সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো প্রার্থী হওয়া নিয়ে দোলাচলে ছিলেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এখন নির্বাচনে তার প্রার্থী না হওয়ার বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হতে চলেছে।
তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না আসা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ ও ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটে অনীহার কারণে নির্বাচনে আসছেন না আরিফ। এরইমধ্যে বিএনপির বাইরেও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গেও সিলেটের বাইরে বসে পরামর্শ করেছেন তিনি। নির্বাচনে না আসার বিষয়টি ক্ষণে ক্ষণে পরিষ্কার করছেন আরিফ।
শনিবার (১৩ মে) দুপুরে সিলেট নগরের একটি হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে ‘রোটারেক্ট ক্লাব অব সিলেট সিটি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফ। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন।
নির্বাচনের আগে প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সিসিক নির্বাচন ঘিরে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা অতিউৎসাহ দেখাচ্ছেন। প্রশাসনের অতিউৎসাহী কর্মকাণ্ডে সন্দেহ গভীর রূপ নিলে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হব না।
প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা অতিউৎসাহী হয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলেও তিনি দাবি করেন। বলেন, দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় করা হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তাকে বদলিও করা হচ্ছে। এগুলো নির্বাচনকে প্রভাবিত করারই ইঙ্গিত মনে করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
মেয়র আরও বলেন, আমি যদি নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াই, বুঝতে হবে প্রশাসনের কিছু অতিউৎসাহী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডের প্রতি সন্দেহ গভীর রূপ নিয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে ভোটের প্রতি আস্থা ফেরানোর আহ্বান জানান তিনি।
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, প্রশাসন গণহারে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। যে কারণে নির্বাচন করলেও এজেন্ট দিতে পারবেন না। তার মতে, এজেন্ট তালিকা জমা দেওয়ার পর সেই মানুষগুলোও প্রশাসনের তোপের মুখে পড়বে। দেখা যাবে, তাদের বাসা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ইভিএম পদ্ধতির সমালোচনা করে আরিফ আরও বলেন, ইভিএমের সঙ্গে নগরের মানুষজন একেবারেই অপরিচিত। নির্বাচনের ছয় মাস আগে ইভিএম সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। অথচ, ভোটাররা এখনো পর্যন্ত ইভিএম সম্পর্কে কিছুই জানে না। ইভিএমে ভোট স্বচ্ছ হবে না। কারসাজি করা হবে।
গত ১ মে নগরের একটি অনুষ্ঠানে এবারের সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাব।
তার এই বক্তব্যের পর দলের ভেতর-বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আরিফকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে বিএনপির বিভিন্ন মহল থেকে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়।
অপরদিকে, আরিফও নিজের হিসেব মেলাতে শুরু করেন। আগামী ২০ মে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করে প্রার্থিতার ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার ঘোষণার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই প্রশাসনের ভূমিকার অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রার্থী না হওয়ার ইঙ্গিত দিলেন তিনি।
নিজের জন্য বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কোনো চাপ নেই মন্তব্য আরিফুল হক বলেন, সব দল তাদের অবস্থানে অনড়। এখানে ব্যক্তি আরিফ কোনো বিষয় না। অহেতুক ব্যক্তি আরিফকে নিয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য না করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
এনইউ/এমজে