‘দুদিন এক রকম ঘরে বন্দি অবস্থায়ই ছিলাম। ’৭১ সালের যুদ্ধ দেখিনি।
নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা উপজেলার কেএম কলেজের প্রভাষক রঞ্জিত কুমার মণ্ডল মুক্তিযুদ্ধের শহীদ নিতাই মণ্ডলের পুত্র। একাত্তরে রঞ্জিত হারিয়েছেন পিতাকে। তারপরও ২০০১ সালের ৯ অক্টোবর তার পরিবার ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনাকে তিনি ’৭১-এর চেয়েও নারকীয় ও বিভৎস বলে বর্ণনা করেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, ‘একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকারদের হাতেও আমরা এ রকম নির্যাতনের শিকার হইনি। ’
২০০১ সালের ১ অক্টোবর রাত থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ বছর পরে যেন দেশে এসেছিল আরেকটি ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভিনদেশি পাকিস্তানি হায়েনাদের পাশে ছিল অল্প কিছু সংখ্যক এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরেরা। আর ২০০১ এর হায়েনাদের সবাই ছিল এ দেশী। নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর পাশাপাশি একাত্তরের পরাজিত জামায়াতিদের সঙ্গে ’৭৫ পরবর্তী খুনি-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী সবগুলো অপশক্তি, যাদের মধ্যে ছিল না বিন্দুমাত্র মানবতাবোধ, তারাই সম্মিলিতভাবে হিংস্র উন্মত্ত আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্ত চেতনার বাঙালির ওপর।
এ কারণেই বোধ হয়, ত্রিশ লাখ বাঙালির প্রাণহানির একাত্তরের চেয়ে ২০০১ এর ভয়াবহতাকে অনেকের কাছেই বেশি মনে হয়েছে। নির্যাতিত প্রভাষক রঞ্জিত কুমার মণ্ডল ঘটনার ব্যাখ্যা করছিলেন এভাবে, ‘এবারের নৃশংসতা একাত্তরকে ছাড়িয়ে গেছে। কেননা, জামায়াতিরা বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমিনীদের মতো মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী চক্র আর অপশক্তিগুলো। ’
আর ৯ বছর পরে ২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা-নির্যাতন সম্পর্কিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনও একই সত্যই তুলে ধরছে। সরকারের কাছে গত বছরের ২৪ এপ্রিল দেওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পর থেকে মাত্র ১ বছর ৩ মাসে বিএনপি-জামায়াতের ২৬ হাজার নেতা-কর্মী ও মৌলবাদী ক্যাডার সন্ত্রাসী বাহিনীর ৩৬২৫টি অপরাধের নানা প্রমাণভিত্তিক তথ্য তুলে বলা হয়েছে, প্রকৃত অর্থে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধের সংখ্যা আরো ১৪ হাজার, অর্থাৎ পরিস্থিতির ভয়াবহতা ছিল আরো ৫ গুণ বেশি।
১ অক্টোবর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ওই রাত থেকেই সারা দেশের মতোই ফরিদপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে-অভিযোগে নির্বিচার নির্যাতন শুরু হয় আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষের ওপর। সন্ত্রাসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষেরা। হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, মন্দির ও ক্ষেতে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং চাঁদা দাবি ও আদায়ের সে ভয়াবহতা নেমে এসেছিল হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলের ওপরই। অনেকে পালিয়ে যান বিভিন্ন স্থানে। অনেককে চাঁদা দিয়েই এলাকায় থাকতে হয়, কেননা, চাঁদা না দিলে হত্যা বা দেশছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ ও নিরীহ-অসহায় বিবেচনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলে তুলামূলকভাবে বেশি। তাদেরকে জমি-জমা, বাড়িঘর ও এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দখল করতে নারকীয় নির্যাতন চালানো হয়। ওই সময় বাঙালির সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে মন্দির-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। নারকীয় এ নির্যাতনের প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায় সেবার সব ধরনের আলোকসজ্জা, বাদ্য-বাজনা, মাইক ব্যবহার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরতি বর্জন করে অনাড়ম্বর পূজা উদযাপন করে। পাশাপাশি পূজামণ্ডপগুলোতে কালো ব্যানার ও কালো পতাকা টানিয়ে চলে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা, স্মারকলিপি পেশ, গণঅনশন, মানববন্ধন ও নীরবে প্রতিমা বিসর্জনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি।
ভোরের কাগজের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি ও পাশাপাশি জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা(বছর খানেকের জন্য) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম সে সময়।
স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের সঙ্গে নিয়ে অন্তত মাস তিনেক আক্রান্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদী গোষ্ঠীর নির্যাতন-সন্ত্রাসের সংবাদগুলো তুলে ধরেছিলাম ভোরের কাগজ-জনকণ্ঠে। মিডিয়ার মাধ্যমে বিএনপি-জামাতের রোষাণলে বিপন্ন মানবতাকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছিলাম আমরা প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণমাধ্যমগুলোর কর্মীরা। নির্যাতনের সেসব ভয়াবহতা দেখে সাংবাদিকতার সাধারণ নির্লিপ্ততার বাইরে আসতে বাধ্য হয়ে আমরাও বিষ্ময়ে, আতঙ্কে বিমূঢ় হয়েছিলাম, ‘মানুষ মানুষের ওপর এভাবে নির্যাতন চালাতে পারে!’
১ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে রাতের অন্ধকারে মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের বোসপাড়া গ্রামের মনিশঙ্কর বোসের বাড়ির মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৬ অক্টোবর রাতে মৌলবাদীরা ফরিদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রথখোলা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও বাসস্ট্যান্ড সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা ভেঙে ফেলে। ১১ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের শেতলা মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে একদল মৌলবাদী সন্ত্রাসী নগরকান্দা উপজেলার চৌমুখা গ্রামের নমশূদ্র পাড়ার সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে মন্দিরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেখে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা ৩টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
নির্বাচনের পরদিন থেকে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর-রঘুনন্দনপুর এলাকায় কথিত সন্ত্রাস দমন কমিটি গঠন করে বিএনপি-জামায়াতিরা এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যারা নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছেন বা ভোট দিয়েছেন তাদের তালিকা করে চাঁদাবাজি, মারপিট, হামলা ও নির্যাতন চালায়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ২৭ অক্টোবর এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জীবন করকে মারাত্মকভাবে কোপায় তারা। ২৮ অক্টোবর একই কারণে ২৮ অক্টোবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ কর্মী জাকিরের। ওই সময়
অন্যদিকে ২ অক্টোবর সকাল থেকে লাঠিসোঠা ও অস্ত্রসস্ত্রসহ মধুখালী উপজেলার বাগাট বাজার ও বোসপাড়া গ্রামে নেমে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের নেতৃত্বে মৌলবাদী গোষ্ঠী। বাগাট ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের চিহ্নিত রাজাকার সালাম ফকিরের ছেলে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী কর্মী জাকির ফকিরের নেতৃত্বে ৪০ জনের বেশি বিএনপি সমর্থক এ হামলা চালায়। তারা বেছে বেছে বাগাট বাজারের আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর করে। দোকানের মালামাল লুটপাট করা হয়। এদের হাতে প্রহৃত হন বাগাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র সিকদারসহ আরো কয়েকজন। পরে এ দলটিই বাগাট বাজার সংলগ্ন বোসপাড়াসহ অন্য গ্রামগুলোতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলায়েত হোসেনের বাড়িসহ ৮টি হিন্দুবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর শেষে হুমকি-ধামকি দেয়। তারা মনিশঙ্কর বোসের একটি ঘরে আগুন দিয়ে সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই করে দেয়। পরদিন ৩ অক্টোবর সকাল থেকেই পুনরায় বিএনপি-মৌলবাদী গোষ্ঠী হুমকি দিতে শুরু করে নিরীহ গ্রামবাসীদের। এ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো এলাকাবাসী। অনেকে ভয়ে-আতঙ্কে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।
৫ অক্টোবর গভীর রাতে ভাঙ্গা বাজারের নিজের তেলের মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অতুল চন্দ্র সাহা। ৬ অক্টোবর রাতে ভাঙ্গা উপজেলারই অাজিমনগর গ্রামের এক হিন্দু পরিবারের ওপর নির্যাতনও ’৭১ এর বর্বরতাকে হার মানায়। ‘নৌকায় ভোট দেওয়ার মজা দেখাচ্ছি’ বলে রাত ৯টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের ভাই হাবি, পলাশ, মোঃ সেকেন, জামাল, এসকেন, কামাল ও টেক্কা নামক ৭ বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসী হামলা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে পরিবারটির গৃহকর্তা পেছনের দরোজা খুলে পালিয়ে যান। বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসীরা ঘরের মধ্যে জোর করে ঢুকে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় মায়ের সামনেই ওই পরিবারের কলেজ পড়ুয়া কন্যাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করতে শুরু করে। মা সন্ত্রাসীদের হাতে-পায়ে ধরে মেয়ের ইজ্জত ভিক্ষা চাইলে সন্ত্রাসীরা তাকেও বেদম মারপিট করে। রাত একটা পর্যন্ত এ পৈশাচিক নির্যাতন চালানোর পর সন্ত্রাসীরা ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটিকে বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করে এবং ভোররাতে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ির সামনে ফেলে যায়।
ওই তরুণী পরে অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে বাঁচলেও বাঁচতে পারেননি নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গি ইউনিয়নের গোয়ালপোতা গ্রামের তরুণী বিলকিস আক্তার। পুরো পরিবার নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে বিএনপি নেতা করিম মাতবরের পুত্র সৈয়দ আলী মাতবর ও তার আত্মীয় গঞ্জের খাঁ ও আকমালের নেতৃত্বে ১৬ অক্টোবর রাতভর ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভোরে বাড়ির অদূরে একটি বাঁশঝাড়ের বিলকিসের শরীরের চেয়ে কম উচ্চতার বাঁশের সঙ্গে উড়না পেচিয়ে বিলকিসের লাশ ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানো হলেও ময়না তদন্তে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার আলামত মিললে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায় এবং প্রভাবশালীরা পরিবারটিকে হুমকি দিতে থাকে। হতদরিদ্র পরিবারটির বাড়িতে কবর দেওয়ারও জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে বিলকিসের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়।
পায়ে ধরে ‘এখন থেকে বিএনপি করবো’ বলেও দুই চোখ বাঁচাতে পারেননি নগরকান্দা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী হায়দার মোল্লা। ১ অক্টোবর রাত থেকেই মাঝারদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদুজ্জামান শাহীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়ে হায়দারসহ মাঝারদিয়াসহ ৫টি গ্রামের শতাধিক পরিবারকে তাড়িয়ে দিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। দেড় মাস পর হায়দার বাড়িতে ফিরলে ১৯ নভেম্বর রাতে শাহীদ চেয়ারম্যানের ১৫/২০ জন ক্যাডার সন্ত্রাসী হামলা চালায়। প্রাণভয়ে হায়দার ঘরের চালে আত্মগোপন করলে সেখান থেকেই টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। পরে তাকে মাটিতে ফেলে চারজন হাত-পা পাড়িয়ে ধরে রাখে, একজন গলায় পা দিয়ে চেপে রাখে এবং দুজন বুকের ওপর বাঁশ চেপে রাখে। মোকো, ইউনুস ও ইলিয়াস- এই তিন সন্ত্রাসী চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে হায়দারের দুই চোখ তুলে নেয়। চোখ তোলার সময় হায়দার সন্ত্রাসীদের হাত-পা ধরে ‘এখন থেকে বিএনপি করবো’ বলে অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের মন গলেনি।
এর আগে শাহীদ চেয়ারম্যানের লোকজন মাঝারদিয়া গ্রামের পাঁচটি এলাকাসহ অাশেপাশের আরো ৪টি গ্রামের শতাধিক পরিবারকে তাড়িয়ে দিলে তারা মাঝারদিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক চেয়ারম্যান হামেদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হামেদ চেয়ারম্যানও পালিয়ে থাকতে বাধ্য হলে দীর্ঘ দু’মাস শত শত মানুষকে রেখে খাওয়ান তার স্ত্রী।
সেখানেও গ্রামের ৩ দিক থেকে হামলা চালায় কয়েক হাজার সন্ত্রাসী। ওই গ্রামে আমাদের ঢুকতে হয়েছিল পুলিশি প্রহরায়। আমরা যখন গ্রামটিতে গেলাম, তখনো চলছিলো চোরাগুপ্তা হামলা পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও। মোটরসাইকেল পাশের মাঝারদিয়া বাজারে রেখে হাটা পথে গ্রামে ঢোকার সময় গ্রামটির মুখে পাহারায় থাকা বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমাদের লক্ষ্য করে বলেছিল, ‘পুলিশ নিয়ে ঢোকা হচ্ছে, যাওয়ার সময় সাংবাদিকতার মজা টের পাইয়ে দেবো’। হুমকির মুখে চারপাশে পুলিশ পাহারায়ই বের হতে হলো ফের।
