মানুষ নির্দলীয় হতে পারে কিন্তু কখনোই নিরপেক্ষ হয় না। সহজাত প্রবৃত্তিতে মানুষের কিছু না কিছুর প্রতি পক্ষপাত থাকে।
দলীয় কোনো আনুগত্যের সীমাবদ্ধ মাত্রার বাইরের মানুষজনের লেখালেখি বেশ ঝামেলার! কোনো নির্দ্দিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্বাসের-দলের বিপক্ষের লেখালেখিকে একশ্রেণীর অন্ধ অনুগত লোক চিহ্নিত করেন ভিন্ন পক্ষাবলম্বী হিসেবে। বিপরীতে অন্যপক্ষ ‘প্রতিপক্ষ ঘায়েলের’ সমর্থনে অকারণে হাত তালি দেন। বড় দুই পক্ষের কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে গেলে ‘সম্মিলিতভাবে’ লেখককে ঠেলে দেন তৃতীয় অন্য রাজনৈতিক দলীয় শিবিরে। সত্য ভাষণের জো থাকে না। নির্দলীয় লেখকরা কিন্তু নিরপেক্ষ হন না। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয়, এই দুই গূঢ় শব্দের অর্থে অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলে নির্দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির লেখাকে ‘অসম্মানিত’ করেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমিও নিরপেক্ষ নই। আমার প্রবল পক্ষপাত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার দাবিতে। দুর্নীতিবিহীন জবাবদিহিতার সরকারে। পারিবারিক ও অনুগত নেতৃত্বের বদলে দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চার কার্যকর গণতন্ত্রে। অন্য রাজনৈতিক বিশ্বাসকে সম্মানে। আইনের শাসনে। বিচারের স্বচ্ছতায়। সর্বোপরি নিখাদ দেশপ্রেমে। লেখালেখির সূত্রপাতও দেশপ্রেম।
মাঝে মধ্যে আজকাল হতাশা ভর করে কিছু পাঠকের ইমেল-মন্তব্যে। জাতীয়তাবাদী বিএনপি’র সমালোচনায় একশ্রেণীর পাঠক গায়ে ‘ভারতের দালাল-হিন্দু’ কিংবা ‘আওয়ামী’ পা-চাটা’র তকমা এঁকে দেন। আবার আওয়ামী লীগের বা সরকারের সমালোচনায় অন্য শ্রেণী ‘পাকি-ছাগু ও মৌলবাদী’ খেতাবে ভূষিত করে ফেলেন অনায়াসে। বিএনপি’র সমর্থনের সাথে ‘পাকি’দের বা আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের বা ‘হিন্দুয়ানির’ যোগসূত্রটা বোধগম্য হয় না। ‘পাকি’দের ইয়ার-দোস্ততো জামায়াতীরা। বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে জামায়াতের সমর্থনে সরব সত্যি কিন্তু তাই বলে সব বিএনপি সমর্থক ’পাকি’-মুখি নন। বিএনপি’তে পাকিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় যুদ্ধে নামা মুক্তিযোদ্ধারাও আছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতীদের প্রপাগাণ্ডায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি মাত্রই ভারতের দালাল! ‘হিন্দুয়ানি’!
এ ধরনের বাস্তবতায় ন্যায্য কথাটা সোজা সাপ্টা বলাটা আসলেই কঠিন সবার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ২৫ জানুয়ারি, ২০১২