগরণের তাত্ত্বিক ভিত্তি মূলত অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ফ্রেডরিখ ফন হায়েক দিয়েছিলেন, যে সম্পদের পুনর্বণ্টনের লক্ষ্যে হস্তক্ষেপবাদী পদক্ষেপগুলি সরকারকে অশেষ কর্তৃত্ববাদী করে তুলবে এবং শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধিকে খেয়ে ফেলবে, যা পরবর্তীতে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রিডম্যান, প্রগতিশীল অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান প্রমুখ কর্তৃক প্রসারিত হয়েছে। তাদের মতবাদ ব্রিটিশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রক্ষণশীল রাজনৈতিক দলগুলি ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছিল, যা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার (১৯৭৯-৯০) এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান (১৯৮১-৮৯) এর দীর্ঘ সময়কালে আন্তর্জাতিকতভাবে প্রসার লাভ করেছিল।  

কট্টর মুদ্রানীতি যদি নব্য উদারনীতিবাদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে এর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাপ্লাই-সাইড অর্থনীতি। রিগ্যান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে ধনীদের হাতে আরও টাকা তুলে দিতে চেয়েছিলেন। ধারণাটি ছিল এ রকম যে তারা এই টাকা উৎপাদনশীল কাজে বিনিয়োগ করবেন, যাতে প্রবৃদ্ধির চাকা সচল হবে, আর তার সুফল চুঁইয়ে চুঁইয়ে সমাজের নিম্নকোটির মানুষের কাছেও পৌঁছাবে (যেটা কাজ করেছে কিনা তা নিয়ে দ্বিমত আছে)। এ লক্ষ্যে রিগ্যান যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ করের হার ৭০ থেকে কমিয়ে ২৮ শতাংশে নামিয়ে আনেন, আর ক্যাপিটাল গেইন করের হার কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনেন, যেটা ছিল মহামন্দা-উত্তর যুগের সর্বনিম্ন। তার হাত দিয়ে আর্থিক খাতের যে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হতে শুরু করেছিল, তার ফলেই ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয় বলে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, যে সময় ব্যাংকগুলো বন্ধকি সম্পত্তি পুনর্দখল করলে বিপুল সংখ্যক মানুষের বাড়ির মালিকানা চলে যায়।  

ডেভিড হার্ভের মতে, ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হওয়া সেই পর্যায়ে ব্রেটন উডস ইনস্টিটিউশনগুলোকে (বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রভৃতি) ধীরে ধীরে কেইনসীয় প্রভাব থেকে মুক্ত করা হয়। এরপর তারা নব্য উদারনীতিবাদী আদর্শের প্রবক্তা হয়ে যায়। বিশ্বব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে এই নব্য উদারনীতিবাদ ধারনা নিয়ে যায়। তারা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এসব দেশকে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয় যে ঋণগ্রহীতা দেশকে বাজার উদারীকরণ করতে হবে (১৯৮০-এর দশকে এই ব্যাপারটা ঘটেছে) এবং এ লক্ষ্যে “কাঠামোগত সংস্কার” করার জন্য প্রভাবিত করে। এতে বৈপ্লবিক উপায়ে বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হয় এই ধারণার ভিত্তিতে যে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থনীতির দক্ষতা বাড়িয়ে দেবে, ফলে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়বে ও তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন খাতে সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে, সরকারি খাতকে বেসরকারি খাতে তুলে দিয়ে, শ্রমের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে, সম্পদ ব্যবহার, বাণিজ্যের শুল্ক কমিয়ে ‘বিনিয়োগের সুযোগ’ তৈরি ও ভোক্তা বাজার তৈরি করার মাধ্যমে তারা এটা করল। তারা মূল্যস্ফীতির হার কম রাখারও চেষ্টা করল, যদিও এতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের সামর্থ্য কমে যায়। এই “কাঠামোগত সংস্কার” বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ফল বয়ে আনে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে।

২০০৭ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট এবং মহা মন্দার সময়ে কিছু অর্থনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব কট্টর মুক্ত বাজারের অর্থনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পরিবর্তে আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে আরও বেশি সরকারি নিয়ন্ত্রণের আহবান জানায়। মন্দার কারণে ব্যাংকগুলোকে “বেইল-আউট” দেয়ার সমালোচনা করে তারা মনে করিয়ে দেন মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলকে বাজারের মাধ্যমেই ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ছিল। এই নব্য উদারনীতিবাদী বিশ্বায়নের কারণে জনগণের মধ্যকার আয়ের বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে অনেক অর্থনীতিবিদ মতামত দিচ্ছেন। আজ দুনিয়ার ৩৫৮ জন শীর্ষ ধনী ব্যক্তির হাতে ৪৫ শতাংশ গরিব মানুষের হাতে থাকা সম্পদ জড়ো হয়েছে। আরও মারাত্মক ব্যাপার হলো, বিশ্বের শীর্ষ তিন ধনী ব্যক্তির হাতে সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলোর সম্মিলিত সম্পদের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, অর্থাৎ ৬০০ মিলিয়ন মানুষের সম্পদ আছে তাদের হাতে। আজ বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে ৪০ শতাংশ সম্পদ, আর ১০ শতাংশের হাতে আছে ৮৫ শতাংশ সম্পদ। আর নিচের কোটির ৫০ শতাংশের হাতে বিশ্বের মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। তদুপরি, নব্য উদারনীতিবাদের সমর্থকরা মনে করে এই নীতিই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে এখনও সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং এর দুর্বলতা কাটানোর জন্য একে কিছুটা সংস্কার করা যেতে পারে, একে পরিত্যাগ করলে আরও চরম মন্দার মধ্যে বিশ্বকে পড়তে হবে।  

