ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ব্লগে জামায়াতিদের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা

আদিত্য আরাফাত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১২
ব্লগে জামায়াতিদের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা

ঢাকা: সীমান্তে বিএসএফ-এর নির্যাতনের প্রতিবাদে ডেস্কটপ আর ল্যাপটপ ছেড়ে ব্লগাররা নামছেন রাজপথে।

সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৭ জানুয়ারি বাণিজ্যমেলায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের কর্মসুচি নিয়েছেন ব্লগাররা।

পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসুচি পালন করবে ব্লগাররা।

শান্তিপূর্ণভাবে ব্লগাররা সীমান্তে হত্যাকান্ডসহ নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে চাইলেও জামায়াত-শিবির এ ইস্যুতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে।

বাংলাদেশের একাধিক ব্লগ সূত্রে জানা গেছে, ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিশাল আঙ্গিকে মানববন্ধনের কর্মসুচি পালন করবেন ব্লগাররা। দিন তারিখ এখনও ঠিক না হলেও ভারতীয় দূতাবাসের সামনে সীমান্তে নির্যাতনের প্রতিবাদে ব্লগাররা মানববন্ধন করবেন বলেও জানা গেছে।

সীমান্তের কাঁটাতার পার হতে পারেনি ফেলানী। বিএসএফ-এর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে কাঁটাতারেই সাড়ে চার ঘণ্টারও বেশি আটকে ছিল ১৫ বছরের এ কিশোরীর নি:স্পন্দ দেহ। গত বছরের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-কিশোরী ফেলানীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সারাদেশেই প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বিএসএফ-এর এ নির্মম হত্যাকান্ডের নিন্দা জানানো হয়। বিলেতের বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক ‘‘দ্য গার্ডিয়ান’’-এ এই বর্বরতার প্রতিবাদ জানিয়ে  সারা জাগানো কলাম লেখা হয়। সেখানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বিশ্বের সবচে নিপীড়ক সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলে উল্লেখ করা হয়।

ফেলানীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের ব্লগগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ব্লগাররা ব্লগে প্রতিবাদের পাশাপাশি ক্ষোভ জানাতে নেমে আসেন রাজপথে।

‘ফেলানী ঝুলছে না, ঝুলছে বাংলাদেশ’- এ স্লোগান এবং ফেলানীর কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশের ছবি নিয়ে মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেন ব্লগাররা। চলতিমাসের ৭ জানুয়ারি্ও ‘ফেলানী দিবস’ পালন করেছেন দেশের একঝাঁক তরুণ ব্লগার। ব্লগারদের এ আন্দোলন দেশের বাইরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরো টনক নাড়িয়ে দিয়েছে।  

ফেলানী হত্যাকান্ডের পর সম্প্রতি আরেক বাংলাদেশি যুবকের ওপর নির্যাতন ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় ব্লগজুড়ে। বিএসএফের জওয়ানেরা গত ৯ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আটরশিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানকে হাত-পা বেঁধে বিবস্ত্র করে রাইফেলের বাঁট ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটান। চলতি মাসে বাংলাদেশির ওপর বিএসএফ-এর নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপটি ভারতের বিখ্যাত টিভি চ্যানেল এনডি টিভিতে প্রচারিত হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের বিবেকবান মানুষ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো একই সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর এই ঘৃণ্য বর্বরতাকে। সামাজিক যোগাযোগ সাইটসহ বাংলাদেশের ব্লগে এ নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়।

ব্লগান্দোলন সম্পর্কে সামহোয়্যার ইন ব্লগের হেড অব অ্যালায়েন্সেস সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা বাংলানিউজকে বলেন, সচেতন এবং সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণের সত্যিকার প্রকাশ হল সীমান্ত ইস্যু নিয়ে ব্লগান্দোলন। তিনি বলেন, এ ব্লগান্দোলন মানেই ভারতের বিরোধিতা নয়। এটা সীমান্তে হত্যাকান্ড ও  নির্যাতনে বিরুদ্ধে ব্লগারদের প্রতিবাদ।

এ আন্দোলনে কারা আছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ব্লগার, যারা ইন্টারেক্টিভ, যারা সচেতন, যাদের মধ্যে স্বদেশের জন্য সত্যিকারের ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ কাজ করে তাদের নিয়ে এ আন্দোলন। ’
সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা বলেন, আমাদের এ ব্লগান্দোলন যদি জামায়াতি, জামায়াতপন্থি বা এই পর্যায়ের কেউ কোনওভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে তবে তা স্রেফ ঘৃণ্য এবং লজ্জার। ’
এসব প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই বলে জানান।
 
ব্লগার মামুন রশীদ বলেন, সাধারণত ভারতের কোনো অন্যায়-নিপীড়নের প্রতিবাদ করে সোচ্চার জনসমষ্টির পেছনে এসে হানা দেয় জামাত-শিবির সহ সাম্প্রদায়িক শক্তি। এবারও তারা তাই করছে। তিনি বলেন, উগ্র জাতীয়তাবাদ বা সাম্প্রদায়িতা থেকে নয়, মানবতার স্বার্থেই আমরা সীমান্তে নির্যাতনের প্রতিবাদস্বরুপ ভারতীয় পণ্য বয়কট করার উদ্যেগ নিয়েছি।
 
Boycott Indian product (ভারতীয় পণ্য বর্জন) নামে একটি গ্রুপ খোলা হয়েছে ফেসবুকে। যার বর্তমান সদস্য ৬,৪১৫ জন। জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগের এ গ্রুপটিই ২৭ জানুয়ারি বিকেল ৪ টায় বানিজ্য মেলায় ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসুচি নিয়েছে।
 
এ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য আশরাফ আজীজ ইশরাক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য বাণিজ্যমেলায় আগত সবাইকে দেশি পণ্য ব্যবহারে আর ভারতীয় পণ্য বর্জনে সচেতন করা। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমরা ৩টা পদ্ধতি নেব, লিফলেট, প্ল্যাকার্ড এবং টিশার্ট।

জানা গেছে, জামায়াত-শিবির চক্রের একটি ব্লগ এ ইস্যুকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকারের চেষ্টা করছে। ব্লগটির কয়েকজন ব্লগার সীমান্তে ভারতের নির্যাতনকে একাত্তর সালের পাকিস্তানিদের নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করে একের পর এক ব্লগ লিখছেন। অন্যান্য ব্লগেও জামায়াত-শিবির গোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে ভারত বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। দেশের মানুষ যাতে ভারতের প্রতি আরও ক্ষুব্ধ হয় এমন পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।

ব্লগার একরামুল হক শামীম এ সম্পর্কে বলেন, জামায়াত স্রেফ বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করছে। প্রগতিশীল ব্লগারদের এ প্রতিবাদ মানেই ভারতের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের কর্মসুচির মূল লক্ষ্য সীমান্তে নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করা। এ প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা দেশের স্বার্থেই ভারতের পণ্য বর্জন করতে চাই।

তিনি বলেন, এ নির্যাতনকে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী একাত্তর সালে পাকিস্তানীদের নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করছে। জামায়াত-শিবির চক্রের একটি ব্লগে এ ইস্যুতে সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে।

জানা গেছে সাম্প্রতিক এ ব্লগান্দোলনকে গভীর নজরদারিতে রেখেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার এক ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার স্বর্তে বলেন, এ বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। এ কর্মকর্তা জানান, এ ইস্যুতে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সরকারও তৎপর রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।