ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কবিতা

আল ইমরান সিদ্দিকী’র একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
আল ইমরান সিদ্দিকী’র একগুচ্ছ কবিতা

১৯৮৩ সালে উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলায় জন্ম কবি আল ইমরান সিদ্দিকীর। বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস করছেন।

আল ইমরান সিদ্দিকীর প্রকাশিত কবিতার বইগুলো হলো- কাঠঠোকরার ঘরদোর (২০১৫) ও ধুপছায়াকাল (২০১৮)। এছাড়া ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন বাংলা একাডেমি বইমেলায় ‘বৈভব’ প্রকাশনা থেকে বের হচ্ছে তার তৃতীয় কবিতার বই- গোধূলির প্যানোরামা।

 

শিল্পসাহিত্য বিষয়ক ওয়েবম্যাগ ‘নকটার্ন’র সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত আল ইমরান সিদ্দিকী। ২০১৬ সালে কাঠঠোকরার ঘরদোর বইয়ের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘আদম সম্মাননা’ পান এ কবি।  

নিচে পাঠকদের জন্য আল ইমরান সিদ্দিকীর প্রকাশিতব্য বই ‘গোধূলির প্যানোরামা’র পাণ্ডুলিপি থেকে একগুচ্ছ কবিতা পত্রস্থ করা হলো।  

 

নীলফামারী

সবুজ তামাক-ক্ষেতের পিছে বাঁশঝাড়, তার পিছে সূর্য ওঠে। যদি আগাও আরও উত্তরে, তাহলেই তো নীলফামারী। তুমি দেখবে ঐ জেলা শহরে ঢুকে, তুমি অবাক হবে, যদি বাসে করে যেতে যেতে প্রতিটি জেলার মানুষের আচরণ পরখ করতে থাকো, মনোযোগ দিয়ে। দেখবে ধীর থেকে ধীরতর হচ্ছে মানুষগুলি এবং নীলফামারী, সব থেকে ধীর মানুষদের জেলা, এক কালে ছিল মহকুমা; দেখবে সবাই এলোমেলো, জবুথবু, সময়জ্ঞানহীন। যদি আরও আগাও, ডোমার হয়ে চিলাহাটী— এতো আঁকাবাঁকা রাস্তা পৃথিবীর কোনো সমতলে খুঁজে পাবে না। এরাই বানিয়েছে, কারণ এরা সময়জ্ঞানহীন, জবুথবু, কাচা তামাক-পাতার মতো বাতাসে স্থির, বিড়ির মুথা আর সিগারেটের তুলা ছ্যাবড়া করে ফ্যালে, সুপারিগাছে লতিয়ে ওঠা পানের মতো উচ্ছ্বাসে; এরা ক্রমাগত চাবায় পান, মজায় কাচা সুপারি মাটিতে পুঁতে। এদের ভাষাও তেমন; এরা প্রতি মুহূর্তে ভাষাকে নাচাতে, ঘোরাতে, পেঁচাতে আর চাবাতে ভালোবাসে অভিব্যক্তির পর অভিব্যক্তি এঁকে।


অভিজ্ঞতা

ভোরে অবিরল বন্ধ শাটারের সামনে দিয়ে হাঁটা, বিশাল বাড়ির রেলিঙ ছুঁয়ে ছুঁয়ে হাঁটা—সবই ফিরে পেয়েছি বহু বছর পরে। কর্মমুক্তি আমাকে যুক্ত করলো হারানো দিনের সাথে। আমার চাহিদা কম, সামান্য সঞ্চয় আছে। আমাকে রেখে কোলাহল দূরে গেছে, চলে গেছে ট্রেন। নেমেছি, যে রাস্তা ঝরা পাতাদের, খালি পায়ে হাঁটার। দিনান্তে মেঘডুবি’র মাঠে, ঘাস আর ঘাসফুলের মাঠে, ধূসর মেঠো পথ সাদা আলোয় ভরে গেছে। কেউ আসবে? জানি না; আমার তো অতো অভিজ্ঞতা নাই। তাও, অনেক রকম অভিজ্ঞতা আছে, অভিজ্ঞতার মূল্য আছে; কাজে যোগ দিবো, নতুন কাজ খুঁজে নিয়ে।


ঈশায়ী ২০১৫

নিমো, গুম হয় উদ্বেগ; গুম হওয়া
মানুষকে ঘিরে আমাদের যতো উদ্বেগ।

এতো কিছুর ভিতরেও কতো কিছু থেকে গেল!
তোমার থাকলো পরবাস— ছলছল চোখ
আমার থাকলো আত্মদীপ— থরথর শিখা
যাদের তা-ও নাই, কে তাদের বাঁচাবে?

ভোরবেলা লাইন ধরে পোড়া মানুষ উঠছে বাসে।


বিভাজিত

Those who eat my flesh and drink my blood have eternal life (John 6:52-59)

একা হয়ে যে-প্রশ্নগুলি পেয়েছি, হয়তো আরও একা হলে তার উত্তর পাবো। দিনমান ঘরদোরে আটকে আছি, আটকে রাখায় আজ আকাশেরও হাত আছে। যেখানে আমার দৃষ্টি গিয়ে থামে— কালো মেঘে ছাওয়া আকাশের তলে, ধূমল দিগন্তের কাছে, বিদ্যুৎ-পোলগুলি ক্রুশের মতো; অতো দূর থেকে এক আমাকে টেনে নিয়ে বিদ্ধ ক’রে আরেক আমাকে ডাকে— এমন ধারাপাতের দিনে, কে জানে কী মুক্তি আছে নিজেকে পান করে! 


প্যানোরামা

প্রত্যেকেই যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখলো গোধূলির প্যানোরামা— প্রাণময় অথবা প্রাণহীন। দিন অবসানে কালো হয়ে আসলো ব্রিজ, মুছে গেল শেষ রশ্মি সূর্যের। অন্ধকারে, ক্ষেতে, যবের শিষগুলি, ডাঁটিগুলি কালো কালো, সারসের গ্রীবার মতোই বাঁকানো— যেন দুলছে সহমত আর দ্বিমত প্রকাশে— সহমত আর দ্বিমত প্রত্যেকের জীবনবোধে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯ 
এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