মাঝারদিয়া ব্রিজ এলাকার সম্ভ্রান্ত ইব্রাহিম মাতুববর পালিয়ে গেলে তার স্ত্রী রোমেছাও আশ্রয় নেন হামেদ চেয়ারম্যানের বাড়িতে। মাঝে একদিন তিনি বিএনপির সন্ত্রাসীদের দখলে থাকা নিজের বাড়িতে গিয়ে শিশু সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য রান্না করতে গেলে সন্ত্রাসীরা ভাতের হাড়িতে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে খাবার লুটপাট করে নিয়ে যায়।
সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের চর চাঁদপুর গ্রামে চলা এরকমই এক নির্যাতনের খবর পেয়ে অন্য একজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে ছুটে গিয়েছিলাম ওই গ্রামে। ২৭ নভেম্বর দুপুরের দিকে আমাদের মোটরসাইকেল বাজার ছাড়িয়ে চর চাঁদপুর গ্রামের পথে এগিয়ে যেতে দেখলাম, মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি খালি গায়ে কাধে গামছা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। আমাদের দেখতে পেয়েই থেমে গেলেন এবং ঘুরে দৌঁড় দিলেন যে দিক থেকে আসছিলেন, সেদিকেই। অনেক কষ্টে তাকে থামানো গেলেও থরথর করে কাঁপছিলেন তিনি। ‘আমরা তার জন্য ক্ষতিকর কেউ নই’-অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে এটুকু আশ্বস্ত করার পর জানা গেলো, তিনি হিন্দু নমশূদ্র-শীল সম্প্রদায়ের মানুষ এবং চর চাঁদপুর গ্রামের নির্যাতিত ৮টি নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিবারের একটির গৃহকর্তা। আগের দিনই তাদের ওপর নেমে এসেছিলো নারকীয় তাণ্ডব। নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন তাদের বাড়িঘরে এখনো বিদ্যমান। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদেই যাচ্ছিলেন নিকটবর্তী বাজারে।
অপরিচিত আমাদের দেখে নতুন নির্যাতনের আশঙ্কা-আতঙ্কে বাড়ির দিকে দৌঁড় দিয়েছিলেন অন্যদের খবর দিয়ে পালিয়ে রক্ষা পেতে। ২৬ নভেম্বর ভোর ৭টায় ওই হামলা শুরু হয় ‘এখন আর তোদের বাজানরা নেই- কেউ বাঁচাতে পারবে না। নমদের(হিন্দু)থাকতে দেওয়া হবে না। গাট্টি-বোঁচকা বেঁধে ওপার চলে যা’- এ হুমকি দিয়েই।
গ্রামের বিএনপি নেতা বলে দাবিদার আদেলউদ্দিন বেপারির নেতৃত্বে তার পুত্র গোলাম বেপারি, ভাই মানা বেপারি, আজগরপ প্রামাণিক, অখিল প্রামাণিক, রব বেপারি ও আক্কাস বেপারির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঠা ও মুগুর নিয়ে হামলে পড়ে বৃদ্ধ রমেশ চন্দ্র শীল, তার বৃদ্ধা স্ত্রী হামি শীল, পুত্র সুকুমার শীল, পুত্রবধূ সবিতা, কার্তিক চন্দ্র শীল, রমেশ চন্দ্র শীল, সুরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, তার স্ত্রী চারুবালা বাড়ৈ, নিতাই চন্দ্র বাড়ৈ, অনীল চন্দ্র বাড়ৈ, কাশিনাথ বাড়ৈ ও তার স্ত্রী শোভা রানী বাড়ৈসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে নির্বিচার মারধর করা হলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মহিলা ও শিশুরাও সেদিন রক্ষা পাননি। প্রাণভয়ে পাশের বাড়িতে পালালেও টেনেহিচড়ে এনে মারধর ও মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয়। বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করে সন্ত্রাসীরা।
বর্বর ওই নির্যাতনের হাত থেকে অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচাতে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন কমান্ডার রাজ্জাক মুন্সী, কালাম ও ইউনুসসহ অনেক মুসলমান প্রতিবেশী এগিয়ে এলে তারাও লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হন। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমাকে মোবাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ হুমকি দিয়েছিলেন ওই আসনের বিএনপি’র প্রার্থী এবং পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
এ ছাড়াও ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর-রঘুনন্দনপুর এলাকার পরিবহন ড্রাইভার নূরুল ইসলাম শেখ, কাঠ ব্যবসায়ী এম এ হাসান ও সোহবান শেখসহ শতাধিক মানুষ, বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া ইউনিয়নের সূর্যদিয়া গ্রামের গোবর্ধন ভট্টাচার্য, উত্তম ভট্টাচার্য, চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের দিলীপ কর, তার মা কালিদাসী কর, স্ত্রী রমা রানী, সন্ধ্যা কর, নারায়ণ সাধু, সত্য কুমার সাহা, তার পুত্র স্বরুপ কুমার সাহা, সঞ্জিব কুমার দাস, যদুনাথ চুনিয়া ও মিন্টু কুমার দত্ত, নগরকান্দা উপজেলার লস্কারদিয়া ইউনিয়নের সাকরাইল গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল ও আটাইল গ্রামের সরোয়ার মাতুব্বর, ফুলসুতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের কালিপদ মণ্ডল, পরেশ মণ্ডল, গোকুল মণ্ডল, যুধিষ্ঠির মণ্ডল, গৌরাঙ্গ মণ্ডল, সুশীল মণ্ডল ও ইয়াবলদি গ্রামের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল শেখ, ডাঙ্গি ইউনিয়নের চৌষাড়া গ্রামের মনিরুদ্দিন শেখ, হাশেম শেখ, মিজানুর রহমান, হাকিমুদ্দিন শেখ ও মোজাহার শেখ শতাধিক পরিবার, তালমা ইউনিয়নের শাকপালদিয়া গ্রামের আদেল মোল্লাসহ অসংখ্য মানুষ আহত বা মারধরের শিকার হন ওই সময়কার মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনে।
প্রায় প্রতিটি ঘটনায়ই সন্ত্রাসীরা নির্যাতনের ঘটনা পুলিশে বা অন্য কাউকে না জানাতে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে কোনো কোনো স্থানে গেলেও নীরব ভূমিকা পালন বা সন্ত্রাসীদের সহায়তার অভিযোগ ওঠে। কেউ কেউ আরো অভিযোগ করেন, ঘটনা জানিয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি, জড়িতদের গ্রেপ্তার করেনি বা নির্যাতিতদের নিরাপত্তা দেয়নি। অনেকে লোকলজ্জা ও প্রাণের ভয়ে থানায় জানাতে বা মামলা দিতেও সাহস পাননি। নির্যাতনকারী অথবা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে-আতঙ্কে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাননি। এমনকি নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়েও ‘আমাদের ওপর কোনো হামলা বা নির্যাতন করা হচ্ছে না’ মর্মে ১১ অক্টোবর মুচলেকা প্রদান করতে বাধ্য হন বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের নির্যাতিত ১৪ হিন্দু পরিবার। প্রভাবশালীরা এ মর্মে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদনপত্র তৈরি করে জোরপূর্বক পরিবারগুলোর প্রধানদের স্বাক্ষর নিয়ে পাঠিয়ে দেন।
সবচেয়ে আতঙ্কজনক ছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক, কোনো নির্যাতন হচ্ছে না, ‘সংখ্যালঘু’ নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যা, কাল্পনিক বা অতিরঞ্জিত প্রমাণে বিএনপি-জামায়াতের উর্ধ্বতন নেতা ও সাংবাদিকদের(!) নিয়ে জেলা বা উপজেলা সদরের পুলিশ কর্মকর্তাদের রীতিমতো গাড়ি নিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে টহল দিতে দেখেছি সে সময়। দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি(!) রক্ষায় তাদের করা তদন্তে ধরা পড়ে, জেলায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে! সেসব তদন্ত প্রতিবেদন চলে যায় সরকারের শীর্ষ মহলে আর ছাপা হয় দিনকাল, সংগ্রাম, ইনকিলাবসহ তাদের সমর্থক মিডিয়ায়। অার ওইসব মিথ্যা ও কল্পকাহিনী(!)প্রচার-প্রকাশকারী সাংবাদিক অর্থাৎ আমাদের বানানো হয়, যুবলীগ কর্মী এবং সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের চক্রান্তকারী হিসেবে।
তবে সরাসরি হুমকি দিয়ে নির্যাতিতদের ঘটনা মিথ্যা বলতে বাধ্য করা, সাজানো সাক্ষী দিয়ে সাজানো তদন্ত কার্যক্রম চালানোর রিপোর্ট প্রকাশেও আমরা দেরি করিনি। আইন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও প্রকৃত সত্য ও পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি এ ‘তদন্ত জালিয়াতি’ ফাঁসে অগ্রণী ভূমিকা নেয়।
