ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে মিডিয়ার বক্তব্যগুলো কি বাড়াবাড়ি হচ্ছে না? জানি না পাঠকের কাছে কি মনে হচ্ছে। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, পাঠককে পাত্তা দিয়ে খুব একটা লিখা হচ্ছে- তা বোধ হয় না।
বলাটাই স্বাভাবিক।
তবে উভয়ের বলা বেশি বেশি হলে আরো বিপজ্জনক কিছু হতে পারে, এটা কি তারা বোঝেন?
সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে বলে বিএনপি খুশি হয়েছে। অনেক মিডিয়া একথাটা হলফ করে বলছে। জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা বাংলানিউজে ফজলুল বাড়ি যা লিখছেন তা অনেকটা সরকারকে উসকে দেয়া বা একপক্ষকে ইচ্ছে করে দোষী বানানোর চেষ্টা বলে পাঠক হিসেবে আমার কাছে মনে হচ্ছে।
তিনি লিখেছেন, ‘অভ্যুত্থান ব্যর্থ করায় সেনাবাহিনীর প্রশংসা নেই! এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনও কথা নেই বিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়ার! ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর শেখ হাসিনাকে দেখতে সুধাসদনে যেতে চেয়েছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। স্বামী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া মারা যাবার পরও তাকে দেখতে সান্ত্বনা দিতে ছুটে গেছেন। কিন্তু এবার একটি সামরিক অভ্যুত্থান পণ্ড হওয়ায় যে শেখ হাসিনার জীবন বাঁচল, এতে কি তিনি খুশি হননি?
হলে তো আগের মতো দেখতে মন না চায়, অন্তত অভ্যুত্থান অপচেষ্টার নিন্দা, সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ আর হাসিনার জীবন বাঁচানোয় আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করে একটা বিবৃতি দিতে পারতেন।
ফজলুল বারীর কাছে জানতে চাই- এই অভ্যুত্থান সফল হলে খালেদা জিয়ার যে জীবননাশ হতো না- তা তিনি কি করে জানেন? তার কাছে আরো জানতে চাই- যদি ড. ওয়াজেদ সাহেবের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনার কাছে সমবেদনা জানাতে খালেদা জিয়া যেতে পারেন সেখানে শেখ হাসিনা কি তার উত্তরে এইটুকু ভদ্রতা রক্ষা করতে পারতেন না যে, সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে পর্যন্ত নিজের মুখ বন্ধ রাখতে।
পিলখানায় সেনা হত্যাকাণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়া কি রাজনীতি করতে পারতেন না? তিনি কি তা করেছেন? সুযোগটা কাজে লাগাতে খালেদা জিয়াকে কি কেউ প্রলুব্ধ করেনি? আমরা যারা সংবাদের সাথে কাজ করি তারা অনেক কিছু উপলব্ধি করেছি। সেই সময়টা কিসের মধ্যে দিয়ে পার করেছে দেশ, হয়তো অনেকেই ভুলে যাননি। এই সুযোগ কি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিত? এমন প্রশ্ন কিন্তু পাল্টা করা যায়!
বিভিন্ন পত্রিকায় দেখেছি অভ্যুত্থান চেষ্টার সাথে তারেক রহমানও জড়িত। আমার প্রশ্ন, আমরা সাংবাদিক বলে লিখে যাচ্ছি আর মানুষ বোকার মত বিষয়টি খাচ্ছে- তাই কি এরকম করা হচ্ছে? একটা ঘটনার নায়ক-নায়িকা কারা সব যদি সরকারদলীয় নেতারা জানেন তবে অপরাধী কেন শাস্তি পাচ্ছে না? এরকম পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের ফলে কি আসল অপরাধী আড়াল হচ্ছে না? কার স্বার্থে এই দুই দল অপরাধী আড়াল করছে সাধারণ মানুষ কিন্তু জানতে চায়। আর আমাদের বোধহয় সেই উত্তরটার জন্য কাজ করা উচিত।
ফজলুল বারী খালেদা জিয়াকে দায়ী করেছেন- কেন হাসিনাকে তিনি সমবেদনা জানাননি। সেনাবাহিনীর ব্রিফের পরের দিন শেখ হাসিনা মিডিয়াকে বলেছেন, এসব বিএনপির ষড়যন্ত্র। এমন বক্তব্যের পর সমবেদনার আর কোনো পরিবেশ থাকে কি?
