ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘অপাপনারী’ আমি নারীসাংবাদিক; এসেছি পাপের কূলে...

সুমি খান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১২
‘অপাপনারী’ আমি নারীসাংবাদিক; এসেছি পাপের কূলে...

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিলো “ওহে, অপাপপুরুষ দীনহীন আমি এসেছি পাপের কূলে, প্রভু দয়া কোরো হে ,দয়া কোরো হে ,দয়া করে লও তুলে। আমি জলের মাঝারে বাস করি, তবু তৃষায় শুকায়ে মরি।

প্রভু দয়া করো হে, দয়া করে দাও সুধায় হৃদয় ভরি। ..”

আমি  একজন মানুষ। পেশায় সামান্য একজন সংবাদকর্মী। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমি কাজ করেছি, সেখানে যারা নীতিনির্ধারকের দায়িত্বে ছিলেন এবং এখনো আছেন, তাদের অনেকের কাছে আমার প্রথম পাপ আমি নারী হয়ে এদেশে জন্মেছি, দ্বিতীয় পাপ আমি সাংবাদিকতা পেশায় দায়বদ্ধ থাকতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

মাঝে মাঝে কলম অথবা কী বোর্ডে আঙুল চালাতে গিয়েও হাত থেমে যায়। গভীর বেদনা বাজে কণ্ঠে; এক অন্ধকার থেকে আরো জমাট অন্ধকারের গহ্বর থেকে এক নারীসাংবাদিক আমি বলে উঠি, ‘ আমি কোনো পাপ করিনি। অপাপনারী আমি এসেছি পাপের কূলে। ’

আজ মহান নারীদিবস। নারী শ্রমিকদের আত্মদানের স্মৃতিতে বিশ্বজুড়ে আট মার্চ পালিত হয় দিবসটি; তাদের প্রতি আমার লাল সালাম। অচলায়তন ভাঙার কাজটি করেছিলেন জার্মানির কম্যুনিস্টনেত্রী ক্লারা জেটকিন(Clara Zetkin)ও লুইস জাইৎস (Luise Zietz)। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের জন্য ১৯১০ সালের দিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করেন জার্মান কম্যুনিস্ট নারীনেত্রী লুইস জাইৎস। আর তাতে সমর্থন দেন অপর জার্মান কম্যুনিস্ট নারীনেত্রী ক্লারা জেটকিন(Clara Zetkin)। পরে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক ব্লকের দেশগুলোতে নারীদিবস পালিত হতে থাকে। রাশিয়ায় তা দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯১৩ সালে। তার অনেক পরে ১৯৭৪ সালের দিকে জাতিসংঘ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এই দিবসটাকে প্রতিবছর পালন করা উচিত। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাসের রক্তাক্ত সেই অধ্যায়কে জানতে পারে; আর এটা শুধু নারীদের দিন নয়, বরং নারীর ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল এক সর্বজনীন দিন যা নারী-পুরুষ সবার সমঅধিকার ও সম-বিকাশের কথা বলে।    

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের পুরো পোর্টাল যেন আজ নারী দিবসকে উৎসর্গ করেছে। দেখে বেশ ভালোই লাগলো। এর প্রধান সম্পাদক আমাদের শ্রদ্ধেয় ব্যতিক্রমী সাংবাদিক-ব্যক্তিত্ব আলমগীর হোসেনের প্রতি মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। এতোদিনে অন্তত মুক্তভাবে কথা বলার একটি জায়গা তৈরি হলো। ভালো লিখছেন ফজলুল বারী ভাই, ফারজানা খান গোধুলী, শাহনাজ মুন্নী, সঞ্জীব রায়, আদিত্য আরাফাত, মাহমুদ মেনন, আমার ছোটবোন জাকিয়াসহ আরো অনেকেই। অব্যাহত থাকুক এই যাত্রা।

তবে বিভিন্ন নিউজপোর্টালসহ জাতীয় এবং চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিকে নারী দিবস নিয়ে প্রকাশিত লেখাগুলো পড়তে গিয়ে হাসি আটকাতে পারলাম না (আমি বংশগতভাবে হাসির ব্যারামে আক্রান্ত বলেই হয়তো!)। মিডিয়া হাউজগুলোর দায়িত্বশীলদের ভণ্ডামির (হিপোক্রেসি) বোধহয় কোন সীমা থাকতে নেই। আজকের দিনে তার দরকারও হয়তো নেই। তবে প্রতিবাদী মন জেগে ওঠে।

মনের ভেতর কে যেন ডাক দিয়ে বলে যায়, সৎ সাংবাদিকতায় দায়বদ্ধ থাকবার ‘অপরাধে ’(?)  মিডিয়ার ক্ষমতাসীন ‘জিম্মাদার’  সুশীল-কুশীলদের অন্যায়, হীনমন্যতা, মানসিক পীড়নের শিকার হচ্ছি যারা, তাদের কথা বলার সময় এসে গেছে। লেখার প্রচণ্ড তাগিদ অনুভব করলাম।

এই আত্মকথনের ব্যাখ্যা যে যার মতো করে করতে পারেন, (যা আমাদের সহকর্মীরা করে থাকেন) তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।

আজ এ মহান দিনে শুরু করলাম ইতিহাস বা আত্মকথন লেখা। যেকোনো সময় আমার মৃত্যু অবধারিত। আমি নিশ্চিত আমার মৃত্যুর পর আমার পরবর্তী প্রজন্মের মাধ্যমে অব্যাহত থাকবে সাংবাদিকতা জগতের অকপট উন্মোচন।

স্কুলজীবনে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা শুরু করি; সে ১৯৮৫-’৮৬ সালের কথা। ১৯৯১ সালে আমার বিয়ের পর সদ্যবিবাহিত স্ত্রীকে লেখালেখিতে দেখতে চান আলেক্স আলীম (যদিও আমার একই অনুরোধ তার প্রতি, যার এখনো কোনো গুরুত্ব নেই)। তারই  নিয়ত অনুপ্রেরণায় (এখনো আমার লেখালেখিতে তার তাগিদই বেশি) রিপোর্টিং শুরু ১৯৯৩ সালে। রক্ষণশীল ঘরের ছোটবৌ, সূর্যাস্ত থেকে মধ্যরাত অব্দি সাংসারিক কাজে বন্দি । তবু একটু মানসিক প্রশান্তির জন্যে ফাঁক বুঝে রিপোর্টিং শুরু করি আলেক্স আলীমের অনুপ্রেরণায়, বাবা ভাষাবীর সাইফুদ্দিন খানের হাত ধরে । যিনি নিজেও দৈনিক সংবাদে বেশকিছু লেখালিখি করেছেন।
দৈনিক ভোরের কাগজের স্থানীয় সাপ্তাহিক পাতা ‘চলমান চট্টগ্রামে’ কাজ করতে থাকলাম ১৯৯৩ সাল থেকে। এর আগে আজাদী,পূর্বকোণে নিয়মিত কলাম এবং প্রতিবেদন লিখেছি। আজাদীর নারীপাতার দায়িত্বে এখনো আমার বন্ধু সানজিদা মালেক। তাকে একদিন অনুরোধ করেছিলাম তার বাবা এবং আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেককে আমার কথা যেন বলে, আমি সাংবাদিকতা করতে চাই। এর ক’দিন পর সানজিদা জানায়, “আব্বুকে বলেছি, আব্বু তো কোনোভাবেই রাজী হলো না। ”  অপরাধ কি জানি না। তবে সেখানে কাজ করার ‘বিশেষ যোগ্যতা ’ দরকার, যা আমার নেই- বুঝে গেলাম। ‘চলমান চট্টগ্রামে’ কয়েকটি মূল প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে আবেদন করলাম নিয়মিত সংবাদকর্মী হিসেবে কাজে যুক্ত হবার।

