অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির ক্ষমতার কাইজ্যায় দলীয় ভোটাভুটিতে বিপুলভাবে জিতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। নেতৃ্ত্ব প্রশ্নে লেবার পার্টির নীতি নির্ধারণী ককাসের ভোটাভুটিতে জুলিয়া তার প্রতিদ্বন্দ্বী পদত্যাগকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেভিন রাডকে ৭১-৩১ ভোটে পরাস্ত করেন।
জনমত জরিপগুলোতে সোমবারও দেখানো হয়েছে দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ানের কেভিন রাডকেই পছন্দ। অতএব ককাসে জুলিয়া জিতলেও জনগণের মনে এগিয়ে রয়েছেন রাড।
উল্লেখ্য, কেভিন রাডের নেতৃ্ত্বে লেবার পার্টি ২০০৭ সালের নির্বাচনে প্রতিপক্ষ জন হাওয়ার্ডের নেতৃ্ত্বাধীন লিবারেল কোয়ালিশনকে পরাস্ত করে ক্ষমতায় ফিরে আসে। কিন্তু দলীয় এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাডকে নেতৃ্ত্বচ্যুত করে ক্ষমতায় আসেন জুলিয়া গিলার্ড। এরপর ২০১০ সালের নির্বাচনে পরিবেশবাদী অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনস ও স্বতন্ত্র সদস্যদের সমর্থনে জুলিয়া আবার ক্ষমতা ধরে রাখেন। কেভিন রাডকে নতুন কেবিনেটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী করলেও ক্ষমতার নেপথ্যের গোলমাল থেমে যায়নি। এ নিয়ে প্রায় নানা মুখরোচক খবর সৃষ্টি হয় মিডিয়ায়।
এমন এক পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন সফররত রাড গত সপ্তাহে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জুলিয়ার নেতৃ্ত্ব চ্যালেঞ্জ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে রাড উল্লেখ করেন, জুলিয়ার নেতৃ্ত্বে লেবার পার্টি ২০১৩ সালের নির্বাচনে টনি অ্যাবোটের লিবারেল কোয়ালিশনকে পরাস্ত করতে পারবে না। ওই ঘোষণার পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার ক্লাইম্যাক্স তুঙ্গে উঠে। রাডের পদত্যাগের পর ককাসের মাধ্যমে নেতৃ্ত্বে ভোটাভুটির প্রস্তাব দেন জুলিয়া।
সোমবার সকাল থেকে টিভি চ্যানেলগুলো ক্যানবেরার ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবন থেকে ককাসের বৈঠকের নানা বিষয় লাইভ সম্প্রচার করতে থাকে। জুলিয়া ককাসে জিতবেন, এ নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু ককাসে হারার পর কেবিন রাডের ভূমিকা কী হবে, সেদিকেই ছিল সবার নজর। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির ঐতিহ্যের বাইরে যাননি রাড। ককাসের ভোটের মিডিয়ার সামনে এসে পরাজয় মেনে নিয়ে বলেন, পার্লামেন্টের একজন ব্যাকবেঞ্চার সাধারণ সদস্য হিসেবে তিনি ভূমিকা রেখে যাবেন। আগামী নির্বাচনে জুলিয়ার নেতৃ্ত্বে লেবার পার্টিকে বিজয়ী করতে কাজ করার অঙ্গীকার করেন কেবিন রাড।
ককাসের ভোটাভুটির পর মিডিয়ার সামনে এসে হাস্যোজ্জ্বল জুলিয়া বলেন, দ্য ড্রামা ইজ ওভার। রাডসহ সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কাজে আরো বেশি আত্মনিয়োগের ঘোষণা দেন জুলিয়া এরপর যথারীতি পার্লামেন্টে যোগ দেন রাড। মন্ত্রীদের সারি ছেড়ে গিয়ে বসেন সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে পেছনের সারিতে। বিরোধীদলের নেতাসহ সদস্যরা নানা টিপ্পনি কেটেও রাডের বিরুদ্ধে জুলিয়ার মুখে কোনো কথা বের করতে পারেনি। এসব আলোচনার মাঝেও প্রায় সব মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছে জনপ্রিয়তায় কেভিন রাডের এগিয়ে থাকার খবর। সব জনমত জরিপে দেখানো হয়েছে ৫৬% অস্ট্রেলিয়ানের এখনও দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জুলিয়া, বিরোধীদলের নেতা টনি অ্যাবোটের চাইতে কেভিন রাডকেই পছন্দ।
ফজলুল বারী : সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় : ১০৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১২