কৈশোর পাগল করা ক্রিকেটে ব্যাটিং ছিলো পছন্দের। ব্যাটিংকেই মালুম হতো ‘একমাত্র’ ক্রিকেট।
ক্লাসিক পাঁচদিনের টেস্টকে জনপ্রিয়তায় ফেলে ওয়ান ডে ও টুয়েন্টি টুয়েন্টির দাপট। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট তার স্বকীয় মহিমা খুইয়ে বসেনি। টেস্ট ক্রিকেটের খেলোয়াড় আর দর্শক দু’জনেরই লাগে দীর্ঘ পাঁচদিনের কাঙ্ক্ষিত ধৈর্য। রাজনীতিও টেস্ট খেলার মতো ধৈর্যের। ওয়ান ডের তাড়াহুড়া কিংবা টুয়েন্টি টুয়েন্টির দ্রুততা রাজনীতিতে অনুপস্হিত। এখানে দেখেশুনে ‘বল’ খেলতে হয়। নির্বাচনে জিতে সরকার ব্যাটিংয়ে নামে বিরোধীদের বোলিং মোকাবিলায়। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংও খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সত্যটা বোঝার মতো বিচক্ষণতা রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখি না। সবাই আমাদের অপরিপক্ক কৈশোরের মতো কেবল ব্যাটিং খোঁজে!
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইনিংসের সময়সীমা পাঁচ দিনের। মহাজোটের স্পন্সর জার্সি গায়ে আওয়ামী নৌকা ২৬৬টি আসন জিতে ব্যাটিংয়ে। বিরোধী বিএনপি-জামায়াতি জার্সিধারীরা ফিল্ডিং পেয়েছে ৩৫টি আসন পাওয়ার কারণে। ফিল্ডিং অপছন্দ বিরোধী দল খুব জলদি ব্যাটিং চাচ্ছেন কিন্তু ঠিকঠাক বোলিংয়ে তাদের তীব্র অনাগ্রহ। পাঁচ বছর অপেক্ষার ধৈর্য নেই। টুয়েন্টি টুয়েন্টির তাড়াহুড়ায় ক্ষমতা বদলের ‘স্বপ্নে’ দুঃস্বপ্নেরই আশংকায় ভোগি।
রাজনীতির খেলায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ম্যাচ রেফারির মতো। গেম রুলস ঠিক করে দিতেন তত্ত্বাবধায়ক। কিন্তু ব্যাটসম্যান সরকার নিজেই তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করে নিজেরাই রুলস ঠিকঠাকে নামলেন। অসন্তুষ্ট বোলার বিরোধীরা বারবার নিস্ফল আপিলে গেলেন। রেফারি জনগণ সবকিছু বুঝেও অসহায় । তাদের ‘নির্ণয়’ দেওয়ার সময় আসবে আরো দুই বছরের প্রতীক্ষা শেষে। কিন্তু রাজনীতির খেলা বন্ধ হয়নি। কখনো হয়ও না। সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনীতির ভেন্যু হচ্ছে সংসদ। কিন্তু সেখানে খেলা বাদ দিয়ে বোলার বিরোধী দল খেলাকে টেনে নিচ্ছেন রাজপথে। আর অদ্ভুতভাবেই ব্যাটসম্যান সরকারও রাজপথেই মনোনিবেশে নেমেছেন। দুইদলের সমর্থকরা দর্শক গ্যালারি ছেড়ে লাঠিসোঁটা হাতে রাজপথের এলোপাতাড়ি ‘ক্রিকেটে’ যোগ দেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ম্যাচ রেফারি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে রাজনীতির এক ঝড়ো ইনিংস হয়ে গেলো। বোলারদের ‘রাজনৈতিক ওয়াক ওভারে’ নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হওয়া মাত্রই বিরোধী দল হুংকারে জানান দিলেন, এই নির্বাচন কমিশনারের অধীনে নির্বাচন নয়। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বিরোধী বোলাররা নিজ অবস্থানে অনড় থাকলে ব্যাটসম্যান সরকার মাথা নোয়াতে বাধ্য। কারণ, এখন বোলারদের পাওয়ার প্লে চলছে!
বোলার-ব্যাটসম্যানদের ‘গোলযোগে’ ওয়ান ইলেভেনের ‘বৃষ্টি’ রাজনীতির গণতান্ত্রিক খেলাধূলার পিচটা বদলে দিয়েছিলো। বোলিং-ব্যাটিং দুটোই দেখা দিয়েছিলো কঠিন হয়ে। দর্শক জনগণ ‘ভুলে’ ভেবেছিলেন, আগামীর রাজনীতির খেলাধুলার আগে রাজনীতিবিদেরা এই ‘বৃষ্টি’র সম্ভাবনা বিবেচনায় নেবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে মুহূর্তেই প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দল এবং তত্ত্বাবধায়ক বাতিল প্রশ্নে অনড় থেকে সরকার জানিয়ে দিলেন, এবারের ইনিংসটা দীর্ঘ হবে। দীর্ঘতর হবে। সংঘাতপূর্ণ হবে।
ইমেল: abid.rahman@ymail.com
বাংলাদেশ সময় : ০৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১২