সুশীল সমাজের অন্যতম ধারক-বাহক বুদ্ধিজীবীর পক্ষ থেকে এর যা জবাব পেলাম, এখনো চোখে ভাসে-কানে বাজে। বললেন, “ চট্টগ্রামে তো মেয়েদের সাংবাদিকতা করার পরিবেশ নেই। তুমি এতো পরিশ্রমী, এতো রাত পর্যন্ত কাজ করে রিপোর্ট আমার হাতে দিয়ে যাও!!.. ফ্রিল্যান্স করো, খারাপ কী?” হতোদ্যম হইনি, পূর্ণোদ্যমে কাজ করে যাই নীরবে।

এখন চট্টগ্রামে অনেক নারীসাংবাদিক, সেই বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টিতে নারীর জন্যে সাংবাদিকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে কিনা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে কোনও দায়িত্বহীন কাজ না করলেও, আমাকে সুশীল সমাজের যোগ্য কখনোই  মনে করেননি সুশীল সমাজের ধারক-বাহকেরা। সে নাহয় নাইবা হলো। কিন্তু নষ্ট সাংবাদিকদের সিন্ডিকেটবাজীর কাছে জিম্মি করা হবে কেন আমাদের?

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হতে যাচ্ছিলো দৈনিক যুগান্তর। এর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিলেন চট্টগ্রামের ব্যুরো চিফ জসীম চৌধুরী সবুজ। এজন্যে তার কাছে কৃতজ্ঞ আমি। এর এক বছরের মাথায় ২০০০ সালের নভেম্বরে এক কিশোরী গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করে চারতলা থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ ওঠে যমুনা অয়েলের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বেডে শয্যাশায়ী নির্যাতিত কিশোরীটির কোমর থেকে পা পর্যন্ত প্লাস্টার করা। ভাঙা হাড়ের প্রচণ্ড ব্যথায় কোঁকাচ্ছিলো কিশোরীটি। কয়েকজন সাংবাদিককে দেখলাম হাসপাতালে। নির্যাতিত মেয়েটির ছবি তুললেন প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক। আমার অনুরোধে এক কপি ছবি দিলেন তিনি আমাকে।

অভিযুক্ত সেই কর্মকর্তার সৌভাগ্য, তিনি দুই জাতীয় দৈনিকের দু’জন প্রভাবশালী সাংবাদিকের স্বজন। প্রেসক্লাব, সিইউজে একাট্টা হলো এই ভয়াবহ সংবাদ ধামাচাপা দেয়া হবে। আমি তৎকালীন বার্তা সম্পাদকের মোবাইলে ফোন করে পুরো পরিস্থিতি জানালাম। তিনি রিপোর্টটি পাঠাতে বলেন। সে সময়ে ব্যুরোচিফ সম্পাদকের কন্যার বিয়েতে ঢাকায় ছিলেন। তার পরবর্তী জন বামপন্থী ছাত্রনেতা বেশ গম্ভীর ভাবে বললেন , এই রিপোর্ট আপনি পাঠাবেন না ঢাকায়। পুরুষ হিসেবে তিনি দায়িত্বশীল পদে থাকলেও কাজে তিনি আমার জুনিয়ার। প্রশ্ন করলাম,“ কেন পাঠাবো না? ” কোনও জবাব দিলেন না তিনি। আমি নিজেই বার্তাসম্পাদককে পাঠিয়ে দিই সেই রিপোর্ট এবং ছবি। পরদিন ২০০০ সালের ২৫ নভেম্বর যুগান্তরের ভেতরের পাতার নিচের দিকে ছোট করে সংবাদটি প্রকাশ হয়। একই দিন সংবাদ, আজাদী, মুক্তকন্ঠ, এবং দৈনিক কর্ণফুলী নিজেদের মতো করে সংবাদটি প্রকাশ করেছে। প্রথমআলো, জনকন্ঠ এবং অন্যান্য কিছু পত্রিকার চট্টগ্রাম অফিস থেকে দায়িত্ব নিয়েই হত্যা করা হলো এই সংবাদ। আজাদী ‘জ্বীনের ধাক্কা ?’ শিরোনামে এক কলাম লিড, সংবাদ পেছনের পাতায় শেষ কলাম। দেখলাম একই ছবি ছেপেছে সবাই। অন্য তিনজন পুরুষ হবার সুবাদে বেঁচে গেলেও আমি ‘নারীসাংবাদিক’। ধর্ষণের হুমকি দিলেন প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের তখনকার একজন সিনিয়র সাংবাদিক(বর্তমানে একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার চট্টগ্রাম এক্সিকিউটিভ)। তিন দিন পর্যন্ত অবলীলায় এই হুমকি দিতে থাকলেন সেই সাংবাদিক। শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্বিগ্ন অনুরোধে আবাসিক সম্পাদককে রাতে ফোন করলাম। প্রশ্ন করলাম, তার উপস্থিতিতে তারই অফিস থেকে একজন সাংবাদিক আরেকজন সহকর্মীকে তিন দিন ধরে প্রকাশ্যে এই হুমকি কী করে দিয়ে যায়? এভাবে আর কতোদিন চলবে?  বেশ উত্তেজিত কন্ঠে তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “ তোমরাও সাংবাদিকতা শিখেছো, আমাদেরকে সাংবাদিকতা শেখাচ্ছো? একটা কাজের মেয়ে রেপড হলো কি হলো না সেটা নিয়েও রিপোর্ট করতে হয়?..”

এর পরের কথাগুলো সে অনেক বেদনার, অনেক ভয়ংকর কথা; অন্যদিন লিখবো। তবে জানিয়ে রাখি, আবাসিক সম্পাদকের প্রশ্রয় পাচ্ছে বুঝতে পেরে সুশীল সমাজের ধারক-বাহক পত্রিকাটির সম্পাদককে দু’পাতার একটি চিঠি লিখি। সঙ্গে অন্য চারটি পত্রিকায় প্রকাশিত একই সংবাদের ফটোকপি। তাতে লিখেছিলাম, এই সাংবাদিক সম্প্রতি কন্যাসন্তানের জনক হয়েছেন শুনেছি। তার কন্যার নিরাপদ ভবিষ্যৎ কামনা করি আমি। (এই চিঠির কপি এখনো আমার কাছে আছে)। অবাক ব্যাপার এরপরও প্রকাশ্যে অব্যাহত থাকে এই হুমকি।   তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

অথচ আমার বিরুদ্ধে যুগান্তর থেকে পরপর তিনবার শোক’জ করলেন ব্যুরোচিফ। বার্তা সম্পাদক কোনও দায়িত্ব নিলেন না। ইউনিয়নের ভোট হারানোর ভয় ছিলো হয়তো। তার ভোটাররা পুরুষ ছিলেন যে!

যুগান্তরের পিয়ন সিরাজ  ভাই তৃতীয়বার শোক’জ এর চিঠি এনে দরোজায় কলিংবেল দিতেই বাবা সেই চিঠির কথা জেনে গেলেন। এতোদিন জানাইনি বাবাকে। বাবা বিস্মিত হলেন। এর কারণ পরে বলা যাবে। তিনি নিজের হাতে আমার রেজিগনেশান লেটার লিখে দিলেন। সেই সাংবাদিকের উন্মত্ততায় উদ্বিগ্ন হয়ে সহকর্মী সুহৃদরা বললেন সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে। এক সময়ে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নিতে হবে, চট্টগ্রামের চার সিনিয়র এবং শীর্ষ সাংবাদিক এগিয়ে এলেন। বললেন তারা আদালতে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দেবেন। এতে ভয় পেয়ে পত্রিকার সহকারী আবাসিক সম্পাদক এই হুমকিদাতা সাংবাদিক এবং আমাদের এক বন্ধু পুলিশ কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে ক্ষমা চাইলে মামলা তুলে নিয়েছিলাম। এরপর সাক্ষীদের কটাক্ষ করে ‘রাজসাক্ষী’ ডাকতেন ধর্ষণের হুমকিদাতা নির্লজ্জ বেহায়া সেই সাংবাদিক। এতোটাই বেহায়া হয় অপরাধীরা, সম্প্রতি ফেসবুকে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেও দ্বিধা হয়নি তার।

