ছায়া-সুবিনিড়, শান্ত ও গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক গ্রাম ‘কানুনগোপাড়া’। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বদেশী আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে দেদীপ্যমান।
এটি চট্টগ্রাম জেলার রত্নাগর্ভা বোয়ালখালী উপজেলা পূর্বাঞ্চলে। এই গ্রামের কথা উঠতেই ভেসে ওঠে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। উঠে আসে শতাব্দীপ্রাচীন বান্ধব পাঠাগারের কথা। যে পাঠাগার বদলে দিয়েছে একটি গ্রাম। স্থান করে দিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
১৬ মার্চ বান্ধব পাঠাগারের নতুন রূপের (দ্বিতল ভবন) ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, শতবার্ষিকী স্মারক ‘বোধন’-এর মোড়ক উন্মোচন, সংবর্ধনা ও পঞ্চকবির গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পাঠাগারের শতবর্ষ উদযাপন পরিষদ এ নান্দনিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
উৎসব কমিটির সদস্যসচিব প্রবীর কুমার দত্ত জানান, পাঠাগারের শতবর্ষ উপলক্ষে গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। বইছে আনন্দ-হিল্লোল। বিভিন্ন দেশে বসবাসরত গ্রামের বাসিন্দারা ইতোমধ্যে নাড়ির টানে উৎসবে শরিক হতে গ্রামে ফিরছে। তিন শতাধিক পৃষ্ঠার সুদৃশ্য ম্যাগাজিনে আলোকময় শতবর্ষের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রবীর দত্ত আরো জানান, পাঠাগারের অনুষ্ঠান ঘিরে গ্রামের মানুষের মিলনমেলা বসবে। ওপার বাংলা থেকেও অনেক কৃতী পুরুষ শামিল হয়েছেন। বসেছে জ্ঞানী-গুণীর হাট।
শতবর্ষ পেরিয়ে
১৯০২ সালে কানুনগোপাড়া বান্ধব সমিতি নামে এই সংগঠন গড়ে উঠে। এই গ্রামের আলোকবর্তিকা পুরুষ ত্রিপুরা চরণ চৌধুরী, রেবতি রমণ দত্ত, মোক্ষদা রঞ্জন কানুনগো, ড. বিভূতি ভূষণ কানুনগোসহ আর কয়েকজন যুবক মিলে এই সংগঠন গড়ে তোলেন। যুব সমাজের মধ্যে পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধি ও শরীর চর্চায় উদ্বুদ্ধ করাই ছিল এই সংগঠনের লক্ষ্য। স্বদেশী আন্দোলনে এই সংগঠন গোপনে আন্দোলনের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে আসে। ফলে ব্রিটিশ সরকার এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। পরবর্তীতে সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘কানুনগোপাড়া বান্ধব পাঠাগার’। পাঠাগারের অন্তরালে গ্রামের নির্জন এলাকা ও পাশের করলডেঙ্গা পাহাড়ে চলত বিপ্লবীদের প্রশিক্ষণ। গড়ে উঠে বিপ্লবী দল। এই দলের অনেক বিপ্লবী কারাবরণ করেছেন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক মাস্টার দা সূর্যসেন কয়েকবার এই কানুনগোপাড়া গ্রাম ও গোপন আস্তানা পরিদর্শন করেছেন।
এই এলাকার মতি কানুনগো ও হরিগোপাল বল জালালাবাদ যুদ্ধে শহীন হন। সুখময় কানুনগো সহিংস প্রশিক্ষণে মারা যান। লোকনাথ বল, সুশীল দেসহ কয়েকজন অস্ত্রাগার আক্রমণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৫ সালে বান্ধব পাঠাগারের মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৮ সালের বন্যায় এর দেয়াল বিধ্বস্ত হয়। ’৯১-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয়বার বিধ্বস্ত হয় পাঠাগারের দেয়াল।
জীবন-জীবিকার তাগিদে পাঠাগারের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ওপার বাংলাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেলে পাঠাগারের কাজকর্ম ঝিমিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকায় পাঠাগারের জরাজীর্ণ মাটির ঘরটি আরও জীর্ণ অবস্থায় পতিত হয়।
প্রতিষ্ঠার ১১০ বছরের মাথায় এসে গৌরবোজ্জ্বল পাঠাগারটিকে নতুনভাবে রূপদানের উদ্যোগ নেন এলাকাবাসী। পুরানো ঘরটি ভেঙে দ্বিতল পাকা ভবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর জন্য ২০ লাখ টাকার বাজেট ধরা হয়েছে।
১৬ মার্চ পাঠাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল।
বাংলাদেশ সময় : ০৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর