ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

গ্রেপ্তারে পোক্ত হলো বিচারে আস্থা

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১২
গ্রেপ্তারে পোক্ত হলো বিচারে আস্থা

সকালে ফোন করেছেন সিডনিবাসী বিশিষ্ট একজন প্রবাসী লেখক। বলতে চাইলেন দেশে সরকার এসব করছেটা কী? এভাবে একসঙ্গে যে সব ফ্রন্ট খুলে বসছে এসব কী শেষে সামাল দিতে পারবে? গোলাম আযমের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলেন।

এ নিয়ে আমার যা বোধ হয়েছে তা অকপটে শেয়ার করলাম তার সঙ্গে। দেশে আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন, কিন্তু এদের নাটের গুরু গোলাম আযমকে গ্রেফতার করবেন না, পানিতে নামবেন কাপড় ভেজাবেন না তা কি করে হয়! বরঞ্চ এ গ্রেফতারে দেরি হওয়াতে বিচার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন যাচ্ছিল না। দেশেবিদেশে বিশাল অংকের তহবিল গঠন করে জামায়াত যে বিচার ভণ্ডুলের চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে ঢাকার কিছু রাজনৈতিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্বের(!)মতো যে সরকারি কিছু লোকজনও টাকা খেয়ে বসে আছে কিনা সে প্রশ্নে কানাঘুষাও শুরু হয়ে গিয়েছিল।

গোলাম আযমের গ্রেপ্তারে অন্তত সে সংশয়টি বেশ দূর হয়েছে। সরকার যে আসলেই এ বিচার শেষ করতে আন্তরিক, অথবা করবেই সে বিশ্বাসের জায়গাটি এ গ্রেফতারের মাধ্যমে পোক্ত শক্ত হয়েছে। এ গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে ঈদের আনন্দ-খুশির উল্লাস, সারা দুনিয়ার যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাংলাদেশি বাঙ্গালি আছেন, তাদের যে প্রাণের উচ্ছ্বাস দেখেছে সবাই, এতে করে প্রমাণ হয়েছে দেশের মানুষ, যাদের সঙ্গে নাড়ির টান-সংযোগ আছে দেশের, তারা যে এর জন্য কতটা অপেক্ষায় উন্মুখ বসে ছিলেন। মোটকথা এতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টির নতুন এক নৈতিক, মোরাল বুস্ট-আপ হয়েছে। এখান থেকে ট্রাইব্যুনাল, সরকার এবং দেশের মানুষ অনেক দ্রুত তরতর করে এগিয়ে যেতে পারবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি। পারলে আরেকটা ট্রাইবুন্যাল গঠন করে সেখানে আগে গোলাম আযমের বিচার শুরু করা গেলে দেশের মানুষ বেশি খুশি হবে। তবে এসবের সঙ্গে চাই সরকারের ধারাবাহিক আন্তরিকতা-একাগ্রতা। যেসব জায়গাগুলোতে ট্রাইব্যুনাল-প্রসিকিউশন সহ বিচার সংশ্লিষ্ট দুর্বলতা চিহ্নিত হচ্ছে, সেসব আমলে নিয়ে দ্রুত সুরাহার ব্যবস্থা করতে হবে’। আমার এসব বোধের কথা বললে ভদ্রলোক যেন অনেকটা একমত-আশ্বস্ত হলেন।
এ বিচার নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছিল এবং এখনও তা হচ্ছে। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশে এ বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে ইত্যাদি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যতো অবশ্যই আছে। আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল, কোন রামকৃষ্ণ মিশন বা মাদার তেরেসার চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান না। বিএনপি-জামায়াতও রাজনৈতিক দল। এবং এর সবক’টিই বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল। নানান ভালো ভালো নামে চললেও মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। যেনতেনভাবে হলেও ক্ষমতায় যাওয়া এবং থাকা। রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগেরও প্রতিটি পদক্ষেপে রাজনৈতিক লাভক্ষতির অংক থাকবে। এ নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তারাও ধোয়া তুলসি প্তা না। যার যার রাজনৈতিক স্বার্থের জায়গা থেকে প্রশ্নটি তোলেন। আর মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টিও কোন অরাজনৈতিক না। সেখানেও রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ ছিল। একপক্ষ বাংলাদেশ চেয়েছে। আরেক পক্ষ চেয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ যারা চেয়েছে তাদের নেতৃ্ত্বে ছিল আওয়ামী লীগ। এ পক্ষের অবিংসবাদিত নেতা তখন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমনকি মাওলানা ভাসানির মতো সিনিয়র নেতা থাকলেও যুদ্ধ হয়েছে ভাসানির স্নেহের ‘মজিবরের’ নামে।

 পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন গোলাম আজম, ফজলুল কাদের চৌধুরী, খান এ সবুর সহ তাদের দোসররা। যেহেতু একদল বাংলাদেশ, আরেকদল পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করছিল, সেজন্য দুইপক্ষের হাতেই অস্ত্র ছিল। এর মাঝে ‘মজিবরের’ বাংলাদেশ জিতেছে। গোলাম আযমের পক্ষ হেরে গিয়ে কেউ পিঠ-জান বাঁচাতে লুকিয়েছে, কেউ গ্রেফতার বরণ করে নিরাপদে থাকতে জেলে গেছে। গোলাম আযমের মতো বেশি দাগী লোকজন পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়ে অব্যাহত রেখেছেন বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র। পিরোজপুরের দেলু শিকদার টাইপের রাজাকারদের পাকিস্তান পর্যন্ত যাবার সঙ্গতি ছিল না। অতএব দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে দেখে খুশি হবার বদলে ভয়ে জান বাঁচাতে এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়ে বহুদিন লুকিয়ে থেকে পরে সুবিধামতো ‘মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী’ নামে আত্মপ্রকাশ করেছে।
 
দেশ স্বাধীন হবার পর অনেক দাবির সঙ্গে বড় একটি দাবি ছিল এসব খুনি-ঘাতক যুদ্ধাপরাধীর বিচার। ঘরে ঘরে তখন স্বজনহারাদের কান্নার রোল চলছে। বিশেষ করে রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের পচাগলা লাশ দেখে অবাক- বিস্মিত-শোকার্ত দেশবাসীর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জোরদার হয়। সে বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু স্বপ্নের দেশটি পরিচালনায় অনেক ব্যর্থতার পাশাপাশি এ ইস্যুতেও যে তখনকার সরকার দ্রুতগামী, চৌকস ছিল না তাতো সত্য। জাতীয়-আন্তর্জাতিক চাপ এবং বঙ্গবন্ধুর উদারতা অথবা দুর্বলতায় তিনি অনেককে ক্ষমা করেছিলেন সেটিও অসত্য না। কিন্তু এর জন্যেতো জীবনও তাকে দিতে হয়েছে। বা একাত্তরে রাজাকার আলবদরদের হাতে মানুষ খুন হয়নি বা এরা খুন-ধর্ষন করেনি, তাতো না! এরপরওতো দেশ রাজনৈতিভাবে তাদের হাতে-কর্তৃ্ত্বে চলে যায় যারা এদেশটির বিরোধিতা করেছে। এই যে এত দীর্ঘবছর এই বিচার ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে, সেটিও করা হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে। পচাত্তরের হত্যাকান্ডের অভিজ্ঞতায় আওয়ামী লীগ যে শহীদজননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনের সঙ্গে এসেছে সেটি রাজনৈতিক স্বার্থেই এসেছে। আবার যে জামায়াতকে বিএনপি থেকে ভাগিয়ে নিতে ‘কৌশলগত ঐক্যের’ নামে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে ভুলে গেছে শহীদজননীর মাধ্যমে দেশবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা, এর সবই দলটির ন্যক্কারজনক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এরপর থেকে যে জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির জোট সরকার গঠন করা, ক্ষমতায় গিয়ে চিহ্নিত দু’জন যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী করা, এখনও তাদের জোটে ধরে রেখে বিচার বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে, এর কিছুই কিন্তু অরাজনৈতিক উদ্দেশে না।
 
এবং অবশেষে তেলে-জলে যেমন মেশে না তেমন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃ্ত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের যে ঘরসংসার চলে না এর প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় গত নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে আওয়ামী লীগ বিচারের অঙ্গিকারটি নিয়ে নির্বাচন করে। বিএনপি পালটা নির্বাচন করে এদের সঙ্গে নিয়ে। এর ভোটের রেজাল্টে বিক্ষুদ্ধ বিএনপি কর্মীদের আক্রোশের মুখে অনেকদিন বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াত নেতাদের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ থাকার কথা কি মনে নাই? এরপর বিজয়ের সাফল্যে খুশি খুশি আওয়ামী লীগ সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব পাশ, ট্রাইবুন্যাল গঠন সহ যত কাজ করেছে, সবই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে করেছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিএনপি এর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু এ নিয়ে সারাদিন যারা রাজনৈতিক উদ্দেশে বিচার বিচার বলে চিল্লান, তাদের উদ্দেশ্যটিও কী রাজনৈতিক না? বা এসব বললে কী সেটি প্রমাণ হবে এদেশে কোনও মুক্তিযুদ্ধ হয়নি? সে সময় দেশের মানুষকে খুন করা হয়নি?