ধর্ষকগোষ্ঠী এবং চট্টগ্রামের তৎকালীন সাংবাদিকসমাজ প্রেসক্লাবে বৈঠক করলেন। তাদের চাপে আমাকে যুগান্তরের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হলো। ২০০০ সালের নভেম্বরেই সাপ্তাহিক ২০০০ এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধির দায়িত্ব পেলাম।

সুশীল সমাজের প্রদতনিধি এই বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকদের ‘কীর্তিময়’ কিছু কথা আজ মনে পড়ছে খুব। সেই পত্রিকায় লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ক’জন সাংবাদিক নিয়োগ দেয়া হয়। কোনও এক কারণে পরীক্ষায় প্রথম স্থান পাওয়া ছাত্রটিকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় স্থান পাওয়া এক ছাত্রীকে নিয়োগ দেন দায়িত্বশীল ব্যক্তি । পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে লাশ পাওয়া গিয়েছিলো এক নারীর । তাকে নিয়ে বেশ রগরগে ‘পরকীয়া ’ র কাহিনী তুলে ধরেছিলো এই নারীসাংবাদিক তার রিপোর্টে । আরেকটি রিপোর্টের কথা মনে পড়ছে; চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার হলে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয় সেই রিপোর্ট। সেই শিক্ষকের অনেক সহকর্মীর ক্ষুব্ধ  প্রশ্ন ছিলো: পরীক্ষার হলে শ্লীলতাহারন সম্ভব কিনা। তাদের বক্তব্য, সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্ঠি এই প্রতিবেদনটি করিয়েছে। যার শাস্তি হিসেবে তাকে উত্তরবঙ্গে বদলি করা হয়। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে তাকে চলে যেতে হয়েছিলো। সেই সময়ে দৈনিক পত্রিকায় চট্টগ্রামে একমাত্র নারীসাংবাদিক হবার বিশাল কৃতিত্ব এখনো গর্বের সাথে উচ্চারণ করেন তিনি। যা লিখছিলাম, প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে সাংবাদিকতার গরবে গর্বিত এই নারীসাংবাদিক অবশ্য বিয়ের পর সেই চাকরি ছেড়ে কিছুদিন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ কর্মকর্তার চাকরি করেন। সাংবাদিকতা পাঠ্য হলেও সাংবাদিকতা তাদের ধ্যানজ্ঞান হতে হবে এমন কোনও কথা নেই। সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতাও সবার জন্যে বাধ্যতামূলক নয়। তবু তাদের চাকরি খুবই সহজলভ্য। এই অসম সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন আনন্দের বটে। তবে সততার সাথে হলে আনন্দটি নি:সন্দেহে অন্যরকম হয়!!  

নারীসাংবাদিক অথবা পুরুষ  সাংবাদিক যেই হই, আমরা যারা এই পেশাকে ধ্যান-জ্ঞান , জীবন-মরণ ভেবে অন্য পেশার সব প্রলোভন ছুড়ে ফেলে দিই, আমাদের জন্যে প্রতিটি মুহূর্ত যারা প্রতিকূল করে তুলেছে, তাদের মুখোশ খুলে দেয়ার দিন এসেছে।   কারণ এখনো  সৎকাজ তাদের সিন্ডিকেটবাজীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন অন্তত তাদের প্রতিকূলতার শিকার না হয়। তাই বন্ধুর পথের সহযাত্রী বন্ধুদের কথা বলে যাবো এভাবেই । শুরু হলো আরো বন্ধুর পথে চলা। সারা দেশে আমার যতো সহকর্মী  ভাইবোন  সৎ এবং নির্ভীক সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠার জন্যে নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাদের সবার প্রতি নিরন্তর শুভকামনা । আজকের এই মহান দিনে আসুন হাতে হাত মিলিয়ে প্রতিরোধ করি যতো অন্যায় আর নিপীড়ন।

Sumikhan29bdj@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।