ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বাংলানিউজের খবর : জালাল উদ্দিনের হতাশা ও কিছু কথা

মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, পাঠক/সাংবাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১২
বাংলানিউজের খবর : জালাল উদ্দিনের হতাশা ও কিছু কথা

বাংলানিউজের একটি খবরে দৃষ্টি আটকে গেল। শিরোনাম ‘প্রধানমন্ত্রী ডাকেননি, তাই আত্মহত্যার চেষ্টা’।

খবরটি মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। জালাল উদ্দিনের মুখাবয়বের দিকে তাকিয়ে মনে হল, তিনি সত্যিকার অর্থেই হতাশ। তার এই হতাশা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে- এ কথা জেনে মনটা বিষাদে ভরে উঠল। তিনি প্রতিভার মূল্যায়ন পাচ্ছিলেন না। তাই বেছে নিলেন আত্মহননের পথ। বড় হৃদয়বিদারক ঘটনা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী যুবক জালাল উদ্দিন এখন হাসপাতালে।

জালালের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলানিউজের খবরে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের গবেষণার পর জালাল মাদকাসক্তি নিরসনের একটা কৌশল অথবা ফর্মুলা তৈরি করেছেন। তার মতে, এই ফর্মুলার মাধ্যমে অতি সহজে মাদক নিরাময় সম্ভব। দেশের মাদকাসক্ত ও মাদকের ভয়াবহতার প্রেক্ষিতে তিনি এই ফর্মুলাটি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। এক বছরেরও বেশি সময় আগে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার দদফতর তাকে ডাকেনি তার ফর্মুলা সম্পর্কে জানতে। এই পরিস্থিতিতে হতাশ হওয়া একজন জালালের জন্য ‘স্বাভাবিক’।

আমাদের দেশে প্রতিভার মূল্য পাওয়া গেছে- এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম। অনেক জ্ঞানী-গুণীর পদচারণায় মুখর এই দেশে যথার্থ মূল্যায়নের বড়ই অভাব। ফলে নীরবে-নিভৃতে ঝরে যান এসব প্রতিভাবান অথবা অনেকে অভিমানে বিদেশে চলে যান এবং সেখানে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। এ দেশের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত, কাউকে তুচ্ছ না ভেবে প্রতিভার প্রকৃত মূল্য দেওয়া।

জালাল উদ্দিনের আজকের এই ঘটনাটি নিশ্চয়ই বৃহস্পতিবারের খবরের কাগজে ছাপা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন আগরতলা সফরে আছেন। তিনি যদি দেশে থাকতেন এবং যদি এই খবরটি তার চোখে পড়ে কিংবা তার নজরে আনা হয়, তবে আমার বিশ্বাস তিনি জালাল উদ্দিনকে নিরাশ করতেন না। প্রত্যাশা করছি, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর যেন জালাল উদ্দিনকে তার দফতরে ডেকে পাঠান। জালাল উদ্দিনের প্রণীত ফর্মুলা যদি সত্যিকার অর্থে এ দেশের মাদক নিরাময়ে ন্যূনতম সহায়ক ভূমিকা পালনকারী বলেও মনে হয়, তবে তার এই ‘ক্ষুদ্র’ প্রতিভার মূল্য দিতে যেন কার্পণ্য না করেন প্রধানমন্ত্রী।

মাদক এ দেশের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। যুব সমাজ মাদকের ছোবলে আক্রান্ত। মাদক প্রতিরোধে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অনেকটা কাহিল। বিশেষ করে ইয়াবার প্রবণতা এতটাই বেড়েছে যে, অভিভাবকরা রীতিমত চরম উদ্বিগ্ন। মাদক নিয়ে কত ঘটনাই না ঘটেছে। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, মাদক কারবারি ধরতে গিয়ে নির্মমভাবে প্রাণ হারান মিরসরাই থানার এএসআই বোরহান উদ্দিন। মাদক কারবারির হাতে ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া বোরহানের উদ্দিনের আত্মা এখনো নিশ্চয়ই গুমরে কাঁদে। এ জন্যেই গুমরে কাঁদে, একজন বোরহানের খুনের প্রেক্ষিতেও এ দেশের মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্য কমেনি। বরং বেড়েছে বহুগুণে। সেক্ষেত্রে একজন জালাল উদ্দিনের একটি ফর্মুলা যদি বদলে দিতে পারে, এ দেশের মাদকের ভয়ানক চিত্র, তবে মন্দ কিসে। জালাল উদ্দিনকে তুচ্ছ না ভেবে, তাকে সহায়ক চিন্তা করা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নিযুক্ত ব্যক্তিরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে নিয়ে আসুন, প্লিজ।

লেখক : সাংবাদিক, কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময় : ১০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১২

মতামত দিতে এখানে ক্লিক করুন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।