লাখো নারীকে তখন কী আসমান থেকে কিছু লোকজন নেমে ধর্ষণ করেছিল? ‘তখন বিচার করেনি, ক্ষমা করে দিয়েছে’ এসব  বলে বঞ্চিত পরিবারগুলোকে বিচার-বঞ্চিত করা যায়? একটা লোক তার একাত্তরের খুন-ধর্ষন-লুন্ঠনের মতো অপরাধের জন্যে মুক্তিযুদ্ধের পর তার এলাকা থেকে পালিয়ে গেল, পিঠ-জান বাঁচাতে পিতৃদত্ত নাম পর্যন্ত পালটে ফেলল, আর একজন বিশেষ সন্তুষ্টির গুণে আকস্মিক ফতোয়া দিয়ে বসলেন, যেহেতু সে একাত্তরে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছিল না, তাই সে যুদ্ধাপরাধী না! এসব সংজ্ঞা উনারা কিতাবে পেয়ে বিলি শুরু করে দিয়েছেন? কোন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকার যুদ্ধাপরাধী হতে কোন একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়া লাগবে?
 
একাত্তরে যত যুবক মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তাদের পুরো বিষয়টি ছিল আদর্শিক, চেতনার। লোভে বা ভয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন, এমন একজন লোকও পাওয়া যাবে না। অনিশ্চিত সেই সময়ে বিশেষ একটি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া ছাড়া কারও পক্ষে যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আর মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেন তাদের মধ্যে দুই কিসিমের লোক ছিলেন। একদল পাকিস্তান রক্ষায় আদর্শিক, আরেকদল লুটপাট-ধর্ষণের লোভে। দেশ স্বাধীন করা যুদ্ধে গেছেন, এমন একজন মুক্তিযোদ্ধাও পাওয়া যাবে না। এখন এলাকার মানুষের কাছে ঘৃণিত চিহ্নিত একটি মানুষ একাত্তরে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিল না তাই সে যুদ্ধাপরাধী না বলে তার বিচার ভণ্ডুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাও কিন্তু অরাজনৈতিক কেউ না। মওকাভোগী রাজনৈতিক মতলবী। মওকার গুণে এসব মতলবীরা সুবিধামতো নিশানা বদলায়।

এবার এ বিচার শুরুর পর একপক্ষ বলা শুরু করলেন সরকার এ বিচার করবে না। একাত্তরের অন্যতম কসাই চরিত্র কামারুজ্জামানরা এক ফুঁতে ট্রাইব্যুনাল উড়িয়ে দেবার হুঙ্কার ছোঁড়েন। তাদের গায়ে হাত দিলে দেশ অচল হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাবে জাতীয় হুমকি-হুঙ্কারও কম দেওয়া হয়নি। এরপর যখন ধরধরি শুরু হলো, ধরা পড়ল সব ফুটো বেলুন! পুলিশ নামতে দেয়নি, বাধা দিয়েছে, এসব অভিযোগও সত্য। কিন্তু যে কিছু করতেতো একটা নৈতিক অবস্থান লাগে। টাকায় সবকিছু হয় না বা চলে না। গোলাম আযমের বিচারের গণ আদালত বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি, এই করেঙ্গা সেই করেঙ্গা হুমকিতো কম হয়নি! কিন্তু মানুষের উচ্ছ্বাসে উড়ে গেছে সব হুঙ্কার। জনসমুদ্রে সেদিন জেগেছে জোয়ার। তেমন পরিস্থিতি করা গেলে পুলিশের সামর্থ্য কী আটকায়? বেতনভূক্ত কর্মচারী দিয়ে আর কত করা চলে! এরপর এরা কৌশল পাল্টায়। দেশে-বিদেশে শুরু করে নানান প্রপাগান্ডা! টাকাপয়সা ছড়ায়। লবিস্ট ভাড়া করে। এমন ভাড়া করা কিছু লোককে তারা বিদেশেও পাঠিয়েছে। যেখানে যে প্রপাগান্ডা খায় আর কী! বাংলাদেশের এ যুদ্ধাপরাধের বিচার মুসলমানদের বিরুদ্ধে, মুসলিম নেতাদের বিরুদ্ধে, বিচার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের না এমন একশ বাহানা! এমনকি আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপিও একদিন দাবি করে বসে এ বিচার বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখে আবার চুপ মেরে যায়! বিজয়ের ডিসেম্বর মাসের প্রায় পুরোটা সময় তারা এমন চুপচাপ কাটিয়েছে। এমনকি দেশের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের গ্রেফতারের পর দেশের মানুষের আনন্দ উল্লাসের সময়ও তারা চুপ! গোলাপি হ্যাঁ’ও কয় নাই, না’ও না! প্রেসব্রিফিং’এ জিজ্ঞেস করলে দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা কিছু বলব না’। কিন্তু এর মধ্যে যে বলা হয়ে গেছে সব কথা। চলতি পরিস্থিতিতে নতুন আরেকটি বিরুপ পরিস্থিতির ভয়ে রাজনৈতিক কারণেই বিএনপি প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। কিন্তু জামায়াতকে নিয়ে তাদের জোটটি ঠিকই আছে এবং থাকবে। বন্ধু চিরকাল। ক্ষণিকের কৌশলগত নিরবতা মাত্র। এ নিয়ে বিএনপির বলাবলি সুপ্রিমকোর্ট-প্রেসক্লাব এলাকা থেকেই শিগগিরই শুরু হবে। কারণ এসব পাড়ায় বিএনপি বাসিন্দারা বিএনপির চাইতে জামায়াত বেশি ভালোবাসেন। অথবা কড়ি পান বেশি।
 
