ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

রাজনীতির এক ভুলে হয়ে যায় সর্বনাশ

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২১
রাজনীতির এক ভুলে হয়ে যায় সর্বনাশ নঈম নিজাম

‘বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও, মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে ডেকে নিও’ শ্রীকান্তের এ গানের মতো পথের সাথীকে কি চেনা যায়? মনের মাঝেতে কি দেওয়া যায় ঠাঁই? এ কঠিন ইট-পাথরের চলার পথে নানা রঙের মানুষের দেখা মেলে। সবাইকে চেনা যায় না।

হৃদয়ের গহিনে ঠাঁই দিলেও ভালোবাসার মর্যাদা সবাই ধরে রাখে না। প্রথম জীবনের স্বপ্নছোঁয়া দিনগুলো একসময় পানসে হয়ে যায়।

বাঁধনহারা পাখি দরজা খোলা দেখলেই যায় উড়ে। খাঁচায় থাকে না বন্দী হয়ে। আলো-আঁধারির গোলকধাঁধায় বাঁধা পড়ে লাভ নেই। রাতের কালো অন্ধকার শেষে ভোর ঠিকই আসে। আলোর ঝলকানিতে মুছে যায় রাতের সব দুঃস্বপ্নের চিহ্ন। আমাদের চারপাশটা বড় অদ্ভুত। আবেগহীনতার যুগে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। আগুন ঝলকানো ভালোবাসা একসময় সান্ধ্যপ্রদীপের তেল ফুরানোর মতো শেষ হয়ে যায়। শুধু পোড়া দহনের ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয়। পুরনো স্মৃতিগুলো ঘুরেফিরে আসে কষ্ট হয়ে। তার পরও আমরা বারবার সঠিক ঠিকানা খুঁজে বেড়াই। চিনতে পারি না আপনারে। ভালোবাসার মানুষ ও স্বার্থহীন বন্ধু বাছতে বাছতে একটা জীবন কেটে যায়। জীবনের সৌন্দর্যটুকু দেখা হয় না। লড়াই করতে করতে ভিতর ক্ষয়ে গেলেও বলার থাকে না কিছুই।

বঙ্গবন্ধু একটা জীবন কাটিয়ে দিলেন মোশতাকের মতো নষ্ট, ভন্ডকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে, তাকে পাশে রেখে। কিন্তু তাকে চিনতে পারেননি। এমনকি বঙ্গবন্ধু জেনেও যেতে পারেননি তাঁর সর্বনাশের আড়ালের মানুষটির নাম খন্দকার মোশতাক। বঙ্গবন্ধুর পিতার মৃত্যুর পর মোশতাকই বেশি কেঁদেছিলেন। লাশ দাফন থেকে শুরু করে সব কাজেই ছিলেন এগিয়ে। খুনি মেজর ডালিম নিয়মিত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যেতেন। সঙ্গে থাকতেন তার স্ত্রী নিম্মি। বেগম মুজিব তাদের আদর করে ভাত খাওয়াতেন। সেই ডালিম ১৫ আগস্ট ঘোষণা দিলেন বেগম মুজিবকে হত্যার। দুনিয়ায় বিশ্বাস শব্দটা বড় কঠিন। সবাই এ বিশ্বাস রাখতে পারে না। সারা দুনিয়ার রাজনৈতিক সরকারগুলো ক্ষমতায় আসে দলীয় কর্মীদের শ্রম-ঘামে। ক্ষমতায় বসার পর সবকিছু চলে যায় রাজনৈতিক কর্মীদের বাইরে। আমলাকুল, কামলাকুল, হাইব্রিডকুল তৈরি হয়। তাদের হাতেই সব সর্বনাশ হয়ে যায়। কেউ টের পায় না। যখন পায় তখন আর কিছুই করার থাকে না। রাজনীতির জগৎটাই জটিল। ক্ষমতার আকাশছোঁয়া চেয়ার বাস্তবতাকে আড়াল করে রাখে।

