ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

গান্ধীজিকে কবিগুরুর লেবুর সরবত ও মমতার ইতিহাস জ্ঞান

অরিন্দম চ্যাটার্জি, বাংলানিউজ পাঠক, কলকাতা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১২
গান্ধীজিকে কবিগুরুর  লেবুর সরবত ও মমতার ইতিহাস জ্ঞান

মঙ্গলবার বাংলানিউজে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে নিউজরুম এডিটর কল্লোল কর্মকারের লেখাটি পড়লাম। আমি বাংলানিউজের নিয়মিত পাঠক।

তাই এ লেখা।

শ্রী কর্মকার দিদির এই ধরণের উক্তিতে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। এটা নতুন নয়। আমরা যারা নিয়মিতভাবে তাকে টিভিতে বা সংবাদপত্রে পাঠক হিসাবে ফেস করি, এ ধরণের মন্তব্য শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।

বাম আমলে বিগত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি কলকাতার স্টার আনন্দ চ্যানেলে লাইভ অনুষ্ঠানে বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন দেশ জুড়ে চলছে ধর্মের নামে দাঙ্গা। এর প্রতিবাদে কলকাতার বেলেঘাটায় মহাত্মা গান্ধী আমরণ অনশন করছেন। উদ্বিগ্ন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছুটে এলেন গান্ধীজির কাছে। তার অনুরোধে গান্ধীজি অনশন ভঙ্গ করলেন। কবিগুরুর হাত থেকে লেবুর জল খেয়ে। কবি গেয়ে উঠলেন- বাংলার মাটি, বাংলার জল .... পূণ্য হউক এ ভগবান। ’

সেদিন সমগ্র কলকাতার মানুষ ইতিহাস ভুলে গিয়ে ভাবলেন- ৭ আগস্ট ১৯৪১ নয়, কবির মৃত্যু হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতার পর। অন্তত দিদি তাই মনে করেন।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দিদির এই ইতিহাস বোধ আরো শানিত হয়েছে। কলকাতায় কয়েক দিন আগে সাওতাল বিদ্রোহের স্মৃতিতে হুল উৎসবে রাজ্য সরকার আয়োজিত কলকাতার সিধু-কানু ডহরের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বামফ্রন্ট সরকার সিধু-কানু ও ডহর বাবুদের পরিবারের জন্য কিছুই করেনি। এবার আমরা সিধু বাবু ও কানু বাবুর পরিবারের সদস্যদের এখানে হাজির করেছি। কিন্তু ডহর বাবুর পরিবারের লোকজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরের বার আমি অবশ্যই তাদের পরিবারকে হাজির করব।

সাওতাল বিদ্রোহের অমর শহীদ সিধু ও কানু এটা আমরা জানি, কিন্তু সেদিন নতুন করে জানতে হল ডহর বাবুর কথা। সাওতালি ভাষায় যদিও ডহর শব্দের অর্থ ‘সড়ক’। নিশ্চয় ইতিহাসবিদরা পরবর্তীতে সাওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস লেখার সময় দিদির কথা মতো ভুল শুধরে নেবেন।

অনেক নতুন ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা আমরা শিখেছি এই ক’বছরে দিদির কাছে। যা বলতে গেলে একটা গোটা বই হয়ে যাবে।

তবে যেটা না বলে পারছি না। এই কদিন আগে কবিগুরুর সার্ধশততম জন্মবর্ষ উপলক্ষে রাজ্য সরকারের প্রকাশিত রবীন্দ্র রচনাবলীর উদ্বোধনে তিনি বলেন, ‘আমরা সব ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশ করব। ‘জারোয়া ভাষায় ’রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশ করতে চলেছি আমরা।

ছোটবেলায় পড়েছিলাম আন্দামানের একটি ছোট্ট দ্বীপে কয়েকজন আদিম মানুষ থাকেন। যারা সভ্যতার আলো গ্রহণ করতে চান না। তাদের নাম জারোয়া। এদের ভাষা তো দূরের কথা এদের জীবনযাত্রা সমন্ধে এখনও গবেষণা চলছে। সেই ভাষায় রবীন্দ্রনাথ!

মনে পড়েছে, গ্রিক বীর আলেকজান্ডার এদেশে এসে হযতো এরকম কিছু মানুষের সংস্পর্শে আসার পরই তার মন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘সত্যিই কী বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।