ঢাকা: সারের দাম কমানো ও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ধান কেনার দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকার পল্টন মোড়ে কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
দফায় দফায় ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের দাম বৃদ্ধির পরও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও পুনরায় কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বাড়ানোর প্রতিবাদে এবং বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবিতে সিপিবি সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন ও লাকী আক্তার। সমাবেশ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবিদ হোসেন।
সমাবেশে নেতারা বলেন, গত বছর আগস্ট মাসে ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ছয় টাকা বাড়ানোর ধকল কৃষকেরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কৃষক ফসল উৎপাদনে চরম লোকসান দিচ্ছে, এরই মধ্যে আবারও গত ১০ এপ্রিল সব ধরণের সারের দাম কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বাড়ানো হলো। গত আগস্ট মাসে ইউরিয়া সারে বর্ধিত দামে বিঘাপ্রতি প্রায় ২৫০ টাকা এবং এবারে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি, এমওপি সারে বর্ধিত দামে বিঘাপ্রতি কৃষকের প্রায় ৬০০ টাকা মোট ৮৫০ টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।
সমাবেশে থেকে বলা হয়, বিশ্বমন্দায় আমাদের দেশকে যারা বাঁচিয়ে রেখেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন কৃষক। বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ানোর ফলে কৃষিতে খরচ বাড়ছে। অথচ কৃষক তার ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। সারের দাম বাড়ানোতে কৃষি ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়াবে-যা গ্রহণযোগ্য নয়। এবার খরায় ধানসহ অনেক কৃষি পণ্য উৎপাদন সংকটে পড়েছে। এজন্য কৃষককে ক্ষতিপূরণ ও প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। চাল কেনার নামে মধ্যসত্ত্বভোগীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
নেতারা বলেন, গত আট মাস আগেই ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ছয় টাকা বাড়িয়ে কৃষকের নাভিশ্বাস বের করে দিয়েছিল সরকার। সার, বীজ, কীটনাশকসহ সব ধরণের কৃষি উপকরণের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ফসলের লাভজনক দাম না পেয়ে কৃষকেরা দিশেহারা। কৃষিবাজার সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি। এবার কেবল ইউরিয়াই নয় সঙ্গে ডিএপি, টিএসপি, এমওপি সারের দাম কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউরিয়া ২৭, ডিএপি ২১, টিএসপি ২২, এমওপি ২০ টাকা কেজি দরে কৃষকে কিনতে হবে। সরকারি সার করখানাগুলোয় উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও বছরের অধিকাংশ সময় কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ থাকে। সার কারখানার আধুনিকায়ন করে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়মিত সার উৎপাদন করতে হবে।
নেতারা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্তটি কৃষক ও জনস্বার্থবিরোধী। পৃথিবীতে করোনাকালে যে অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হয়, সে সময় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য আমাদের কৃষকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সরকারের উচিত কৃষিখাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটা না করে ব্যবসায়ী-মুনাফালোভী ও মধ্যসত্বভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার বারবার এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যা আমাদের কৃষি খাতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
নেতারা অবিলম্বে বাড়ানো দাম প্রত্যাহার করে ন্যায্য দামে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৩
আরকেআর/এসআইএ