মহাজোট আর চারদলীয় জোটের আগেই অবশেষে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বুকে মেঘের সমাবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হল। এই সমাবেশ ক্ষমতায় আসা-যাওয়া ও থাকার জন্য নয়।
এই সমাবেশের প্রধান আকর্ষণ মেঘ জানে না মানুষ সমাবেশ কেন করে? সমাবেশ যে ক্ষমতার জন্য অন্য কারণে নয় তা জানারও কথা নয় এই শিশুটির। সমাবেশের মানববন্ধনে দাঁড়ানো মেঘের দৃষ্টি অন্য দিকে নয়, শুধুই মায়ের ছবির দিকে। হয়তবা সে মনে করেছে এই খানে দাঁড়ালে মা-বাবাকে পাওয়া যাবে। এই অবুঝ শিশুকে কে বোঝাবে এই লাইনে দাঁড়ালে তার চাহিদা পূরণ হবে না। এই লাইন সেই লাইন নয়। এই লাইনে দাঁড়ালে আমাদের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হয় না। আমরা কেউ মেঘের মত ছিলাম না, এখনো না, হওয়ার সম্ভাবনাও বিশ্বাস করি না। আমরা চিরদিনের জন্য এসেছি। আমাদের কপালে এই শনির দশা আসবে না। তাই মেঘ নিয়ে চিন্তাও করি না। আমরা পাষাণ। আমরা ক্ষমতালোভী। চাই শুধু ক্ষমতা। আর কিছু চাই না।
১১ মার্চ। মা-বাবার অকাল মৃত্যুর এক মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। ধরা পড়েনি কোনো খুনি। কনস্টেবল থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আশ্বাস দিলেও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পিতা-মাতার খুনীদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করার জন্য মেঘের আঙ্কেলদের চেষ্টাও থেমে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এই চেষ্টাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা। মেঘ কখন বজ্রপাতের মত বাবা-মায়ের খুনীদের খুঁজে বের করবে।
একটি কথা বলা প্রয়োজন। শেষ বলতে কোনো শব্দ নেই। সব শেষের পরে একটি শেষ থাকে। কে বেশি সুন্দর তা যেমন বলা মুশকিল তেমনি কোনটি শেষ এটিও বলা কঠিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে শ্রদ্ধার সাথে বলছি, মেঘের সমাবেশ শুভ লক্ষণ নয়। মেঘ যখন মানুষের বেশে সমাবেশ করে তখন আমাদের ঐতিহ্যবাহী সমাবেশগুলো গুরুত্বহীন হয়ে যায়। রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মেঘের সমাবেশ ১২ মার্চ আর ১৪ মার্চকে অর্থহীন করে দিয়েছে। কারণ একটি সমাবেশ ক্ষমতার জন্য আর অন্যটি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। এই ক্ষেত্রে মেঘের সমাবেশ দুটো সমাবেশকে অচল করেছে এই কারণে যে মেঘের সমাবেশটি ছিল বাবা-মাকে ফিরে পাবার সমাবেশ। ১২ মার্চের সমাবেশ হল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য। ১৪ মার্চের সমাবেশ হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃবহালের দাবিতে ১২ মার্চের সমাবেশ। আদালতের নিষ্পত্তিকৃত বিষয় নিয়ে এই সমাবেশ আদালত অবমাননা করে কি না জানি না।
আবার ১৪ মার্চের সমাবেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। এই ক্ষেত্রে আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সমাবেশ আদালত অবমাননা হয় কি না এটাও জানিনা। তবে এইটুকু জেনেছি, মেঘের বাবা-মায়ের খুনীদের গ্রেফতারের জন্য লিখলে আদালত অবমাননা হবে।
মহামান্য আদালতে বিচারাধীন ও নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ে রাজনীতিকদের প্রশ্ন করা এমন কি আন্দোলন করাও আদালত অবমাননা হয় না আর মেঘের অধিকার আদায়ের দাবি গণমাধ্যমে লিখলে কেন আদালত অবমাননা হবে এই প্রশ্ন করা আদালত অবমাননা হলে প্রশ্নটিই করলাম না। তবে আশা করি বিজ্ঞ আদালত গণমাধ্যম কর্মীদের আকুতি ও মনের বাসনা বুঝতে সক্ষম হবেন কিনা কি করে বুঝব।
একজন ক্ষুদ্র মিডিয়া ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমি মেঘের কাছে ক্ষমা চাই। কারণ বাংলাদেশের সংবিধান, আইন আর জাতিসংঘের মানবাধিকার ও শিশু সনদ মেঘের অধিকার দিলেও মুখ খুলে চাইতে না পারার ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাওয়া ছাড়া বিকল্প আর কিছু নেই।
এ কে এম রিপন আনসারী
reponansary@gmail.com
বাংলাদেশ সময় ০৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১২