ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

সোজাসাপটা

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১২
সোজাসাপটা

(ই-মেইল ত্রুটিজনিত কারণে পুরো লেখাটি আমাদের হাতে না আসায় এর অংশ বিশেষ গত বুধবার আপলোড হয়েছিল। এখানে সম্পূর্ণ লেখাটি প্রকাশ করা হল)

মানুষ নির্দলীয় হতে পারে কিন্তু কখনোই নিরপেক্ষ হয়না।

সহজাত প্রবৃত্তিতে মানুষের কিছু না কিছুর প্রতি পক্ষপাত থাকে। কারো থাকে শুভর প্রতি। কেউবা অশুভর জয়গানে। দেশের স্বার্থ কারো পক্ষপাতে প্রবল। কেউ কেউ ব্যক্তিস্বার্থে উজ্জ্বল।

দলীয় কোনো আনুগত্যের সীমাবদ্ধ মাত্রার বাইরের মানুষজনের লেখালেখি বেশ ঝামেলার! কোনো নির্দ্দিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্বাসের-দলের বিপক্ষের লেখালেখিকে একশ্রেণীর অন্ধ আনুগত্য চিহ্নিত করেন ভিন্ন পক্ষাবলম্বী হিসেবে। বিপরীতে অন্যপক্ষ ‘প্রতিপক্ষ ঘায়েলের’ সমর্থনে অকারণে হাত তালি দেন। বড় দুই পক্ষের কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে গেলে ‘সম্মিলিতভাবে’ লেখককে ঠেলে দেন তৃতীয় অন্য রাজনৈতিক দলীয় শিবিরে। সত্য ভাষণের জো থাকেনা। নির্দলীয় লেখকরা কিন্তু নিরপেক্ষ হন না। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয়, এই দুই গূঢ় শব্দের অর্থে অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলে নির্দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির লেখাকে ‘অসম্মান্নিত’ করেন।

ব্যক্তিগতভাবে আমিও নিরপেক্ষ নই। আমার প্রবল পক্ষপাত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার দাবিতে। দুর্নীতিবিহীন জবাবদিহিতার সরকারে। পারিবারিক ও অনুগত নেতৃত্বের বদলে দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চ্চার কার্যকর গণতন্ত্রে। অন্য রাজনৈতিক বিশ্বাসকে সম্মানে। আইনের শাসনে। বিচারের স্বচ্ছতায়। সর্বোপরি নিখাদ দেশপ্রেমে। লেখালেখির সূত্রপাতও দেশপ্রেম।

মাঝে মধ্যে আজকাল হতাশা ভর করে কিছু পাঠকের ইমেলে-মন্তব্যে। জাতীয়তাবাদী বিএনপি’র সমালোচনায় একশ্রেণীর পাঠক গায়ে ‘ভারতের দালাল-হিন্দু’ কিংবা ‘আওয়ামী ’পা-চাটা’র তকমা এঁকে দেন। আবার আওয়ামী লীগের বা সরকারের সমালোচনায় অন্যশ্রেণী ‘পাকি-ছাগু ও মৌলবাদী’ খেতাবে ভূষিত করে ফেলেন অনায়াসে। বিএনপি’র সমর্থনের সাথে ‘পাকি’দের বা আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের বা ‘হিন্দুয়ানীর’ যোগসুত্রটা বোধগম্য হয়না। ‘পাকি’দের ইয়ার-দোস্ততো জামায়াতীরা। বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে জামায়াতের সমর্থনে সরব সত্যি কিন্তু তাই বলে সব বিএনপি সমর্থকরা ’পাকি’-মূখী নন। বিএনপি’তে পাকিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় যুদ্ধে নামা মুক্তিযোদ্ধারাও আছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতীদের প্রপাগাণ্ডায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি মাত্রই ভারতের দালাল! ‘হিন্দুয়ানী’! সাধের পাকিস্তান ‘ভাংগার’ যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সাহায্য করার চল্লিশ বছর পুরোনো জামায়াতী ‘রাগ-গোস্বা’ ভারতের প্রতি।

ভারত আমাদের বৃহত্তম ও ‘দাদা’ প্রতিবেশী। কথায় কথায় ভারত ‘দাদাগিরি’ ফলায়, সীমান্তে পাখির মতো বাংলাদেশি মারে গুলীতে সত্যি কিন্তু এরসাথে আওয়ামী রাজনীতির সম্পর্কটা কি? এখন আওয়ামীরা সরকারে, গেল বিএনপি’র আমলে কী ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি মারেনি গুলীতে? তখন কি পদক্ষেপ নিয়েছিলো জাতীয়তাবাদী বিএনপি সরকার? কবে কোন কুটনৈতিককে ডেকে ধমকি-ধামকি দিয়েছে বিএনপি?

আওয়ামী রাজনীতিতে যতোটা ভারত-প্রীতি দেখি, বিএনপি’র ভারত প্রীতি তারচেয়ে শতগুণে বেশী বল্লেও ভুল বলা হবেনা। কথায় নয় কাজে ভারতীয় বন্ধুত্বের প্রমাণ দেয় বিএনপি। ভারতের সাথে আওয়ামী লীগের ‘পঁচিশ বছরের গোলামীর চুক্তির’ চেয়ে কম গংগার পানির  হিস্যা কোন সরকার অবনত মস্তকে মেনে নিয়েছিলেন? সাদামাটা উত্তর- বিএনপি সরকার। বেরুবাড়ী-তালপট্টির মতো ছিটমহল নিয়ে রাজপথে লম্ফঝম্ফ করলেও বিএনপি সরকার ভারতের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় কখনো কঠিন অবস্থান নেয়নি। আজ ভারত বাংলাদেশে যে আগ্রাসী অর্থনৈতিক শক্তিমত্তায় ঝাঁকিয়ে বসেছে তার এক ও একক  কৃতিত্ব ’হিন্দুস্থান  বিদ্বেষী’ বিএনপির রাজনৈতিক বদান্যতা ! একের পর এক ভারতীয় পণ্যকেই কেবল শুল্কমুক্ত সুবিধাদি দিয়ে বিএনপি সরকার ধন্য করেনি, সেইসাথে লাখ খানেক ভারতীয়ের আয়কর মুক্ত বাংলাদেশি চাকরির বাজার নিশ্চিত ও নিরাপদ করেছে।

অবিশ্বাস্য ঠেকলেও রাজনৈতিক কুশলতায় বিএনপি ‘হিন্দু’ নয়াদিল্লীর অনেক গভীর মিত্র। ‘আওয়ামী ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা কলকাতার ‘দাদাদের’ নেকনজরেই তুষ্ট। নয়াদিল্লীর কাছে কিছু দাবি পেশের রাজনৈতিক জোর ও সৎসাহস আওয়ামীদের মধ্যে অনুপস্থিত বলেই আওয়ামীরা ভারতের সাথে সকল দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে ভায়া কলকাতা হয়ে এগোয়।

জামায়াতীদের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা ও উস্কানিতে একদল অন্ধ প্রপাগাণ্ডা চালায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের আরেক সিকিম হবে। রাষ্ট্রধর্ম পাল্টে যাবে। মসজিদে আজান নিষিদ্ধ হবে। একই প্রপাগান্ডায় বিএনপিকে মুসলমান-সিম্প্যাথিক বানানোর উদ্যোগ দেখি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামে পরিবর্তন করে রেডিও-টিভিতে আজান চালুকারী এরশাদ কিন্তু ইসলামে নিষিদ্ধ লাম্পট্যের জন্যেই খ্যাত। আল্লাহ’র আইন প্রতিষ্ঠার ‘সংগ্রামে’ লিপ্ত রসুলের সুন্নত-মহব্বতী জামায়াতী নেতারা দিব্যি ইহুদী নাসারার স্যুট-কোটধারী নকল। বিএনপি’র রাজনৈতিক নতজানু সুবিধায় দেওয়া একচেটিয়া অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক একচ্ছত্র পাওয়া ভারত কোন দুঃখে বাংলাদেশকে নতুন সিকিম বানাতে চাইবে? থ্যাংকস টু বিএনপি এবং মরহুম সাইফুর রহমান।

‘মুসলিম বিদ্বেষী’ প্রচারণার শিকার আওয়ামী নেতৃত্বের প্রথম কুড়িজনের মধ্যে বেশির ভাগই কিন্তু পাঞ্চেগানা নামাজ আদায়কারী হাজী। বিপরীতে মুসলমানের বন্ধু বিএনপি’র শীর্ষ কুড়িজন নেতার বেশির ভাগই ‘কালো তালিকা’র নিখাদ সমঝদার। অপপ্রচারণার এই অন্ধ ও বিবেচনাহীন জোয়ারে নির্দলীয় আমরা উভয় পক্ষের গুঁতো খাই। শাখের করাতের মতো আমাদেরকে কাটে সব রাজনৈতিক দলগুলো।

দলাদলিতে মত্ত অন্ধ বিভক্তির জন্যে নয়, অপপ্রচারণা বন্ধে, গুজব-গুঞ্জন দমনে অতীতে ক্ষমতায় থাকা জাতীয় পার্টি, বিএনপি আর আওয়ামী লীগের উচিত ‘দাদা’ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অর্জন ও ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। আমরা জানতে চাই কেন ফেলানীদের মতো নিরীহ নাগরিককে হত্যার প্রতিবাদে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব ও বহিস্কার করা হয়না? বাঁধা বা দ্বিধাটা কোথায়?

বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অন্ধ ও কট্টর সমর্থকদের কাছে বিনীত অনুরোধ- আমাদের বিরুদ্ধে  বিষেদগার ও গালাগালির আগে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমাদের কথাগুলো মিথ্যে প্রমাণ করুন, গায়ের জোরে নয়। আছে কারো হিম্মত?

ইমেলঃ abid.rahman@ymail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, ২৬ জানুয়ারি, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।