ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

মূল্যস্ফীতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত: মির্জা ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
মূল্যস্ফীতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত: মির্জা ফখরুল

ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহন-খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে জনগণের ত্রাহি অবস্থা, জনজীবন বিপর্যস্ত। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবকয়টি সূচকই আরও দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র তুলে ধরে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহন-খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে জনগণের ত্রাহি অবস্থা, জনজীবন বিপর্যস্ত। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবকয়টি সূচকই আরও দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে। বর্তমান বাংলাদেশে চারিদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। সমগ্র দেশটিই যেন এক ‘নাই’ এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের যাতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। একথায় দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত আগস্টে সরকারি হিসেবেই মূল্যস্ফীতি দেখানো হয় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। বর্তমান মূল্যস্ফীতি কমছে দেখানো হলেও খাদ্যবর্হিভূত মূল্যস্ফীতি এখনো প্রায় দুই অংকের কাছাকাছি রয়েছে। জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। চাল-ডাল-ডিম আকাশছোঁয়া, এমনকি ব্রয়লার মুরগির দাম দুইশ টাকার উপরে। অথচ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাধারণ মূল্যস্ফীতি দেখাচ্ছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যার সঠিকতা নিয়ে খোদ অর্থনীতিবিদরাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বারবার বৃদ্ধি, দেশের রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসা, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, অপরিণামদর্শী ভ্রান্তনীতি, লাগামহীন দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য, সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্র না থাকার কারণে দেশে ‘অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার তাদের চিরাচরিত ডেনিয়েল সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে এসে আইএমএফের কাছে পাঠানো পত্রে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুর্যোগের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন শর্তে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। বলতে গেলে তারা এখন ব্যাংক থেকে ধার করে এবং আইএমএফের ঋণের ওপর ভর করেই চলছে।

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কথা সরকার কেন স্বীকার করছে না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের না দেখার প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তারা ভোট করে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। যদি নির্বাচিত হয়ে আসতো তাহলে তাকে পার্লামেন্টে জবাবদিহি করতে হতো। জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হতো। এখানে তারা (সরকার) সব সময় একটা মিথ্যা প্রচারণা করে, ভয়-ভীতি-ত্রাস সৃষ্টি করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে সার্বক্ষণিকভাবে একটি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে গোয়েবলসের মতো। যারা ফ্যাসিস্ট হয়, যারা ডিক্টেটর হয় তাদের জন্য এই প্রচারণা জরুরি হয়—একটা মিথ্যা ধারণার মধ্যে জনগণকে রাখতে চায়।

তিনি বলেন, বর্তমান গোটা ব্যবস্থায় লাভবান হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যারা এই সরকারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে বিভিন্ন জায়গায় লাভবান হচ্ছে এবং সো-কল্ড পলিটিশিয়ানস যারা এই সরকারের সঙ্গে জড়িত তারা লাভবান হচ্ছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ভুক্তভোগী থেকেই যাচ্ছে।  

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারকে সরে যেতে হবে। এই সরকার সরে গেলেই দেশে যে ট্রাস্ট—এটা সৃষ্টি হবে। তখন এইগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য যোগ্য যারা ব্যক্তি কাজ করতে পারেন, তাদের নিয়ে এসে সমস্যা সমাধান অত্যন্ত দ্রুত করা সম্ভব হবে। সরকার সরে যাওয়া ছাড়া এটা সম্ভব হবে না। এই সরকারকে রেখে এটা করা যাবে না। কারণ এরা এত বেশি দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে যাবে, এরা সেন্ট্রাল ব্যাংককে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে, এরা পুরো ইকোনমি সিস্টেম, মনিটরিং সিস্টেম সব কিছু নষ্ট করে ফেলেছে। ব্যাংকগুলো ভয়াবহভাবে ব্র্যাংকক্রাফট হয়ে যাচ্ছে প্রায়। ভুল ধারণা, ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে সরকার দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছে। হু্ইজ ইজ নট ট্রু। অনলি ওয়ে এই সরকারে চলে যাওয়া।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দেশের অবস্থা আজ এমন শোচনীয় অবস্থায় যেত না। অনেকে মনে করেন, আইএমএফের ঋণে সংকট কাটবে। এই ঋণ বরং আওয়ামী লীগারদের পেটে যাবে, কষ্ট বাড়বে সাধারণ জনগণের।

তিনি বলেন, আমরা সরকার পরিবর্তনে ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছি… নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সমগ্র জনগণ নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশনায়ক তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সরকার গঠন করবে। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দূরীভূত করা সম্ভব হবে, ইনশাল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।