ঢাকা: সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলনকে রাজনেতিকভাবেই মোকাবিলা করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতার দিকে গেলে প্রশাসনিকভাবেও সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে।
রাজনীতির মাঠ যাতে বিএনপির দখলে না যায়, সে জন্য আওয়ামী লীগ আগামীতেও ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় গত বছর নভেম্বর থেকেই বিএনপির কর্মসূচির দিন ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
তখন দলটির নীতিনির্ধারকরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা বা তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। ঘোষণা অনুযায়ী দলটির এই অবস্থান অব্যাহত রাখার কথাই নেতারা বলছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, সরকার বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে। কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে তারা চিন্তিত নন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করলে তাতে বাধা দেওয়া দেওয়া হবে না।
তবে আন্দোলনের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি, সন্ত্রাসী তৎপরতা বা তাতে সহিংসতার উপাদান যুক্ত করার চেষ্টা হলে সরকার ও আওয়ামী লীগ কঠোর হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে বলেও আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের ধারণা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলছে বিএনপি ও এর জোটসঙ্গী দলগুলো। আওয়ামী লীগের সরকার থাকা অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের কথা বলছে দলটি। তবে বিএনপির এই আন্দোলনকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখবে সরকার ও আওয়ামী লীগ।
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বিএনপি দাবি আদায় করতে পারবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। উচ্চ আদালত থেকে বাতিল করে দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আওয়ামী লীগ আর ফিরে যাবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির নীতিনির্ধারকরা বার বার জানিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগ সরকার বহাল রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে সরকার ও আওয়ামী কঠোর অবস্থানেই থাকবে বলে তারা জানান।
আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, বিএনপি আন্দোলনের নামে আগেও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়েছে নাশকতা করেছে। এই ধরনের পরিস্থিতি প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে অতীতের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হতো না, এটা বলা যায় না। আগামীতেও বিএনপি এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা।
তাদের মতে, বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বলে আসছে। কিন্তু জনসমর্থন না পাওয়ায় আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি, আগামীতেও পারবে না। তবে আন্দোলনের নামে বিএনপি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে। অতীতেও এটি করেছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
তবে ওই ধরনের পরিস্থিতি যাতে আবারও তৈরি করতে পারে, সেজন্য আগে থেকেই সরকার ও আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিএনপির গতিবিধি ও আন্দোলনের ধরণ পর্যবেক্ষণে রেখেছে সরকার। দেশকে অস্থিতিশীল করা হতে পারে- এমন কোনো পরিস্থিতি দেখলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তারা যে দাবিতে আন্দোলন করবে তাতে জনগণের সমর্থন নেই, তারা সফল হবে না। রাজনৈতিক কর্মসূচি যেকোনো দল দিতে পারে। তা আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। কিন্তু অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা, নাশকতা করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না, প্রতিহত করা হবে। আর সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারাও শান্তি বজায় রাখতে কাজ করবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা রাজপথে আছি রাজপথে থাকবো, জনগণের পাশে থাকব। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করবো। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারেরও দায়িত্ব। কেউ সন্ত্রাস করে জান-মালের ক্ষতির চেষ্টা করলে তা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দেখবে, ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২৩
এসকে/আরএইচ