ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি হিসেবে ২১ বছর

সাফল্যের মহাকাশ ছোঁয়া সায়েম সোবহান আনভীর

হায়দার আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
সাফল্যের মহাকাশ ছোঁয়া সায়েম সোবহান আনভীর

দেশ ও মানুষের কল্যাণ সাধনে স্বপ্ন বুনেছিলেন দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্বপ্নদ্রষ্টা আহমেদ আকবর সোবহান। সেখান থেকে সম্ভাবনার দুর্গম গন্তব্যের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের নাটাই হাতে ধরেছিলেন তাঁর ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর।

তারপর একে একে কেটে গেছে একুশটি বছর। সেই তরুণ-তুর্কি নিজের চিহ্ন এঁকে এসেছেন সাফল্যের মোড়ে মোড়ে।

আগামীর পথে তাকিয়ে বের করে এনেছেন নতুন অমিত সম্ভাবনা। লাখো মানুষের চোখে ছড়িয়ে দিয়েছেন আলোর দিশা।

দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে আজ ১৬ সেপ্টেম্বর ২১ বছর পূর্ণ হলো তাঁর। আজকের দিনে সফল উদ্যোক্তা সায়েম সোবহান আনভীরের সাফল্যগাথা উজ্জীবিত করছে স্বপ্নবাজ তরুণদের।  

সেই ২০০১ সালের কথা। মাত্রই লন্ডনে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সাফল্যের সঙ্গে বিবিএ (ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক) সম্পন্ন করে দেশে ফিরেছেন সায়েম সোবহান আনভীর।  

তখনই বসুন্ধরা গ্রুপের বটবৃক্ষ আহমেদ আকবর সোবহান ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরের চোখে খুঁজে পেয়েছেন নিজের দেখা স্বপ্ন পূরণ করার নেশা। বিকল্প চিন্তা না করে তাই সেই ছোট্ট আনভীরের কাঁধে তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের মতো বড় শিল্প গ্রুপের গুরুদায়িত্ব। নতুন কিছু জয়ের আশায় সেদিন নতুন পথে পা রেখেছিলেন সায়েম সোবহান আনভীর।

তারপর নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর প্রমাণ করেছেন বাবার দেখা ভবিষ্যৎ। পিতার আস্থার পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে গেছেন। ব্যবসা আধুনিকীকরণের পাশাপাশি নানামুখী খাতে সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে পদে পদে রেখে গেছেন সাফল্যের চিহ্ন। তাঁর নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় বসুন্ধরা গ্রুপ হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি করেছেন অভাবিত কর্মসংস্থান। উৎপাদিত পণ্যগুলো এখন বাংলাদেশে মার্কেট-লিডার।  

অত্যন্ত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের ফলে বসুন্ধরার যে কোনো পণ্য মানুষের কাছে এখন আস্থার প্রতীক। বিদেশেও সুনামের সঙ্গে রপ্তানি হচ্ছে বহুবিদ পণ্য।  

আবাসন খাতে অত্যন্ত সুপরিচিত বসুন্ধরা গ্রুপ এখন আর এক-দুটি খাতে সীমাবদ্ধ নেই। দীর্ঘ তিন দশকের পথচলায় বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ-মাতৃকার অভূতপূর্ব উন্নয়নেও অন্যতম অংশীদার। আর, এর বিরাট অংশজুড়েই রয়েছে তরুণ-তুর্কি সায়েম সোবহান আনভীরের অসামান্য অবদান।  

বসুন্ধরা গ্রুপের বয়সের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে এর নেতৃত্ব সায়েম সোবহান আনভীরের হাতে। এই দীর্ঘ সময়ে এমডির অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় বসুন্ধরা গ্রুপ উন্মোচিত করেছে সাফল্যের বহু দুয়ার। বসুন্ধরা গ্রুপকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সায়েম সোবহান আনভীরও পেরিয়েছেন অনেক মাইলফলক।  

শুধুমাত্র ব্যবসার গণ্ডিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি সায়েম সোবহান আনভীর। গেছেন বৃত্তের বাইরে। খুঁজে ফিরেছেন দেশ ও মানুষের সত্যিকারের কল্যাণ।    একইসঙ্গে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী শক্তি তাঁকে উদ্যোক্তা হিসেবে অন্য দশজনের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে।  

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সেরা উদ্যোক্তাদের কাতারে উঠে এসেছেন তিনি।

