ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রসঙ্গ টিপাইমুখ : স্যালুট ভারতীয় পাহাড়ি ছাত্রদের

আহমেদ আরিফ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১২
প্রসঙ্গ টিপাইমুখ : স্যালুট ভারতীয় পাহাড়ি ছাত্রদের

যেকোনো মূল্যে বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রতিহত করার শপথ নিয়েছে ভারতের মনিপুর রাজ্যের মার (Hmar) আদিবাসীরা। পাশাপাশি তাদের স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এইচএসএ) ঘোষণা দিয়েছে টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে ঠেকানো হবে ।

(খবর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

খবরটি পড়ার পর একজন বাংলাদেশি হয়ে মনিপুরের ছাত্রদের স্যালুট না দিয়ে পারছি না । কারণ, আমাদের দেশের ছাত্র সংগঠনগুলো যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন মারামারি, নিজেদের মধ্যে কামড়া-কামড়ি করতে ব্যস্ত সেখানে মনিপুরের ছাত্র সংগঠকরা টিপাইমুখে বাঁধের প্রতিবাদে রক্ত দিতে চায় ।

কেন ভারত সবচেয়ে বেশি লাভ হবে জেনেও মনিপুরের ছাত্ররা প্রতিবাদ করছে? কারণ , টিপাইমুখ  বাঁধ হলে মনিপুরের  প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। যে কারণে হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হবে। আর তাই হাজার হাজার পরিবারের জন্য নিজেদের বুকের রক্ত দিতে প্রস্তুত যে ছাত্ররা তাদের স্যালুট না দিয়ে কি পারা যায়?

এক ফারাক্কা বাঁধের মাসুল বাংলাদেশকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে সেখানে আবার টিপাইমুখ হলে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে বাংলাদেশ। তিস্তা  একরকম পানিশূন্য হতে চলেছে । মনিপুরের ছাত্ররা যেখানে কয়েক হাজার পরিবারের জন্য নিজেদের বুকের রক্ত দিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে সেখানে টিপাইমুখ বাঁধ হলে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেজন্য আমাদের ছাত্ররা কি করছে ?

হ্যাঁ করছে, দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি, হত্যা , সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, এমনকি একজন সিদ্ধ ডিম বিক্রেতার কাছ থেকেও চাঁদাবাজি  করে এই ছাত্ররা । কিছু হলেই রাস্তায় নেমে গাড়ি  ভাঙচুর করে ।

অথচ এই ছাত্ররাই ’৫২ ও ’৭১-এ মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে বাংলা মাকে হায়েনাদের কাছ থেকে স্বাধীন করতে ঘর ছেড়েছিল । অথচ, ফারাক্কা, তিস্তা , টিপাইমুখ কিংবা তিতাসের বুকে বাঁধ এই ছাত্রদের মনে একটুও আলোড়ন তোলে না ।

সরকারি দলের ছাত্র সর্মথকরা আছে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, নিজেদের মধ্যে ভাগ নিয়ে কোপাকুপিতে ব্যস্ত আর বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলো অপেক্ষায় আছে কখন তাদের নেত্রী ক্ষমতায় আসবে কখন আবার আগের মত চুরি, চামারি, বাটপাড়ি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি করার সুযোগ আসবে ।

টিপাইমুখ  হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ । এই দেশেরই রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যেখানে দাবি করা হয় টিপাইমুখ হলে আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না  সেখানে টিপাইমুখ প্রতিহত করার ঘোষণা খোদ ভারত থেকেই এসেছে ।

‘দাদা’দের প্রতি কারো বিশেষ দুর্বলতা থাকতেই পারে; দলীয় আনুগত্যের কারণে দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলো চুপ থাকতেই পারে কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা কেন চুপ ?  লাখ  লাখ ছাত্রের মধ্যে কি সালাম, বরকত, জব্বারদের দেশপ্রেমের ১০ ভাগও নেই ? এই প্রশ্নটি সাধারণ ছাত্রদের উপরই ছেড়ে দিলাম ।

ahmedarif2011@gmail.com

বাংলাদেশ সময় : ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।