ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

৪৮ ঘণ্টার আর কত বাকি?

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১২
৪৮ ঘণ্টার আর কত বাকি?

হায় আমার দেশ! প্রিয় সাগর প্রিয় রুনির হত্যা রহস্যের উদঘাটন, খুনিদের গ্রেফতারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের কোনো সুরাহা ৩৫ দিনেও হলো না! আদালত অবশ্য এক্ষেত্রে সরকারের প্রটেকশনে অবস্থান নিয়েছেন! আর আমাদের বলে দিয়েছেন এ নিয়ে যাতে আর আমরা কোনো উফ, আহও না করি! অতএব একান্ত অনুগত ছাত্রের মতো আমরাও নিশ্চুপ! সাংবাদিক নেতাদের ভাগ্য ভালো, আদালতের রুলিং সম্পর্কে বলেও আদালত অবমাননার মামলায় পড়তে হয়নি! প্রধানমন্ত্রী এ হত্যা তদন্তের মনিটরিং কী করছেন বা করেছেন, তাও কেউ জানে না! বা প্রধানমন্ত্রীরও কী এমন অফুরন্ত সময়? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এর পুরো দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে সঁপে দিয়ে খালাস! সাগর-রুনির স্মৃতি, আমাদের সবার আদরের মেঘের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্র কীভাবে সে দায়িত্ব পালন করছে, তা-ও আজ পর্যন্ত কেউ জানেনি!

পুলিশ আর সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা মিলে একটি হত্যা রহস্যের গতি প‍ঁয়ত্রিশ দিনেও কেন করতে পারলো না, সে জবাবও দিলো না রাষ্ট্র! এখন পুলিশ আদালতে জমা দেবার জন্য কী রিপোর্ট তৈরি করছে তা তারাই জানে! আদালতের নির্দেশনার কারণে আমাদেরও কী বিনা বাক্যে মেনে নিতে হবে সে রিপোর্ট? এসব কী এমনই সরল রেখায় চলবে? না চলেছে কখনো?

২০০০ সালে যশোরে আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হন।

তিনি বেডরুমে না, রাত আটটার দিকে জনকণ্ঠের যশোর অফিসে লেখার টেবিলে খুন হয়েছিলেন। ১২ বছর হতে চললো, আজ পর্যন্ত শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচার শেষ হলো না! প্রতিবছর ১৬ জুলাই তার হত্যাবার্ষিকীকে সে প্রশ্নটি রেখে কয়েকশ শব্দ লিখে ফেলি। কিন্তু আমাদের দায়িত্বশীলরা এতই নির্লিপ্ত যে, এসব লেখালেখিতে তাদের কিছু যায়-আসে না! আমাদের রাজনীতিকরা এতই নিষ্ঠুর আর নির্লিপ্ত প্রকৃতির যে, সারাদিন তাদের বক্তৃতা প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের সার্ভিস নেন, একটু পক্ষে না গেলে উল্টাপাল্টা যা খুশি বলেন, কিন্তু সাংবাদিক খুন হলে কেন বিচার হয় না, তা নিয়ে তাদের কোনোই আত্মসমালোচনা নেই!

শামছুর রহমান খুন হবার পর আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ক্ষমতার চেয়ার তিনবার অদল-বদল হয়েছে। কিন্তু বিচারের কোনো কূলকিনারা হয়নি। সর্বশেষ পলাতক খুনিদের একজন, বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের সাবেক দেহরক্ষী পাগলা সেলিম গ্রেফতার হয়েছে ভারতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তাকে দেশে নিয়ে আসার কোনো উদ্যোগ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি! এই একটি ঘটনা সাংবাদিক হত্যা মামলার বিচার নিয়ে সরকারগুলো কতোটা আন্তরিক তারই প্রমাণবাহী! সাংবাদিক হত্যা মামলার কেন সুরাহা হয় না, এ নিয়ে দেশের কোনো আদালতও কোনো দিন কোনো রুল ইস্যু করেনি! আদালতের অন্তরও কেন যেন কাঁদে না, এই ইস্যুতে! সাগর-রুনির হত্যার ঘটনা নিয়ে শুরুতেই যা কিছু ঘটলো, এই হত্যা মামলার বিচার নিয়ে আশাবাদী হবার কোনো কারণ আছে কী? এখন আপনি বেডরুমে মরলে সরকার নিরাপত্তা দেবে না, সড়ক দুর্ঘটনায় মরলে প্রতিবাদ করা যাবে না, সীমান্তে মরলে বা বিএসএফ ল্যাংটা করে পেটালেও উদ্বিগ্ন হবে না রাষ্ট্র, অতএব কে কিভাবে মরবেন, বা নিরাপদ থাকবেন, তা যার যার ঠিক করে নিতে হবে।

সবশেষ জানা গেল, সাগর-রুনিকে চোর-ডাকাতরা মেরে ফেলেছে, অথবা একজন আরেকজনকে খুন করে সরকারকে বিপদে ফেলতে পরে নিজে মরে গেছেন, এমন জাতীয় তদন্ত রিপোর্ট রচনায় আত্মনিয়োগ করেছেন আমাদের মহা গোয়েন্দা (!) বৃন্দ! এর জন্য কিছু ছাপোষা চোর-ছ্যাঁচড় জাতীয় লোককেও আটক রাখা হয়েছে (মাননীয় আদালত, আমি কিন্তু এখানে কাউকে জজ মিয়া লিখিনি)! এমন কিছুতে রাজি করতে নির্যাতনের কিছু বৃত্তান্তও ছাপা হয়েছে মিডিয়ায়! কিছু স্বর্ণালংকার নিয়ে সেগুলো রুনির মাকে দিয়ে সনাক্ত করানোর চেষ্টাও হয়েছে! এরপর আবার বলার চেষ্টা হয়েছে, একজন-আরেকজনকে খুন করেছেন। এরপর অপরজন নিজে মরেছেন! আগে বলা হয়েছিল আলামত সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার একপক্ষ বলার চেষ্টা করছেন, হাতের ছাপ পাওয়া গেছে রুনির! আদালত বলেছে, কেউ যাতে কোনো অনুমাননির্ভর রিপোর্ট না লেখেন। এই নির্দেশনার ভেতরও এই রিপোর্টগুলো কিভাবে চলে এলো? এর মাজেজা মিডিয়ার লোকজন জানেন। অনেকে এমন নানা রিপোর্ট করিয়ে বা খাইয়ে বাজারের প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করেন! অতঃপর কীভাবে জোড়াতালি অথবা দুইয়ে দুইয়ে এই হত্যা রহস্যের চার মেলানোর চেষ্টা হচ্ছে জানি না, শুধু জানি এ নিয়ে কোনো ছলচাতুরি হলে কিন্তু আগুন জ্বলে উঠবে দেশে। সে আগুনে ছারখার হবেন অনেকে।

ফজলুল বারী : সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময় : ১১০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১২

সম্পাদনা : রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।