সম্প্রতি রোডমার্চে খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে আইএসপিআর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কতটুকু গ্রহণযোগ্য? এটা কি পাঠকরা ভাবছে না? খালেদা জিয়ার কাজ শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানানো আর প্রধানমন্ত্রীর কাজ একটা একটা করে মামলা সতেজ করে কোর্টের বারান্দায় তাকে হাজির করা? রাস্তায় পুলিশ দিয়ে বিরোধীদল দমনে সর্বকালের রেকর্ড ভাঙ্গা? অসুস্থ্ ছেলে যাতে দেশে আসতে না পারে তার জন্য মামলাগুলো আরো সতেজ রাখার জন্য কী করছে না এই সরকার?
ফজলুল বারী সাহেবের লিখা আমি সবসময় পড়ি। আমার কাছে তাকে নিরপেক্ষ মনে হয়। কারণ, তিনি কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। কিন্তু কখনো কখনো মনে হয় তার নিরপেক্ষতার মধ্যেই আসল রহস্য লুকিয়ে আছে।
সকারদলীয় নেতার মত ফজলুল বারী লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়া ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সরকার ফেলে দেবার কথা বলেছিলেন। ’ খালেদা জিয়া এই করবেন সেই করবেন এমন কথা শুধু ডিসেম্বরেই বলেননি, বিরোধী নেতা হিসেবে তিনি অনেকবার বলেছেন, আমরা খবরের কাগজে পড়েছি, পুরো দেশবাসি পড়েছে। কেনো শুধু ডিসেম্বর নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে বিষয়টা আরো রহস্যজনক নয়কি?
একজন সাংবাদিক বা লেখকের কাজ কি ষড়যন্ত্রের ফল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা নাকি আসল সত্য উৎঘাটন করে দেশকে রক্ষা করা! আমাদের অনেক অগ্রজের দলবাজীর কারণে বোধহয় আমরা তরুণরা তা ভুলে যাচ্ছি। প্রতিটা পত্রিকার সংবাদ পড়লে এখন পাঠক ভাল করে বোঝেন কোনটা কোনদলের। এটা কি সুস্থ্য সাংবাদিকতা?
শ্রদ্ধেয় গাফ্ফার চৌধুরী ও ফজলুল বারী দু’জনই প্রবাসী লেখক। বলতে হবে অনেকের মত আমিও তাদের লিখার নাছোরবান্দা পাঠক। তবে কখনো কখনো তাদের লিখা পড়ে নিজের চোখকে অন্ধ মনে হয়। আমি যা দেখছি তা সত্য নাকি তারা দূরে বসে যা দেখছে তা সত্য?
বিতর্ক তৈরির জন্য এই লিখা নয়। চাই ধৈর্য্য ধারণ করে সত্য প্রকাশের ইচ্ছা শক্তি। দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীকে কারা বারবার সমালোচনায় ফেলছেন জাতি হিসেবে আমাদের জানতে হবে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেই দলবাজী করুক, সেনাবাহিনীর সদস্যরা কিন্তু ভালো করে জানেন- সেদিন কারা ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছিল। ষড়যন্ত্রীরা যে ভয়ে আছেন এটা আমরা উপলব্ধি করি।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দাবি- আমরা গণতন্ত্র চাই। মানুষের অধিকারহরণ করে এমন কোনো বিধান বা নিয়ম কখনো চাইনা। কিন্তু এই গণতন্ত্র রক্ষার বদলে ধ্বংসের জন্য কি আমাদের প্রধান দু’টি দল দায়ী নয়? উত্তরটা কে দেবে? আমরা আশা করতে পারিনা এই ভয়ংকর অঘটনের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে প্রধান দল দু’টি পরস্পরকে দায়ী না করে দেশকে ভাবিষ্যৎ বিপদ থেকে রক্ষার জন্য পরিকল্পিত দেশ পরিচালনায় সেতুবন্ধন তৈরি করবে?
আমরা জাতির বিবেককে বলছি বিপদে বিভাজন নয়, চাই ঐক্য। আমরা বোধহয় এমন স্বপ্ন দেখতেই পরি।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, ২৪ জানুয়ারি, ২০১২