গোলাম আযমকে গ্রেফতারের আগে বলা হয়েছিল, লেনদেন সব কমপ্লিট। সরকার তাকে গ্রেফতার করবে না। অমুক অমুক দেশ চটে যাবে। গ্রেফতার করে সরকার হাত পোড়াবে না, ইত্যাদি। এখনও মীর কাসেম আলী, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার না করা নিয়েও এমন প্রচার আছে। এর মাঝে গত ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে গোলাম আবার মিডিয়া ইন্টারভ্যু দেয়া শুরু করলে, ইন্টারভ্যুগুলোতে একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এসবকে আকস্মিক চ্যালেঞ্জ শুরু করলে লোকজনের মনে সন্দেহও বাড়ে। ব্যাপারটা কী? এর মাঝে বিচার নিয়ে ট্রাইব্যুন্যালের নানা সীমাবদ্ধতা, সরকারি মন্ত্রীদের সমন্বয়হীন কথাবার্তায় সংশয় বাড়ে। আইনমন্ত্রী একরকম, প্রতিমন্ত্রী আরেক রকম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরেক রকম কথা বলেন। আজ পর্যন্ত এই বিচার নিয়ে নিজের একজন মুখপাত্র ঠিক করল না বা ঠিক করতে পারল না সরকার। বিদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে এত সংঘবদ্ধ প্রচার চলছে। দেশেদেশে দূতাবাস, দলীয় লোকজনও কম নেই। কিন্তু আজ পর্যন্ত এসব বানোয়াট প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে কোন দূতাবাস বা দলের লোকজনের উদ্দেশেও কোন বাণী নেই! শুধু দেশের মানুষ আর মূলধারার মিডিয়া সঙ্গে-পক্ষে আছে বলে সব আল্লাহর ওয়াস্তে যেন চলছে! শুরু থেকে এ বিচার করবে না প্রচারনা-পক্ষের সঙ্গে আমার দ্বিমত অন্যখানে। সরকার যখন চিহ্নিতদের গ্রেফতার করে ফেলেছে, সাপের লেজে পা দিয়ে ফেলেছে সরকার, নিজেদের বাঁচতে চাইলে এ বিচার তাদের শেষ করে যেতেই হবে। নইলে আগামী দিনে ক্ষমতায় না আসতে পারলে এরা কী ছেড়ে দেবে? অথবা এ শুধু ইস্যু বললেই যে আগামী নির্বাচনে পাবলিক ভোট দিয়ে দেবে বা আগামী নির্বাচনে পাশ করে আসার গ্যারান্টি কী? আবার সরকার যদি এ বিচার শেষ করতে পারে, শাস্তি দিতে পারে একাত্তরের খুনিদের, সরকারের আবার নির্বাচনে জিততে তা একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে। গোলাম আযমের গ্রেপ্তারে দেশজুড়ে সৃষ্ট ঈদের খুশির আনন্দ সে ইঙ্গিতবাহী। এ বিচার নিয়ে মানুষের আশা বাড়িয়েছে, গোলাম আযমের বিচার। এর মাঝে চিহ্নিত ভুলগুলো শুধরে দ্রুত এ বিচারের শেষ চায় দেশের মানুষ।

ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।