ঢাকা, বুধবার, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

টাঙ্গাইলে বিএনপির আট শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
টাঙ্গাইলে বিএনপির আট শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করছে। গত দুই সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশের দায়েরকৃত ১১টি মামলায় ২৫৩ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ছয় শতাধিক ব্যক্তির নামে নাশকতা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গ্রেফতার ৬৩ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য পুলিশ এসব ‘গায়েবী’ মামলা দায়ের করছে। মূলত ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর তারা গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরে থাকতে পারছেন না।

তবে পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতিসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এসব মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।

জানা যায়, বাসাইলে থানার উপ-পরিদর্শক টিটু চৌধুরী বাদী হয়ে ১৬ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে আসামি করে ২৪ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় তিনজনকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

২১ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা থেকে ফেরার পথে তিন আইনজীবীসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই রাতেই তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত একদিন করে ১২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

২১ নভেম্বর নাগরপুর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দুইজনকে এবং ১৭ নভেম্বর কালিহাতী উপজেলার পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে। আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। কালিহাতীর মামলায় ২৯ জনের নামসহ ৩০/৪০জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। নাগরপুরের মামলায় ২১ জনের নামসহ ৪০/৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

২২ নভেম্বর ঘাটাইলে পুলিশের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে বিএনপির ৩৫ জনের নামসহ ৪০/৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ১০জন নেতাকর্মী পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ছয় নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে অভিযোগ আনা হয়। ছয় নেতার দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

২৯ নভেস্বর দেলদুয়ারে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পরে গ্রেফতারকৃত দুইজনকে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

৩০ নভেম্বর রাতে সখীপুর উপজেলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৮৮ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী। সেদিন রাতেই উপজেলা বিএনপি, কৃষক দল এবং যুবদলের চার নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

১ ডিসেম্বর গোপালপুরে ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত পাঁচজনকে একদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। একই দিন ভূঞাপুরে ১৬ জনের নামে মামলা দিয়েছে পুলিশ। এখানে গ্রেফতার একজনকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন থানায় মামলাগুলো দায়েরের পর এলাকার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

নেতাকর্মীরা জানান, যাদের নাম মামলায় রয়েছে তারা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন। অন্যরাও গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যে কাউকে এই মামলায় গ্রেফতার করার সুযোগ রয়েছে।

সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সাজু জানান, কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেনি। গ্রেফতার হওয়ার সময় নেতাকর্মীরা স্থানীয় একটি ক্লাবে বসে টিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিলেন।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় হোড় শুভ জানান, ওয়ারেন্ট ছাড়াই ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে আটক করে গায়েবী মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। নেতাদের খুঁজতে রাতে বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই পুলিশ ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা গায়েবী মামলা দায়ের করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য বাড়ি ঘরে হানা দিচ্ছে। পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ কোথাও কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। কাউকে বাড়ি থেকে, কাউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। মামলার কোনো সত্যতা নেই। অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। শত বাধা সত্বেও জেলা থেকে বিএনপির ২৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে যাবে।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয়। ককটেলও উদ্ধার করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।