১৬ মার্চ ছিল অ্যাড. খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের প্রথম মৃত্যুবাষির্কী। তার কথা মনে হলেই দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ভেসে ওঠে একজন সাহসী মানুষের মুখ।
আমরা শুনেছি তার ছেলেকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে ও এর ভিডিওচিত্র তাকে দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে ১/১১ এর দোসরদের কথা না মানলে ছেলেকে মেরে ফেলা হবে। তার ডাক্তার মেয়েকে বারডেম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি নিজে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন তাকে বারবার চাপ দিয়েছে তাদের লেখা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে, তখন তিনি অসুস্থ্যতার কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালেও কুচক্রী মহল হানা দিলে তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন তবু মাথা নত করেননি। সেই বীর আমাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছেন এক বছর হলো। হয়তো তার চেয়ে কর্মদক্ষ মহাসচিব বিএনপির দায়িত্ব গ্রহন করবেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাবে খোন্দকার দেলোয়ারের মতো দুর্দিন মোকাবেলা করার সাহস সবার হবে কি না।
তথাকথিত ১/১১ চলাকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. তৈমূর আলম খন্দকার গ্রেফতার হন এবং তার বিচারও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের মতো সংসদ ভবনে স্থাপিত ক্যাঙ্গারু কোর্টে অনুষ্ঠিত হয়। মামলা পরিচালনা করতে প্রতি সপ্তাহেই আমাকে সংসদ ভবনে যেতে হয়েছে। মামলার কাজ শেষ করে প্রায় প্রতিদিনই সংসদের উল্টো দিকে অবস্থিত ন্যাম ভবনে যেতাম খোন্দকার দেলোয়ারের বাসায় রাজনীতির নিত্য নতুন খবর পাওয়ার জন্য। ন্যাম ভবনের বাসাটি তখন ছিল সকলের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন সাক্ষাত না পেলেও ১/১১ এর দুই বছরে প্রায় ২৫/৩০ দিন ব্যক্তিগতভাবে খোন্দকার দেলোয়ারের সাথে কথা বলার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তিনি তৈমূর ভাইয়ের মামলার খোঁজ-খবর নিতেন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির খোঁজ-খবর নিতেন, আমাদের অভয় দিতেন। একদিন তৈমূর ভাইয়ের চিঠি পৌঁছে দিয়েছিলাম তার হাতে, তিনি চিঠি পড়ে আমাকে যা যা বলেছিলেন, পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তাই হয়েছিল।
১/১১ এর দুঃসময়ে দায়িত্ব নেওয়ার পরে দলকে সংগঠিত করতেই তার সব সময় চলে যায়। ঢাকার বাইরে কোনো সাংগঠনিক সফর বা জনসভা করার সুযোগই তিনি পাননি। জীবনের একেবারে শেষ সময়ে এসে ঢাকার বাইরে মহাসচিব হিসেবে জীবনের প্রথম ও শেষ জনসভাটি করেছেন নারায়ণগঞ্জে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা বিভাগীয় যুব মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় প্রায় দেড় মাস আগে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১। যুব সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। যুব মহাসমাবেশে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল আমার। আমার সৌভাগ্য খোন্দকার দেলোয়ারের জীবনের শেষ জনসভায় আমি তার নামটি ঘোষণা করতে পেরেছিলাম।
জেলা পর্যায়ের একজন রাজনৈতিক কর্মী হয়েও ঘটনাচক্রে দলের মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, কথা বলা ও তার অনুষ্ঠান পরিচালনা করা আমার রাজনৈতিক জীবনকে মহিমান্বিত করেছে, যা জীবনে কোনোদিন ভুলবো না।
এদেশের সকল মানুষ ও জাতীয়তাবাদী শক্তির হৃদয়ে সর্বদা খোন্দকার দেলোয়ার জাগ্রত থাকবে। গণতন্ত্র রক্ষায় তার ত্যাগ আমাদের আগামী দিনের পথ চলার পাথেয় হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১২
সম্পাদনা : আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর