দৈনিক বাংলা এলাকায় পুলিশের গাড়ি একটাকে একা পেয়ে পাইছিরে পাইছি বলে সেটিকে ভাংচুর, উল্লাসের নৃত্য করে কয়েক শিবির কর্মী! পোশাকে-আশাকে মাশাল্লা বেশ পরিবর্তনও আছে। কিন্তু ছবিটা দেখে একটা ছোট্ট প্রতিক্রিয়া হয় মনে।
আজকাল বিএনপি নেতারা এমন ঘটনায় পড়লে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন ঠিক, কিন্তু বিবেক সচল থাকলে সঙ্গে সঙ্গে নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে কি করেছিলেন, মনে পড়ে। সবশেষ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একা নিরীহ পেয়ে পুলিশের এক সদস্যকে মেরেফাটিয়ে রক্তাক্ত, অস্ত্র খোয়ার ঘটনায় ৪-৫ শ’ লোকের বিরুদ্ধে মুখস্ত মামলা হয়েছে। এমন ঘটনায় রাজনৈতিক হয়রানি, দৌড় বাড়ে। কে কোনদিকে ধরা পড়ে আবার এই মামলায় পড়ে যান সে আতঙ্কে অনেককে দৌড়ের ওপর থাকতে হয়। আমাদের পুলিশও এমন মানসম্মত না বলে, এমন একটি ঘটনার ছবিতে যেখানে জড়িত লোকজনকে দেখা যাচ্ছে সেখানে এমন ৪-৫ শ’ অজ্ঞাতনামা আসামির নামে মামলা করে।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে আক্রমনাত্মক, পুলিশের সঙ্গে মারপিটের ম্যালা উদাহরন আছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের মারপিট কোন দেশে হয়না? কিন্তু এসবের জন্যেও কিছু পপুলার ইস্যু থাকা লাগে। মানুষ লাগে। শুধু বেতনভূক্ত কর্মচারী দিয়ে চলেনা। ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে জামায়াত-শিবিরের বেশিরভাগ নেতাকর্মী তাদের নানা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চাকুরে অথবা সুবিধাভোগী। একবার এক জামায়াত নেতা আনঅফিসিয়াল বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিলেন, সে কারনে এক ঘন্টার নোটিশে তারা ঢাকা শহরে হাজার দশেক লোক রাস্তায় নামাতে সক্ষম। এসব চাকরি-বেতন অথবা সুবিধাদি হালালের শর্তে তাদেরকে দলীয় কর্মসূচিতে আসা-থাকা লাগে। যেমন আজকাল ঢাকাসহ দেশের নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলোয় থাকার সুযোগ পাওয়া অনেক সাধারন ছাত্রকেও ছাত্রলীগের মিছিলে থাকা বাধ্যতামূলক অংশ নিতে হয়। এসব কালেকশন্স দিয়ে মিছিলে লোক দেখানো যেতে পারে। মিলিটেন্সি সম্ভব না। এসব কালেকশন্স দিয়ে আজকালতো ঢাকায় জামায়াত-শিবির একসঙ্গে পাঁচশ লোকও নামাতে পারছেনা। নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরিরের ছেলেরাও যেভাবে ঝটিকা মিলিট্যান্সি দেখাতে পারছে, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা তা পারছে কী?
তাছাড়া রাজপথ দখল করতে পুলিশের সঙ্গে ফাইট দেবার মতো কোন পপুলার ইস্যু, নৈতিক অবস্থান জামায়াত-শিবিরের কি আছে? স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের বিচার? এগুলো পাবলিক খায়নি। গত চল্লিশ বছরে দেশে অনেক খুনোখুনি হয়েছে। এগুলোর বিচারও দেশি মানে হয়েছে। এখনও হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের পুলিশের গাড়ি ভাঙ্গার ইস্যুটি গোলাম আযমের গ্রেফতার। ইনি কে? ইয়া বড় এক রাজাকার সর্দার! এক্ষেত্র নাম্বার ওয়ান। একাত্তরে শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরোধিতা, গণহত্যায় দলবলসহ জড়িয়ে পড়া শুধু না, দেশটা স্বাধীন হয়ে যাবার পরও অনেক বছর নানা দেশ ঘুরে ঘুরে প্রচুর মেহনত করে চেষ্টা করেছেন, এ দেশটাকে আবার পেয়ারা পাকিস্তানে ফেরত নেয়া যায় কিনা। এসবে কোন ভুল আছে কি? একাত্তরে এমন অনেক গাদ্দার, কুলাঙ্গার প্রকৃতির লোকজন বাংলাদেশের বিরোধিতা করলেও পরে তাদের অনেকে ভুল স্বীকার করে বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। শধুমাত্র এই একটি দল জামায়াতে ইসলামী ছাড়া।
এদের পালের গোদার নাম গোলাম আযম। চিফ অব স্টাফ। মুখ্য যুদ্ধাপরাধী। বাংলাদেশের শহীদ পরিবারগুলোর প্রাণের দাবিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন দেশে হচ্ছে। এই বিচারের অংশ হিসাবেই গোলাম আযমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই কিছুদিন আগেও সে ইন্টারভ্যু দিয়ে বলেছে, এসবকে সে পরোয়া করেনা। উল্টো হুমকির সুরে বলেছে, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত! এরমানে সে কোর্টে প্রমান করতে চায় সে যুদ্ধাপরাধী না। কাজেই তার নামে গাড়ি, তাও পুলিশের গাড়ি যারা ভাঙ্গতে গেছেন তাদের দুঃসাহস দেখানোটা কি একটু অসময়ে, অপাত্রে ত্যাগ হয়ে যায়নি? তারা কি এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ঈদের আনন্দ দেখে নাই? না এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারাদেশের মানুষজন সব রাস্তায় নেমে এসেছে? এত চড়া দাগের একটি গ্রেফতার স্বত্ত্বেও যেখানে চারদলের মুরব্বি দল বিএনপি একটা বিবৃতি পর্যন্ত দেবার যে ঝুঁকি নেয়নি, এসব দেখেও কী এদের হুঁশজ্ঞান হয়না? এখন এই পুলিশের গাড়ি ভাঙ্গা, অস্ত্র খোয়ার ঘটনার ৪-৫ শ’ লোকের বিরুদ্ধে যে মুখস্ত মামলা হয়েছে এখন তা সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোরও কত কিসিমের পেরেশানি চলবে? দেশের মানুষের বিপক্ষে সত্যের বিপক্ষে যে যাবে তিনি-তারা নিজেদের যত চালাক-পন্ডিত ভাবুন না কেন, এমন পেরেশানি তাদের চলতেই থাকবে। সবার বক্তব্য, চেহারা, লেখা মনিটর করছে দেশের মানুষ।
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় ১১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১২