ক্ষমতার আকাশ থেকে মাটি দেখা যায় না। একটা অহংকারের ভাব তৈরি করে। তখনই কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, সমন্বয়হীনতায় সর্বনাশ হয়ে যায়। একবার ভুল হলে সে চক্রবাঁকে কাটিয়ে দিতে হয় বাকি জীবন। ভারতীয় কংগ্রেসের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল রাজনীতি থেকে সরকারকে দূরে সরিয়ে রাখা। রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার বাইরে রাখা। অরাজনীতিকদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে বসানো। মনমোহন সিংয়ের স্থলে প্রণব মুখার্জির নাম ছিল প্রধানমন্ত্রীর তালিকায়। সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী ঠিক করলেন সরকারকে তাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে রাখবেন। অভিজ্ঞ পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ প্রণব মুখার্জিকে মন্ত্রিসভায় রাখবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী করবেন না। প্রণব দুই মেয়াদে অর্থ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। শেষ মেয়াদে তাঁকে করা হলো রাষ্ট্রপতি। ভারতজুড়ে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের কাছে প্রণব মুখার্জির আলাদা অবস্থান ছিল। মর্যাদা ছিল। তিনি রাজনীতিটা ভালো বুঝতেন। যে কোনো পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে পারতেন। তাঁকে বলা হতো গুড ক্রাইসিস ম্যানেজার। ইন্দিরা গান্ধী লাইমলাইটে নিয়ে আসেন প্রণবকে। রাহুলের সঙ্গে রাজনীতি করতে গিয়ে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তার পরও ঘুরেফিরে কংগ্রেসেই ছিলেন। পররাষ্ট্র, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। ভারতীয় রাজনীতিতে রাষ্ট্রপতি কোনোভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে পারেন না। রাজনীতি করেন না। প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি করেন। মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হলেও কোনো ধরনের রাজনীতির সাতেপাঁচে ছিলেন না। তিনি দিন কাটিয়েছেন সরকার নিয়ে। ব্যস্ত ছিলেন ভারতীয় অর্থনীতিকে নতুন মাত্রায় নিতে। মনমোহনকে আনা হয়েছিল প্রণবকে ঠেকাতে। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। সেই এক ভুলে কংগ্রেস আজ ভারতীয় রাজনীতিতে কঠিন এক পরিস্থিতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালে সরকারের সঙ্গে দলের বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। যার খেসারতে বিজেপির উত্থান। বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারছে না কংগ্রেস। বিজেপির বিপক্ষে তৃণমূলে মানুষের আস্থা বাড়ছে। কংগ্রেস হারিয়েছে ঐতিহ্য ধরে রাখার রীতি।

প্রণব মুখার্জির পুত্র অভিজিৎ কংগ্রেস ছাড়লেন। যোগ দিলেন তৃণমূলে। ফোন করেছিলাম তাঁকে। জানতে চাইলাম বাবার আদর্শের বাইরে চলে গেলেন না তো? জবাবে বললেন, ‘মোটেও না। বাবার আদর্শের ভিতরেই আছি। এক কংগ্রেস ছেড়ে এলাম আরেক কংগ্রেসে। সমস্যা দেখি না। দুই দলের আদর্শ একই। এ মুহুর্তে গেরুয়া শিবিরের পতন একমাত্র দিদিকে দিয়েই হতে পারে। তাই যোগ দিয়েছি। ’ অভিজিৎ আরও বললেন, ‘অসাম্প্রদায়িক অবস্থান দুই কংগ্রেসেই রয়েছে। বিজেপিকে থামাতে হলে তেমন শক্তির প্রয়োজন যা আছে মমতা ব্যানার্জির। ’ শুধু অভিজিৎ নন, প্রতিদিনই দলবদল চলছে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের রাজনীতিতে। প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি সর্বশেষ কংগ্রেস ছাড়লেন। ফোনে তাঁর সঙ্গেও কথা হলো। জানালেন, রাজনীতিকে বিদায় দিয়েছেন। আর রাজনীতি করবেন না। বললাম, বাবার আদর্শ ধরে রাখবেন না? জবাবে বললেন, ‘রাজনীতি না করেও মানুষের সেবা করা যায়। মানুষের জন্য কাজ করা যায়। প্রণব মুখার্জি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাজ করব। ’ জানতে চাইলাম দল ছাড়ার সময় সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কথা হয়েছিল কি না? জবাবে বললেন, ‘কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিও। আমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’ তিনি আরও বললেন, ‘আমি মনে হয় মায়ের ধাঁচটা পেয়েছি। মা গান করতেন। ছবি আঁকতেন। রাজনীতি আমার জন্য না। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকে আমি রাজনীতি করিনি। যারা ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করছে তাদের কথা হয়তো আলাদা। ’ আরও বললেন, ‘মানুষ রাজনীতিটা করে সেবা করার জন্য। রাজনীতি না করেও মানুষের সেবা করা যায়। আমি তা-ই করব। বাবার আদর্শ ধরে রাখব। বাবার নামের ফাউন্ডেশনটা শক্তিশালী করব। ’

