প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত দুই দিনের বক্তব্য আমজনতার মাঝে ব্যাপক আলোচনার খোরাক জুুগিয়েছে। একটি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের কাছে ড. ইউনূসকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করার প্রস্তাব, অপরটি বেডরুম পাহারা প্রসঙ্গ।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউরোপিয় পার্লামেন্টারি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি প্রতিনিধিদের ড. ইউনূসকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করার জন্য সুপারিশ করেন। আপতঃ দৃষ্টিতে বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হলেও প্রকৃত অর্থে বিষয়টি অস্বাভাবিক। অনেকটা মাছের মায়ের পুত্র শোকের মতো। কারণ বাজারে প্রচলিত আছে যে, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং উদ্যোগী হয়ে ড. ইউনূসকে তারই প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে হটিয়েছেন এবং ড. ইউনূসকে সুদখোর বলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিভিন্ন সভায় বক্তব্য রেখেছেন। আওলামীলীগের নেতা ও পাতি নেতারা সবাই একযোগে ইউনূসের চরিত্র হরণে তৎপর হয়েছিলেন। ড. ইউনূস যা করেছেন তাও বলেছেন, যা করেননি তাও বলেছেন। এমনকি বাংলাদেশি একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে রেখে বাঙালি নোবেল বিজয়ী হিসাবে অমর্ত্য সেনকে নিয়ে একুশের বই মেলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই প্রধানমন্ত্রীর সরব পদচারণাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তখন সবারই প্রশ্ন ছিল নিজেদের নোবেল বিজয়ীকে রেখে ধার করা বিদেশি অমর্ত্য সেনকে নিয়ে কেন প্রধানমন্ত্রীর এত বাড়াবাড়ি?
বিজ্ঞজনদের মতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সফরত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানদের কোন ভূমিকাই নেই। তাই প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশটি অনেকটা উলু বনে মুক্তো ছড়ানোর মত। অনেকের মতে ইউরোপিয়ানরা ড. ইউনুসের পক্ষে কথা বলায় প্রধানমন্ত্রী তাদের ঘায়েল করার জন্যই খোঁচা মেরে উল্লেখিত সুপারিশ করেছেন। অনেকটা এ রকম যে, “আমি না হয় ইউনূসকে পছন্দ করি না, তোমরা যেহেতু তাকে এত পছন্দ করো, তাহলে তোমরাই তাকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করে দাও না। ”
২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন “বেডরুমে কি পাহারা বসাবো?” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি বাংলাদেশের যে সংবিধানের ওপর শপথ করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাতে লেখা রয়েছে রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জানমাল হেফাজত ও নিরাপত্তা দিবে, এখন রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে আপনাকেই বেছে নিতে হবে জনগণের জানমাল হেফাজত ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য বেডরুমে পাহারা বসাবেন নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি তো আপনার সোনার ছেলেদের হাত থেকে শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া আমাদের সন্তানদেরই রক্ষা করতে পারছেন না। ঘর-বাড়ি বিক্রি করে পুজি বাজারে লগ্নি করা টাকা রক্ষা করতে পারছেন না। সীমান্তে আমাদের অধিকার রক্ষা করতে পারছেন না। ‘বন্ধু’ ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানি, ট্রানজিট ফি আদায় করতে পারছেন না। ঘরে ঘরে চাকরি, ১০ টাকা সের চাল, বিনা মূল্যে সার দিতে পারছেন না। তখন বেডরুমে পাহারা বসাবেন কি ভাবে?
আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি রাষ্ট্রপ্রধান। মহান আল্লাহর পরে আপনি আমাদের ভাগ্য বিধাতা। আপনি শপথ নিয়ে বলেছেন আপনি কারো প্রতি অনুরাগ অথবা বিরাগ পোষণ বা প্রকাশ করবেন না। সে ক্ষেত্রে আপনার মুখে আন্দোলনরত সাংবাদিকদের উপর বিরাগের বশবর্তী হয়ে বেডরুম প্রসঙ্গ তুলে আনা মোটেই শোভনীয় নয়।
আপনার অযোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ, পুলিশকে গোপালগঞ্জ বাহিনীতে পরিণত করা, থানায় থানায় আওয়ামী নেতৃবৃন্দের অযাচিত হস্তক্ষেপ যে দেশের আইন শৃংখলার চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে দিয়েছে, সেই ব্যর্থতার দায়ভার আপনি কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না। বেডরুম প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্যই প্রমাণ করে আইন শৃংখলার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই। থাকলে এতদিনে সাগর-রুনির হত্যাকারী গ্রেফতার হতো আর আপনাকেও বেডরুম প্রসঙ্গে কথা বলতে হতো না।
আমজনতা বিশ্বব্যাংক ও ইউনূস প্রসঙ্গে এতটা কর্নসান না হলেও প্রধানমন্ত্রীর বেডরুম প্রসঙ্গ নিয়ে বেশ মজেছে। সারা দেশের মানুষের প্রশ্ন যখন সারা দেশে, সব বিষয়ে, চারদিকে এত হাহাকার তখন প্রধানমন্ত্রীর মতো সর্বোচ্চ আসনে বসা ব্যক্তির মুখে বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে আমাদের নিরাপত্তা সব কিছুতেই অসংযত বক্তব্য আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের গন্তব্য কোথায়?
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল, ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।