ভেবেছিলাম, এসব অপ্রিয় প্রসঙ্গ নিয়ে লিখবো না। কিন্তু লিখতেই হ’ল।
একটি নির্বাচিত সরকারকে মেয়াদ শেষের আগে ক্ষমতা থেকে সরানোর প্রধান কৌশল, যতদূর জানি রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, সংসদে সরকারের ভুল নীতি তুলোধুনো করাÑ এজন্যে ল্যাংড়া, লুলা করে দেবার দরকার কি? আর একটি কথা, ল্যাংড়া-লুলা মানুষেরা অসহায় মানুষÑ আমরা বাবা’মার কাছে শিখেছিÑ কানা-কালা-ল্যাংড়া-লুলা মানুষদের নিয়ে কথা বলতে নেই [ খালেদা জিয়ার বাবা-মা নিশ্চয়ই তাঁকে ভিন্ন কিছু শেখাননি]- এতে তাঁদের অপমান করা হয়। নিজের পায়ের মারাত্মক সমস্যা আছে এমন মানুষের মুখ থেকে এ ধরনের ‘কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য মোটেই আকাঙ্ক্ষিত নয়। আমি মনে করি, মাননীয় নেত্রীর উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।
এবার আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি উক্তি। ‘সরকারের পক্ষে কারো বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়’ সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের মতো এতো বড় একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা সম্পর্কে একি কথা প্রধানমন্ত্রীর! কি বলতে চাইলেন তিনি, কি বোঝাতে চাইলেন? প্রশ্ন হল, সরকারকে কে কবে দায়িত্ব দিয়েছে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের শয়নকক্ষ পাহারা দেবার? তবে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ‘শপথসূত্রে’ সরকারের। একদিকে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি খুবই ‘দিলদরিয়া’ মানুষ! তিনি ‘খুনি’, ‘ক্রিমিনাল’ আর ‘কুলাঙ্গার’দের একের পর এক ক্ষমা প্রদর্শন করে চলেছেন। খুনি-ক্রিমিনালদের প্রশ্রয় দেবার এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। বিগত ৪০ বছরের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের ‘ক্ষমাশিল্পে’ বর্তমান রাষ্ট্রপতির ভূমিকা অবিশ্বাস্য। তিনি এখন খুনি-ক্রিমিনালদের শেষ ভরসা। খুনিদের ক্ষমা করতে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন যে, ভবিষ্যতে না-জানি তিনি তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর খুনিকেও ক্ষমা করে দেনÑ এমন একটি আশংকা তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। এবং এর পাশাপাশি, অন্যদিকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক উক্তিতে খুনি-ক্রিমিনালদের উল্লসিত হবার কারণ তৈরি হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতির খুনের মতো একটি অত্যন্ত সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের ইনসেনসিটিভ বক্তব্য শুধু যে অশোভন তাই নয়Ñ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের অসহায়ত্ব আর চরম ব্যর্থতার প্রকট উদাহরণও বটে। মনে হচ্ছে, সদা চাটুকার পরিবেষ্টিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নন।
বাংলাদেশে অনেক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং হচ্ছে বাড়ির ভিতর। হচ্ছে বেডরুমে, বাথরুমে, বারান্দায়, ড্রয়িংরুমে, সিঁড়িতে। মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে রাতের অন্ধকারে, প্রকাশ্য দিবালোকে, রাস্তায়, খোলা মাঠে, জেলের ভিতর, হত্যা করা হচ্ছে পুলিশ-গোয়েন্দা হেফাজতে, হত্যা করা হচ্ছে বিচারাধীন অবস্থায়Ñ ক্রশফায়ার, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা চলছে নিয়মিত। ছাত্রলীগ-যুবলীগ, ছাত্রদল-যুবদল দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছে। সব জিনিসের মূল্য বাড়লেও বাংলাদেশে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। একজন মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার আমলে আনছেন না কেউ। বেডরুম-বাথরুম, সিঁড়ি-মঞ্চ, জেল-গোয়েন্দা কিংবা পুলিশ হেফাজত খুন যেখানেই সংঘটিত হোক না কেনÑ খুনিদের প্রশ্রয় না দিয়ে, অনুকম্পা বা ক্ষমা না দেখিয়ে উচিত দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
লাইসেন্সবিহীন কোনো বাসচালক কাউকে চাপা দিয়ে হত্যা করলে পরদিন পত্রিকায় দেখি দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে দায়িত্বহীন উক্তিÑ একসিডেন্ট ইজ একসিডেন্ট। এ নিয়ে এতো বাড়াবাড়ির কি আছে!
ইকবাল হাসান: কানাডা প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় ১৪৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১২