ঢাকা: সরকার পতনে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে দলটি।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই মাস সময় বেছে নেওয়া হবে। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে রাজপথে কর্মসূচি করলে আন্দোলনের গতি হারিয়ে ফেলবে এবং আন্দোলনকে সরকার ভিন্নখাতে প্রভাবিত করবে। তাই বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজপথে আন্দোলন হবে দুই মাস। এরই মধ্যে দাবি আদায় করবে তারা।
তবে সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার জন্য চলতি বছরের কোন দুই মাস বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে থাকবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। ঈদের পরে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিগত বছরগুলোতে রমজান মাসে ইফতারের রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিল বিএনপি। কিন্তু এ বছর তারা ইফতারের রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে রমজানেও রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। দলটি বলছে, আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এবং আন্দোলনের গতি ধরে রাখতে রমজানেও রাজপথে থাকতে হচ্ছে। এজন্য রমজানেও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং পূর্বঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত ১ এপ্রিল সারা দেশের সব মহানগর ও জেলায় বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি এবং ৮ এপ্রিল সারা দেশের সব মহানগরের থানা পর্যায়ে ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। আর ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশের সব ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রচারপত্র (১০ দফা, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি) বিলি, মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচিও করেছে। যেসব বিভাগে এসব কর্মসূচি হয়েছে, সেগুলো হলো: ৯ এপ্রিল রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগে, ১০ এপ্রিল রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে, ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগে, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে এবং ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগে।
এছাড়া ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, দুস্থ, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তাসহ বিভিন্ন গণসংযোগমূলক কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম-দুঃশাসন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা রমজান মাসেও রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে চলমান রাখতে রমজানেও আমরা কর্মসূচি দিয়েছি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ঈদের পরে আন্দোলনের গতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে ঈদের পরেই লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকেই আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হবে।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শীর্ষ নেতা ও ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বলেন, ঈদের পরে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ঈদের পর একটু একটু করে আন্দোলনের গতি বাড়বে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর কমলাপুরে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর ২৩ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গত পাঁচ মাসে তারা যুগপৎভাবেই সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ এবং বিভাগীয় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
টিএ/এমজেএফ