দেশের অর্থনীতিতে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছেন সফল উদ্ভাবক সায়েম সোবহান আনভীর। দেশের তরে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন ক্লান্তিহীনভাবে, নীরবে-নিভৃতে। দেশের বাণিজ্য, ম্যানুফ্যাকাচরিং, খেলাধুলা এবং গণমাধ্যমের বিকাশ বিস্তৃত পরিসরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাঁর বহুমাত্রিক ও গতিশীল নেতৃত্ব আর অনন্য মেধায় জোরালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এসব খাতে।  

আবাসন ব্যবসার গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে শিল্প গ্রুপটি অবদান রেখে চলেছে সিমেন্ট, পেপার ও পাল্প, বিভিন্ন ধরণের টিস্যু, স্টিল, এলপি গ্যাস, খাদ্য ও পানীয়, নিত্যপণ্য, শিপিং, জাহাজ নির্মাণ, ড্রেজিং, ট্রেডিং কম্পানি, বিটুমিন এবং জুয়েলারি খাতে। বিশেষ করে দেশের ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলকে চাঙ্গা করতে নিরলস ভূমিকা রাখছেন। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

ব্যবসায়িক পরিচিতির বাইরে একজন প্রকৃত দানশীল হিসেবে সায়েম সোবহান আনভীরকে হয়তো অনেকেই চেনেন না। কেননা, তিনি দান করেন নীরবে। খুব কাছ থেকে যাঁরা তাঁকে দেখেছেন, তাঁরাই বলতে পারেন সায়েম সোবহান আনভীরের উদার মানসিকতা সম্পর্কে। মানুষের সেবায় সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান সবার প্রতি উদার হয়ে হাত বাড়িয়ে দেন।  

শুধু অর্থ দিয়েই ক্ষান্ত নন, নিজের মূল্যবান সময় এবং সৃজনশীলতা বিনিয়োগ করছেন সমাজের টেকসই পরিবর্তনে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে তিনি মানুষের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দান করেন। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপ নিজেই অনেক দাতব্য কর্মাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের যে কোনো সংকট সময়ে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ে তুলেছে বসুন্ধরা। যার অন্যতম বসুন্ধরা-আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং অ্যাডভোকেট আতামেয়া ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক, যেখানে দরিদ্র মানুষদের শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট দরিদ্র ও বয়স্ক মানুষদের চোখের চিকিৎসা দিচ্ছে ও বিনামূল্যে সার্জারি করছে। বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও পূনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও বিধবা নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বসুন্ধরা পরিচালনা করছে সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ।

করপোরেট, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও সমাজ সেবায় অবদান রাখায় তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিআইপি মর্যাদা ভোগ করছেন। ওই বছর থেকেই তাঁর ডাইনামিক নেতৃত্বে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ অর্জন করেছে এনবিআরের সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী মিডিয়া গ্রুপের স্বীকৃতি।  

সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন সায়েম সোবহান আনভীর।   গ্রেটেস্ট ব্র্যান্ড অ্যান্ড লিডার্স ২০২১-২০২২ এশিয়া-আমেরিকা-আফ্রিকা অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎকর্ষ সাধন, মানোন্নয়ন, ভোক্তা ও শিল্প পর্যায়ে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে এ সম্মাননা দেয়া হয়।  

এর আগে দেশে বিদেশে আরো নানা পুরস্কারে ভূষিত হন সায়েম সোবহান আনভীর।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা এমডিকে ‘সেন্ট মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। বাংলাদেশে মিডিয়া জগতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ওই পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে ২০১৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (সিআইপি) মর্যাদা দেয়। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক সুসংহত করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১১ সালে মার্কিন কংগ্রেসের স্বীকৃতি অর্জন করেন।  

দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি ক্রীড়া, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, সমাজ সেবা ও গণমাধ্যমে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারতের মর্যাদাপূর্ণ দাদা সাহেব ফালকে এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৭-এ ভূষিত হন সায়েম।

সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবসায়িক দক্ষতার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবেও ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন বহুমুখী শিল্পের প্রবক্তা সায়েম সোবহান আনভীর। নৈতিকতা এবং প্রগতিশীল ধারণা তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। শিল্পখাতের টাইটান হিসেবে তিনি দেশি-বিদেশি বহু ব্যবসায়িক ফোরামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।