আধুনিক উদারতাবাদ বা ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’
সময়ের সাথে সাথে উদারপন্থা বিভিন্ন বিবর্তনীয় (এবং প্রায়শই প্রতিযোগিতামূলক) ঐতিহ্যের মধ্যে বিকশিত হয়েছিল। তাই নব্য উদারতাবাদ আবার আধুনিক উদারতাবাদ থেকে ভিন্ন। আধুনিক উদারনীতি সামাজিক-উদার ঐতিহ্য থেকে বিকশিত হয়েছিল, যা ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতিবন্ধকতাগুলিতে মনোনিবেশ করেছিল। এই আধুনিক উদারতাবাদে অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদের দ্বারা তৈরি বা বর্ধিত দারিদ্র্য এবং বৈষম্য, বৈষম্যমূলক জনস্বাস্থ্য, সামাজিক বৈষম্যমূলক আচরণ, অজ্ঞতা এবং সম্পদ (পুনঃ)বণ্টনের বিষয়গুলি কেবল রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই প্রশমিত হতে পারে। উনিশ শতকের শেষ দিকে স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে সরকারি অর্থায়ন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রকল্প এবং কাজের সময় ও শর্তাদি সম্পর্কিত বিধিগুলি শ্রমিক বান্ধব করা এই ধরনের পদক্ষেপগুলি শুরু হয়েছিল এবং বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সামাজিক পরিষেবা এবং সুবিধার বৈশিষ্ট্যগুলি আরও বিস্তৃত হয়ে তথাকথিত কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে।

অনেক সমাজতন্ত্রবাদী এটিকে বিবর্তিত সমাজতন্ত্রের একটি শাখা বলে থাকেন। তারা বলেন যে, ‘কট্টর সমাজতন্ত্র’ এবং ‘কমিউনিস্ট শাসিত মিশ্র অর্থনীতির সমাজতন্ত্র’ ব্যতিরেকে আরো এক ধরনের সমাজতন্ত্র এখন দৃশ্যমান, যা ‘কল্যাণ অর্থনীতি’ নামে পরিচিত। কল্যাণ অর্থনীতির ধারক রাষ্ট্র ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ বা ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ নামে পরিচিত। বিলাতের প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা স্যার উইলিয়াম বেভারিজ সর্বপ্রথম কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা নিজ দেশে প্রয়োগ করেন। বেকারভাতাসহ দারিদ্র্য-সহায়ক অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য হয়ে ওঠে আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা ওয়েলফেয়ার স্টেট হিসেবে। কল্যাণ রাষ্ট্রে বাজেটের বিরাট অংশ ব্যয় হয় জনকল্যাণে। খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা জনগণের অধিকার। রাষ্ট্র এসব খাতে সহায়তায় দায়বদ্ধ।  

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কল্যাণ অর্থনীতি বা আধুনিক সমাজতন্ত্রের দেশ হলো ইউরোপের সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক ইত্যাদি রাষ্ট্র। এমনকি ফ্রান্স ও জার্মানিও কল্যাণ রাষ্ট্রের ভূমিকায় অগ্রগামী। তবে যুক্তরাজ্য গত কয়েক দশকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে নব্য উদারতাবাদী ভাবধারায় চলে এসেছে। অন্যদিকে সুইডেন সারা বিশ্বে কল্যাণ অর্থনীতির মডেল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সুইডেনে বহুদলীয় গণতন্ত্র সংহত, বাজার অর্থনীতিও শক্তিশালী। সেই সঙ্গে কল্যাণ অর্থনীতির প্রতি রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং গণতান্ত্রিকভাবেই সরকার ক্ষমতাবান। বাস্তবায়ন ব্যবস্থাও ‘কঠোর’ সুশাসনের দ্বারা নিশ্চিত।

এই ব্যবস্থার সৃষ্টি বস্তুত উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, যখন জার্মানির ‘‘লৌহ চ্যান্সেলর'' বিসমার্ক অবসরভাতা সংক্রান্ত বিমা ও স্বাস্থ্য বিমা চালু করে প্রথম ‘সামাজিক' আইন প্রণয়ন শুরু করেন। বিমার প্রিমিয়ামের অর্ধেক আসবে শ্রমিক-কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক মালিকপক্ষের কাছে থেকে - এই ছিল বুনিয়াদি ভাগাভাগি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের সামাজিক আইন প্রণয়নে সেই নীতিই অনুসরণ করা হয়। নব্য উদারনীতিবাদের কারণে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়, তার অনেকগুলোই বাজার নীতির দ্বারাই সমাধান করা সম্ভব, জার্মানি যে কাজটা করে থাকে। তারা অরডোলিবারেলিজম নামের এক নীতি প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে হস্তক্ষেপ করে একচেটিয়াতন্ত্র রোধ করে এবং ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে।  

দ্বিতীয় পর্ব: করোনাকালের বাজেট: কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ

তৃতীয় পর্ব: করোনাকালের বাজেট: কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ

লেখক: উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদ; বর্তমানে লিয়েনে ইউএনডিপিতে কর্মরত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।