শর্মিষ্ঠার শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা চমকই ছিল দিল্লির রাজনীতিতে। কংগ্রেসে থেকে ভোট করেছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে এসেছিলেন দ্রুত সময়ে। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে দিলেন। এভাবে সবাই পারে না, করেও না। অনেকে দলবদল করেন। গোয়ার সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে দেখলাম কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিলেন তৃণমূলে। তাঁরই পথ অনুসরণ করেছেন বাবুল সুপ্রিয়। দারুণ গান করেন বাবুল সুপ্রিয়। এমপি হওয়ার পরও ঢাকা এসেছিলেন। গান করেছেন ঢাকা ক্লাবে। তাঁর গান শুনেছি। দরাজ গলায় গান। মনে হয়েছে রাজনীতিটা না করলেই পারতেন। কিন্তু বিজেপিতে গিয়ে এমপি-মন্ত্রী হলেন। হুট করে বিজেপি ছাড়লেন। বাবুল সুপ্রিয় এখন মমতার তৃণমূলে। সমালোচনা করেন বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির। পশ্চিমবঙ্গে আজ এই দল, কাল ওই দল করা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চেহারা বদল। বামেরাও কম যান না। তাঁদের অনেকে বাম ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে! এভাবে দলবদল হতো আমাদের দেশের ফুটবলে। ফুটবলের সে ঐতিহ্য আর উত্তেজনা নেই। এ কারণে আগের মতো হইচই ফেলে দলবদলও দেখি না।

বাংলাদেশে ফুটবলের মতো রাজনীতির মাঠও এখন ঠান্ড। উদীয়মান অর্থনীতির দেশে ভোট নিয়ে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা নাকি কমে যায়। হয়তো তাই। তার পরও গত ১২ বছরে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতা ঠাঁই পেয়েছেন আওয়ামী লীগে। কিন্তু তাদের দিনকালও খুব সুবিধার যাচ্ছে না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চর্চা আলাদা। অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসে খুব বেশি ভালো করা যায় না। আর ভারত ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও আলাদা। আজ কংগ্রেসে কাল দেখি বিজেপিতে। আবার বিজেপি ছেড়ে চলে আসছেন তৃণমূলে। আমাদের সেই চর্চা নেই। গ্যাঞ্জাম লাগে অরাজনৈতিক সরকারগুলোর সময়। দিনের বেলায় গরম বক্তৃতা দিয়ে কোরবান আলী রাতে চলে গেলেন জাতীয় পার্টিতে। সিরাজুল হোসেন খান শ্রমিক আন্দোলন ডেকে সন্ধ্যায় শপথ নিয়ে মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেন। জিয়া-এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রাজনীতিবিদরা কম-বেশি কিছু পেয়েছেন। বিপাকে পড়েছেন ওয়ান-ইলেভেনের সময়। কম বিতর্কে থাকা রাজনীতিবিদদের ডেকে কথা বলতেন বিশেষ সংস্থার লোকজন। তারপর তালিকা তৈরি করতেন। সে তালিকা ধরিয়ে দিতেন ফেরদৌস আহমদ কোরেশীকে। নতুন নতুন দল গড়ার একটা হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছিল। নরসিংদীর মাঈনুদ্দিন ভূঁইয়া করতেন আলাদা তালিকা। সে তালিকা নিয়ে বৈঠক করতেন বারী-আমিনের সঙ্গে। কিন্তু বিভিন্ন গাছের ছালবাকল দিয়ে তো একটা গাছ বানানো যায় না। ছালবাকল থাকতে পারে গাছের সঙ্গে। আর রাজনীতির জন্য একজন নেতার প্রয়োজন হয়। একটি আদর্শের প্রয়োজন। সেটুকু না থাকলে কিছুই হয় না। মাঝখান থেকে কিছু মানুষের সর্বনাশ হয়ে যায়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তা-ই হয়েছিল। অনেক ইতিবাচক রাজনীতিবিদ বলি হয়েছেন ভয়ে অথবা লোভে। আবার অনেকে পরিস্থিতির শিকার।

