সাম্প্রতিক সময়ে যতো খুন হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত খুনের ঘটনা সাংবাদিক সাগর-রুনির। আমার ১৫ বছরের সংবাদপত্র পাঠক জীবনে এর আগে কোনো সাংবাদিক খুনের ঘটনা নিয়ে এতটা আলোড়ন, আলোচনা, সমালোচনা দেখিনি।
একজন সংবাদ পাঠকের দৃষ্টিকোন থেকে এটা বুঝতে পারি- একসঙ্গে দুইজন সাংবাদিক খুন, তাও আবার স্বামী-স্ত্রী হওয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ খুনের ঘটনাটি নিয়ে শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের কারণে আরো বেশি আলোচনার সুযোগ আসে।
গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রিন্ট মিডিয়ার প্রথম পাতায় যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে প্রকাশ হয়েছে সাগর-রুনির খুন সংবাদ। সরকারপন্থী বা বিরোধী দলপন্থী বলে পরিচিত সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোও নিজেদের ভেতরকার দলীয় মতাদর্শ ভুলে গিয়ে একসঙ্গে কমর্সূচি পালন করছেন।
নিঃসন্দেহে এটি একটি বেশ ভালো নজির। অন্ততঃ একটি ঘটনায় সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা নিজেদের দলীয় স্বার্থ ভুলে রাজপথে সাংবাদিকদের স্বার্থে একত্রিত হয়ে কর্মসূচি পালন করছেন।
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড প্রিন্ট মিডিয়া যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করলেও কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা হলুদ সাংবাদিকতা সাংবাদিকতাও করেছে।
এ সংবাদপত্রগুলোতে পাঠকদের কাছে সাগর-রুনি বিশেষ করে রুনি সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই নেতিবাচক বার্তাটি যে কিভাবে পাঠকদের কাছে পৌঁছেছে সেটা দেখা গেছে কয়েকটি ব্লগে, ফেসবুকে। সাগর-রুনিতো কোনো দল করত না। তারা তো মিডিয়ার প্রাণ ছিল।
যারা দর্শকের কাছে খবর পৌঁছে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের কি ‘গোপন সূত্র’, ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ সূত্রের বরাদ দিয়ে বারবার খুন না করলে হয় না?
প্রশ্নটি মিডিয়াকর্মীদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি মিডিয়াকর্মীদের কাছে আহ্বান থাকবে, সাগর-রুনির জন্য আপনারা যেভাবে দলীয় ভেদাভেদ ভুলে রাজপথে হাতে হাত ধরে নেমেছেন ঠিক একইভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাগর-রুনিকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য সাগর-রুনিকে নিয়ে সস্তা সংবাদ পরিবেশন করলে হয়তো সাময়িকভাবে পাঠক ধরে রাখা যাবে কিন্তু নিজেদের গ্রহনযোগ্যতায় ধস নামবে। কারণ এখন পাঠকের সামনে খবরের জন্য নির্দিষ্ট নয় অনেকগুলো বিকল্প মিডিয়া পাঠকের মাউসের ক্লিকেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১২