সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বর্তমানে জোট সরাকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, ক্ষমাতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান মুখপাত্র এবং বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র। যার এত গুণ, এত পরিচয়, তিনি কেন এত অসহায়? দেশের মান মর্যদা আর মানুষের আবেগঘনিষ্ঠ বিষয়ে তাঁর কেন এত পাশ কাটানো মানিসকতা আর নির্লিপ্ততা!
সৈয়দ আশরাফ সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়ে ২০শে জানুয়ারি বলেছেন, ‘সীমান্তে যা কিছু ঘটছে, তা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়।
বাংলাদেশি যুবক হাবিবুরকে উলঙ্গ করে নির্যাতন করার ফুটেজ ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভিতে প্রচার হওয়ার পরে খোদ ভারতের বিভিন্ন মহল ও শক্তিশালী দৈনিক ‘দি হিন্দু’ ভারত সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছে। ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর রুল জারি করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ও হিউম্যান রাইট্স এ ঘটনার বিচার দিইব করেছে। সেখানে কী না আমাদের মন্ত্রী বাহাদুর ও ক্ষমাতাসীন আওয়ামীলীগের মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফ বললেন, ‘সীমান্তে যা ঘটছে, তা নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়!’ কি বিচিত্র বাণী!
কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী যাই বলুন, আমরা তো মনে করি সরকার অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। কারণ, আর কোনও কারণে না হলেও বিষয়টি আগামী নির্বাচনে ভোটের হিসাবে খুব ছোট প্রভাব ফেলবে বলে তো মনে হয় না।
যে কোনো দেশের সীমান্ত সে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক। আমাদের সীমান্ত অধিকার যখন লংঘিত হয়, তথাকথিত বন্ধু ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে যখন আমাদের জনগণের অসহায় অন্যায় মৃত্যু হয়, বিএসএফের প্রত্যক্ষ্ সহযোগিতায় যখন ভারতীয়রা আমার দেশের ফসল কেটে নেয়, বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে, হাবিবুরকে উলঙ্গ করে বিশেষ অংগে পেটায়, তখন সরকারি দলের মুখপাত্রের মুখে ‘সরকার চিন্তিত নয়’ এমন বক্তব্য শুনলে মনে হয় না আমরা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক।
সবচেয়ে মজার বিষয় আমাদের বন্ধু ভারতের চির শত্রু পাকিস্তান সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ এত মানুষ খুন করে না, বাংলাদেশ সীমান্তে যত মানুষ খুন করে গুলি করাসহ নানান নির্মম পন্থায়। কারণ, পরিস্কার- পাকিস্তান সীমান্তে ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। মানছি পাকি্তান সামরিক দিকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীকরণে ভারতের থেকে খুব একটাহীনবল নয়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে যেটা মনে হয়, তা হলো- নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও বন্ধুত্বের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা সরকার কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রতিকার না করায় প্রতি সপ্তাহেই বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে সংঘাতময় ইসরাইল-প্যালেস্টাইন সীমান্তেও এত মানুষ খুন হয় না, যতটা হয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। তাও আবার এক তরফা।
বন্ধুত্বের জন্য আমাদের এক তরফা জীবন দান, বাঁধ দিয়ে নদী হত্যা, বিনা রাজস্বতে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান, কত কিছুই না করতে হচ্ছে। তার বিপরীতে আমাদের ন্যায্য হিস্যা তিস্তার পানি থেকে আমরা বঞ্চিত হবো, স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিবেশীর সমমর্যাদা পাবো না। উপরন্তু বিএসএফের সক্রিয় সহযোগিতায় ভারতীয় ফেনসিডিল আমাদের দেশে পাচার হয়ে যুব সমাজকে ধংস করছে। সব কিছু দেখে শুনে মনে হয় ভুটানের লেন্দুপ দর্জি ও সিমলার কথা। যে স্বাধীন সিমলাকে লেন্দুপ দর্জি তুলে দিয়েছিলেন ভারতের হাতে।
সৈয়দ আশরাফ গত ২ ফেব্রুয়ারি মহান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘অ্যাকসিডেন্ট ইজ অ্যাকসিডেন্ট, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করার কিছু নেই। ’ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ভালো রাস্তা, ত্রুটিমুক্ত যানবাহন, পরীক্ষিত চালক ও ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে অধিকাংশ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। ইলিয়াস কাঞ্চন ও তারানা হালিমের মতো তারকা খ্যাতির মানুষরাসহ সারা দেশের মানুষ প্রতিবাদ করছে তো ভালো রাস্তা, ত্রুটিহীন গাড়ি ও পরীক্ষিত চালকের জন্য। এই দাবিগুলিতো যুক্তি সংগত। তবে এগুলো বাস্তবায়ন করতে সমস্যা কোথায়? নাকি সৈয়দ আশরাফও বাস মালিক-শ্রমিকদের লোক হয়ে গেলেন সহকর্মী শাহজাহান খানের মতো?
সীমান্ত হত্যা বন্ধ, স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা, দুর্ঘটনা এড়ানো- কোনো কিছুতেই যেহেতু সরকারের কিছু করার নেই, দেখার মত সময় নেই, তবে আল্লাহর ওয়াস্তে পদত্যাগ করুন। তবু দেশের মানুষ অন্তত বুঝবে- আমাদের বিবেকবোধ হারিয়ে যায়নি।
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল ও ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১২