বিএনপি নেতা মরহুম আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ভদ্রলোক ছিলেন। তাঁর বাড়িতে দলের সংস্কারপন্থিদের বৈঠক হতো। টেলিভিশনে একদিন দেখলাম বাড়ির ভিতর থেকে বের হচ্ছেন এহছানুল হক মিলন। ফোন করলাম তাঁকে। জানতে চাইলাম ঘটনা কী? জবাবে মিলন বললেন, মান্নান ভূঁইয়ার ভবনেই তাঁর বাসা। বাড়ির সামনে সাংবাদিক আর টিভি ক্যামেরার ভিড় থাকে মধ্যরাত অবধি। সকাল-সন্ধ্যায় বাড়িতে মিলনকে আসা-যাওয়া করতে হয়। আর টিভি ক্যামেরা বের হওয়া ও প্রবেশের ছবিগুলো ভালোভাবে তুলে ধরে সম্প্রচার করে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের অনেকবার বলেছি বৈঠকে যাই না। আমার বাসা এখানে। স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে বসবাস করি। তার পরও কে শোনে কার কথা। প্রতিদিনই টিভি খবরে দেখিয়ে দেয় আমাকে। এ সংবাদগুলোর খেসারত মিলনকে দিতে হয়েছে। তারেক রহমানের মুক্তির দিন তাঁর ওপর হামলা করেছিল দলের কিছু লোক। এখনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ফিরে পাননি তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের শেষ বছর রাজনীতিবিদরা বুঝে ফেলেন ঘটনা ভালো নয়। মইন উ আহমেদের রাজনীতি করার মতো ব্যক্তিত্ব নেই। আন্তর্জাতিক কমিউনিটি তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে না আর। তিনি ভারত গিয়ে প্রণব মুখার্জি ও গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই বৈঠক থেকে তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে বলা হলো। দেশে ফিরে তিনি ইউটার্ন করেন। প্রণব মুখার্জির একটি সাক্ষাৎকার একবার নিয়েছিলাম। তিনি অনেক কথা বলেছেন ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে। যা প্রকাশ করেছি প্রণব মুখার্জির জীবিত থাকাকালে। প্রণব মুখার্জি নিজের বইতেও অনেক কিছু লিখে গেছেন। পরিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের ওয়ান-ইলেভেনের অনেক ঘটনা।

ভারত সফরকালে মইন উ আহমেদ ক্ষমতা ছাড়ার ইনডেমনিটির গ্যারান্টি চেয়েছিলেন প্রণব মুখার্জির কাছে। প্রণব তাঁকে বলেছিলেন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে মইনের যাতে কিছু না হয় তা তিনি দেখবেন। মইনের কিছুই হয়নি। মইন এখন আমেরিকায় আছেন। ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছেন। আর তাঁর দিকে তাকিয়ে যারা যোগ দিলেন ওয়ান-ইলেভেনে সেই রাজনীতিবিদদের সর্বনাশ হয়ে গেছে সবার অজান্তে। শেষ বয়সে চিকিৎসা করানোর টাকাও ছিল না রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ফেরদৌস কোরেশীর। বিএনপি, আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থি নেতারা এখন ভালো নেই। অনেকে মারা গেছেন নীরব কষ্ট বুকে ধারণ করে। দলের ভিতরের সম্মানটুকুও পাননি মৃত্যুর পর। তাঁদের জানাজায় যাননি অনেক নেতা-কর্মী। আবার অনেকে টিকে আছেন তুচ্ছতাচ্ছিল্য নিয়ে। করার কিছু নেই, বলার কিছু নেই।

একসময় রাজনীতিতে তাঁদের দাপট ছিল, অবস্থান ছিল। এখন কিছুই নেই। ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে সেই গানের মতো- ‘ভুল সবই ভুল এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা, সে ভুল, সবই ভুল...। ’ চলার পথে অনেক ভুল নিয়ে থাকতে হয় আমাদের। সব ভুলের কথা প্রকাশও করা যায় না। বলা যায় না।  আবার মেনেও নেওয়া যায় না।  একটা ভুলের সঙ্গে অনেক সময় পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে হয়।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।