এগুলো মাত্র একটি জেলার মাত্র তিন মাসের প্রকাশ্যে আসা নির্যাতন-সন্ত্রাসের খতিয়ান, যা মানবতাকে শিউরে দেয়। আরো অসংখ্য ঘটনার কথা আমরা জানতে পারিনি। আর বিএনপি-জামায়াতের পুরো ২০০১-২০০৬ সময়কালে শুধুমাত্র ফরিদপুরেই সংঘটিত সব ঘটনা তুলে ধরতে গেলে পুরো একটি ইতিহাস বইই লিখতে হবে! সারা দেশের কথা তো বলাই বাহুল্য।
এসবও তো মানবতাবিরোধী অপরাধ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের চেয়ে এসব অপরাধ কম কিসে? বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা একাত্তরকেও হার মানিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর সরকার চূড়ান্তভাবে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করে বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিলেন। আর এবার চিহ্নিত হয়েছে ২৬ হাজার। নির্যাতনের নানা মাত্রায় এসব অপরাধী তাই যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও কম অপরাধ করেননি।
ওই সব আক্রান্ত গ্রামগুলোতে গিয়েও বার বার মনে হচ্ছিলো, একাত্তরের যুদ্ধকবলিত বাংলাদেশের পাকিস্তানি হায়েনাদের নির্যাতনের শিকার কোনো গ্রামে বুঝি অলৌকিকভাবে ঢুকে পড়েছি ৩০ বছর পরে।
শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী, আব্দুল আলীমদের একাত্তরে মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এদের প্রায় সবাইসহ চিহ্নিত আরো যুদ্ধাপরাধীরাও ২০০১ পরবর্তী মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আছেন যুদ্ধাপরাধীদের নব্য দোসর ও রক্ষার ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত বিএনপি-জামায়াত-আমিনী-মৌলবাদী-জঙ্গি চক্র।
স্বাধীনতার ৪০ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি বলেই দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিদের সিরিজ ও নানা বোমা হামলা, হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি, জেএমজেবি, হিজবুত, বাংলাভাইমার্কা মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠির উত্থান ঘটেছে। আর এসবের নেপথ্য-প্রকাশ্য স্রষ্টা যে বিএনপি’র ঘাড়ে সওয়ার হওয়া যুদ্ধাপরাধীরা-এটাও এখন ষ্পষ্ট।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি ২০০১ পরবর্তী নির্যাতন-সহিংসতারও বিচার তাই পৃথক পৃথক ট্রাইব্যুনালে শুরু হওয়া জরুরি। না হলে তারা আবারো একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বাংলাদেশকে অন্ধকারের যুগে ফিরিয়ে নেবে, যেমনটি নিয়েছিল ২০০১-২০০৬ সময়কালে।
যখন ফরিদপুরে নাট্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী ছিলাম, এ ধরনের দু:সময়ে বিপন্ন মানবতাকে রক্ষার লক্ষ্যে মানুষের মানবিকতার গুণগুলোকে জাগিয়ে তুলে প্রতিবাদে-প্রতিরোধে আর সাহসে-সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করতে জড়াতাম নানা আয়োজনে-কর্মসূচিতে। এসব আয়োজনে একটি স্লোগান-বক্তব্য রাখতাম প্রায়ই, ‘কে জাগিবে আজ, কে করিবে কাজ, কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ’
আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে-পরের সেনা ক্যু চেষ্টা, বিডিআরসহ নানা হত্যাকাণ্ড, বিএনপি-মৌলবাদী অপশক্তির সম্মিলিত সন্ত্রাস-ষড়যন্ত্র, এখনো চলমান তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা সব এক সূত্রে গাথা, যা রাষ্ট্র বা সরকারের একার পক্ষে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। ’৭৫ এর পরে অন্ধকার গর্তে লুকিয়ে থাকা বিষধর সাপেদের গর্ত থেকে বীরদর্পে বেরিয়ে এসে বার বার ছোবল দিতে দেখে আমরাও তার প্রমাণ পেয়েছি। এসব সাপেদের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে পিষে মেরে ফেলার জন্য সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সদা জাগ্রত থাকতে হবে, যেমনটি বীর বাঙালি জেগে আছে ’৭১-’৭৫ এর খুনিচক্রের বিচার চেয়ে।
৪০ বছর ধরে চলে আসা বাংলা জননীর লাজ-কলঙ্ক ঘুচাতে কে কে নয়, সবাইই তাই জাগবেই, জাগতেই হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১২