ঢাকা: ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় নির্বাচনী জনসংযোগকে প্রাধান্য দেবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রীরা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে তারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন।
এবারে ঈদে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রী ঢাকার বাইরে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করছেন। অনেকেই ইতোমধ্যে এলাকায় চলে গেছেন। বাকিরা ঈদের আগেই নিজ এলাকায় যাবেন। তবে গত দুই-তিন বছরের তুলনায় এবারের প্রেক্ষাপটটা একটু আলাদা। এর আগে তিন বছর ছিল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। তখন অনেকেই ঢাকার বাইরে যাননি। তবে এ বছর সেই পরিস্থিতি নেই। তাছাড়া এ বছরটি নির্বাচনী বছর। আর কয়েক মাস পরেই অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে এবারের ঈদে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে মাধ্যমে নির্বাচনী জনসংযোগও চালাবেন আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি ও মন্ত্রীরা। গত বুধবার আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল কলে যুক্ত হয়ে এ নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী দলের নেতারা এলাকায় গিয়ে ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি নির্বাচনী জনসংযোগের ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যাযের নেতারা জানান, যেহেতু নির্বাচন আর বেশি দূরে নয়, তাই ঈদের এ সময়টাকেও নির্বাচনী জনসযোগে কাজে লাগানো হবে। প্রত্যেকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলের স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বা নিজের সঙ্গে নেতাকর্মীদের কোনো মত পার্থক্য থাকলে সেটা দূর করা ও কমিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। এর পাশাপাশি ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন এবং আগামী নির্বাচনে তারা যাতে আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকে ও ভোট দেয় সেজন্য তাদের আহ্বান জানানো হবে।
আওযামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা আরও জানান, এ বিষয়ে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি নেতাদের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি নির্বাচনী জনসংযোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব উন্নয়নকাজ হয়েছে সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে বলেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব থাকলে তা দূর করতে বলেছেন। ঈদে নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করাই হবে আওয়ামী লীগ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে ঈদ করবেন। নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কী করতে হবে এ ব্যাপারে আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্তারিতভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই আমাদের পবিত্র দায়িত্ব হবে। নেতারা সেটাই করবেন।
এদিকে এবারের ঈদে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা, এমপি ও মন্ত্রী নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে, তারা হলেন- দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সকালে ঢাকায় ঈদের নামাজ ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারেন বলে জানা গেছে। দলের প্রবীণ নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী জাফর উল্লাহ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মির্জা আজম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ঢাকার বাইরে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন।
এদিকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুর করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে। আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুর করিম সেলিম ইতোমধ্যেই নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে ঘুরে এসেছেন বলে জানা গেছে। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কামরুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা ঢাকা, তারা নিজ নির্বাচনী এলাকার ঈদ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৩
এসকে/আরবি